রুদ্রবার্তা২৪.নেট: ত্বকীকে কারা হত্যা করেছে তা সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রকাশ্য। তারপরও এই হত্যার বিচারকার্য ৯ বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে। সরকার খুনিদের প্রশ্রয় দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করে এই হত্যার দায় নিজেদের ঘাড়ে নিয়েছে। খুনের বিচার যথাযথভাবে হয় তাহলে সরকারের দায় থাকে না। কিন্তু সংসদে বক্তব্য রেখে খুনিদের রার চেষ্টা করা হলে খুনের দায় সরকারের উপর পড়ে। সরকার যতদিন এই খুনিদের রা করবে ততদিন এই সরকার খুনি হিসেবে অভিহিত হবে।
শুক্রবার (১১ মার্চ) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৯ বছর উপলে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এইসব কথা বলেন। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আয়োজনে সংগঠনের আহŸায়ক ও ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে এই সময় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির।
আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার গায়ে পড়ে ত্বকী হত্যার দায় নিজেদের ঘাড়ে নিয়েছে। খুনের বিচার যথাযথভাবে হয় তাহলে সরকারের দায় থাকে না। কিন্তু সংসদে বক্তব্য রেখে খুনিদের রার চেষ্টা করা হলে খুনের দায় সরকারের উপর পড়ে। সরকার যতদিন এই খুনিদের রা করবে ততদিন এই সরকার খুনি হিসেবে অভিহিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নাম প্রকাশ হলেও ত্বকীর হত্যাকারীদের বিচার হয়নি কারণ খুনিদের সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। যারা দেশ চালায় তারা জনগণের উপর নির্ভর করে না। তারা মতায় টিকে থাকে দেশি-বিদেশি খুনি, দখলদার এবং লুটেরাদের সমর্থনে। সেজন্য খুনি-দখলদারদের রা করা তারা নিজেদের দায়িত্ব মনে করে। ত্বকী হত্যার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদকারীদের থামিয়ে দিতে চেয়েছিল লুটেরারা। খুবই হিং¯্রভাবে দানবীয় কায়দায় ত্বকীকে খুন করেছিল তারা। তাদের কাছে মানুষের গুরুত্ব নাই, প্রাণের গুরুত্ব নাই। ভয়, হুমকি ও ত্রাসকে পরাজিত করে নারায়ণগঞ্জবাসী লড়ছে। এটা সারাদেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করে। এই সমাবেশ বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সমাবেশ।
মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়া শুধু নারায়ণগঞ্জবাসী নয় সারাদেশের জন্য কলঙ্ক। এই প্রতিবাদ সমাবেশ সারাদেশের মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশ। রফিউর রাব্বি সন্তানকে হারানোর পরও আপোস করছেন না। যেহেতু তাকে থামানো যাচ্ছে না। সেই কারণে এটা বিচারের দিকে আসছে না। ত্বকী হতার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমর মাঠে থাকবো। আমরা ত্বকীর মত আর ছেলেমেয়েদের হারাতে চাই না। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যেন বিচারহীনতায় না থাকে।
সন্তান হত্যার বিচার দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রফিউর রাব্বি বলেন, আপনার কথাগুলো মিথ্যা হিসেবে নিতে চাই না। আপনি যখন বলেন, শিশু হত্যাকারীরা ঘৃণ্য জীব, তখন আমরা ভরসা পাই। আবার আবাক হই যখন দেখি শিশু হত্যাকারীদের আপনি প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে দেশের মানুষের পাশে অবস্থান আশা করি। কোন গডফাদার, চাঁদাবাজ, খুনির পে অবস্থান আশা করি না। যখন এইটা তারা করে তখন আমরা তাদের প্রত্যাখ্যান করি, দেশের মানুষও তাদের প্রত্যাখ্যান করে। আমরা বিশ্বাস করি, একাত্তরের বাংলাদেশে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে। কোন সরকার মতায় থাকবে সেইটা পরের বিষয়। সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা লড়াই করে যাবো।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাঘর আসরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেস কাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, বাসদের আহŸাক নিখিল দাস, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, সিপিবির হাফিজুল ইসলাম, সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ। সমাবেশ শেষে শহরের প্রধান সড়কে মিছিল করেন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।