সিলেট নগরীর শামীমাবাদ, কানিশাইল ও আখালিয়া ঘাট এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত ১টার দিকে এসব এলাকার মসজিদের মাইকে ডাকাত প্রবেশের কথা জানিয়ে সবাইকে সচেতন থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মানুষের চিৎকার-চেচামেচির শব্দ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)আলী মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা খবর পেয়ে এসেছি। আপাতত এর বাইরে আর কিছু জানি না। পরে বিস্তারিত জানাব।
তিনি বলেন, কেউ আতঙ্কিত হবেন না, পুলিশ মাঠে আছে। রাত সোয়া ৩টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। আপনারা চোখ-কান খোলা রাখবেন। আমরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছি। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে আপনাদের পাশে আছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদে মসজিদে মাইকিংয়ের পর সিলেট নগরীর বেশিরভাগ এলাকার মানুষ লাঠিসোঁটা, পাইপ, রড নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। অপরিচিত কাউকে পেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
সিলেট নগরীর মধুশহীদ এলাকার বাসিন্দা জাহেদ আহমেদ রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মসজিদে মাইকিংয়ের পর আমাদের এলাকার মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে আমাদের এলাকার যুবসমাজ ও মুরব্বিরা মিলে এলাকায় পাহারা বসাই।
একই অবস্থা দেখা যায়, নগরীর ভাতালিয়া এলাকায়। সেখানকার বাসিন্দা রাজু আহমদকে দেখা যায় বাঁশ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে। জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমরা আত্মরক্ষার্থে মধ্যরাতে রাস্তায় লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছি। এমনিতেই বন্যা আমাদের ক্ষতি করে দিয়েছে। তারমধ্যে যদি ডাকাতরা হানা দেয় তাইলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই রাতে না ঘুমিয়ে পাহারা দিচ্ছি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্নজনকে সিলেটে ডাকাতির ঘটনায় পোস্ট দিতে দেখা গেছে।
নাইমুল ইসলাম মাহিন নামের একজন পোস্ট দিয়েছেন, ‘সিলেটের তেমুখী সাহাবের গাওয়ে প্রচুর ডাকাত আক্রমণ করেছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাবের সহযোগিতা কামনা করছি।’
সমাপ্তি মৃন্ময়ী নামের একজন পোস্ট দিয়েছেন, ‘আমাদের বাসা পশ্চিম ভাটপাড়া, মোজরটিলা। আমাদের বাসার পাশে ডাকাত আসছে। ৯৯৯ এ কল দিচ্ছি, পাচ্ছি না।’
তাহমিদুল ইসলাম নামের একজন পোস্ট দিয়েছেন, ‘বন্যা কবলিত সিলেট আর সুনামগঞ্জে গণহারে ডাকাতি হচ্ছে।’
কাউসার আলম নামের একজন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘আশপাশের দু’তিনটা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিচ্ছে, এলাকায় ডাকাতের আগমন ঘটছে। সবাই বাইরে চলে আসেন! সাবধানে থাকেন। মানুষের চিল্লাচিল্লি শোনা যাচ্ছে। (তেমুখির আশপাশে)’
সিলেটে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি, চলবে আরও দুদিন
সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুদিন বৃষ্টিপাতের এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. শাহীনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুদিন বৃষ্টিপাতের এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
সারা দেশেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাতে বৃষ্টি বাড়তে পারে। বেশ কয়েকটি বিভাগে প্রবল বজ্রপাতসহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ মাসে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও বৃষ্টি হবে।
বন্যাকবলিত সিলেটে বৃষ্টির পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুদিন অর্থাৎ ২০ জুন পর্যন্ত সেখানে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
তিনি বলেন, সিলেটে এ মাসের প্রতিদিনই বৃষ্টির আভাস রয়েছে।
১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা হয়নি
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন বন্যাকবলিত সিলেট এবং সুনামগঞ্জে ৯০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুক্রবার পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়, লাখ-লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে যায়। উদ্ধারের জন্য সিভিল প্রশাসন জলযান নিয়ে মাঠে নামে। সিলেট এবং সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানিয়েছিলেন, পানিবন্দির তুলনায় জলযান অপ্রতুল।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, দেশের ১০ জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত। এসব এলাকার মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। বলা হচ্ছে, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা হয়নি।