শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দাম কমিয়েও বিক্রি হচ্ছে না ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট পরীমনির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাছিরের মামলা চলতে বাধা নেই সবজির বাজারে উত্তাপ, নাগালের বাইরে মাছ মিরসরাইয়ের সড়কে ঝরল বাবা-মেয়ের প্রাণ, আহত ৪ আদমজী বিহারী কলোনির অস্ত্রধারী ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ নাদিম গ্রেপ্তার সোনারগাঁয়ে ৩টি অবৈধ চুনা কারখানা গুড়িয়ে দিলো তিতাস কর্তৃপক্ষ রূপগঞ্জে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ সিদ্ধিরগঞ্জে নতুন আইলপাড়া থেকে গৃহকর্মী হেলেনা নিখোঁজ, থানায় জিডি বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা, রূপগঞ্জে এসিআই লবন কারখানাটি এলাকা বাসির বিষফোঁড়া ফতুল্লার ডেভিল আওয়ামী দোষর বরিশাইল্লা টিপু এখনো অধরা

বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা, রূপগঞ্জে এসিআই লবন কারখানাটি এলাকা বাসির বিষফোঁড়া

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১.০২ পিএম
  • ২ বার পড়া হয়েছে

রূপগঞ্জ থেকেঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মঙ্গলখালী এলাকায় অবস্থিত এসিআই লবণ কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এক বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে। কারখানার দূষণ, বিশেষ করে ক্ষতিকর গ্যাস ও ধোঁয়ার প্রভাবে পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা চলতে থাকলেও, প্রতিকারের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ বাড়ছে। এসিআই লবণ কারখানা থেকে নির্গত ঝাঁঝালো গ্যাস ও ধোঁয়া বাতাসের সঙ্গে মিশে এলাকার পরিবেশকে ব্যাপকভাবে দূষিত করছে। কারখানার ধোঁয়ায় থাকা রাসায়নিক পদার্থ টিনের চালের সঙ্গে বিক্রিয়া করে দ্রুত মরিচা ধরায়, যার ফলে এলাকার বেশিরভাগ বাড়ির টিনের চালা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে টিনের চালা এতটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে তা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কারখানার বিষাক্ত গ্যাস ও লবণাক্ত বর্জ্য আশেপাশের গাছপালা ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি করছে। মিঠা পানির উৎসগুলো দূষিত হয়ে পড়ায় কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত এই কারখানা থেকে নিঃসৃত তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে গিয়ে মিশছে। ফলে নদীর পানি লবণাক্ত ও দূষিত হচ্ছে, যা জলজ প্রাণীর জীবন ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যার ভাটিতে পানির দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিবেশগত ক্ষতির পাশাপাশি এই কারখানার দূষণ স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা এই সমস্যার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয়দের মতে, কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া এবং গ্যাস তাদের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বারবার অভিযোগ করলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ক্ষতিপূরণ বা সমস্যার সমাধান কোনোটিরই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যদিও মাঝে মাঝে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জরিমানা করা হয়েছে, কিন্তু তাতে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। এলাকাবাসীর দাবি, শুধুমাত্র জরিমানা করে দায় সারলে চলবে না, বরং কারখানার দূষণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও কঠোর তদারকি নিশ্চিত করা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কারখানায় লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জ্বালানি হিসেবে বয়লার ব্যবহার করা হয়। এই বয়লার থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাসে থাকে সালফার ডাইঅক্সাইড (SO_2) ও নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO_x)-এর মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। এসব গ্যাস বাতাসকে বিষাক্ত করে এবং অ্যাসিড সৃষ্টির কারণ হয়, যা টিনের চাল, ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি করে। লবণ উৎপাদনের পর যে বর্জ্য পানি (brine) বের হয়, তা সরাসরি শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হয়। এতে নদীর পানির লবণাক্ততা এবং দূষণের মাত্রা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়, যা নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্র (aquatic ecosystem) এবং মাছের প্রজনন ক্ষমতাকে নষ্ট করে। বাতাসে ক্ষতিকর কণা ও গ্যাসের উপস্থিতি শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যেমন ব্রঙ্কাইটিস এবং হাঁপানির ঝুঁকি বাড়ায়। বয়স্ক এবং শিশুরা এর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দূষিত পরিবেশ এবং পানির কারণে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ ও অ্যালার্জি দেখা দিচ্ছে। ধোঁয়া ও গ্যাসের কারণে চোখে জ্বালা এবং দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষিত হওয়ায় আশেপাশের কৃষকরা সেচের জন্য এই পানি ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। একইসঙ্গে, মাছ কমে যাওয়ায় জেলেরা জীবিকা হারাচ্ছেন। পরিবেশ আইন-২০১০ অনুযায়ী, দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করার বিধান আছে। অতীতে এসিআই লবণ কারখানাকে বেশ কয়েকবার মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। অনেক সময় আদালত বা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কারখানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তাই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বায়ুতে সালফার ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন কমাতে স্ক্রাবার (scrubber) এবং অন্যান্য ফিল্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। দূষণ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, কৃষক এবং জেলেদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত। এসিআই-এর মতো একটি বৃহৎ ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এলাকাবাসী এবং পরিবেশের প্রতি আরও বেশি দায়িত্বশীলতা আশা করে। শুধুমাত্র আর্থিক জরিমানা এই সমস্যার সমাধান নয়, বরং এটি দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা।

ভুক্তভোগী দিল মোহাম্মদ বলেন, আমার বাড়ির টিনের চাল এক বছরের মধ্যে ক্ষয়ে গেছে। বারবার নতুন টিন লাগাতে হয়। কারখানার ধোঁয়া এতটাই ঝাঁঝালো যে আমরা ঠিকমতো শ্বাসও নিতে পারি না। ছোট ছেলেমেয়েদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা লেগেই আছে। এসিআই লবণ কারখানার কারণে সাবমারসিবলের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। এই কারখানার কারণে একটি সাবমারসিবল আমার নষ্ট হয়ে গেছে এবং নতুন করে আমি আরেকটি পুনরায় গভীর করে করা হয়েছে।

জান্নাতি আক্তার জিম বলেন,রান্না করার সময় বা বাইরে কাপড় শুকাতে দিলে কাপড়গুলো কেমন জানি তেলতেলে আর কালো হয়ে যায়। রাতে ঘুমানোর সময়ও একটা বাজে গন্ধ আসে। আমরা কারখানাকে কোনো দোষ দেই না, কিন্তু আমাদের ক্ষতিপূরণ তো দেওয়া উচিত।

মঙ্গলখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিসেস হুমায়রা বলেন, এসিআই লবণ কারখানার কারণে স্কুলের সাবমারসিবল পানিও লবণাক্ত। পানি লবণাক্ত হওয়ায় স্কুলের ৪০০-৫০০ শিক্ষার্থীরা তীব্র পানি সংকটে ভুগছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি বলে ভাষ্য এই শিক্ষকের। প্রধান উপদেষ্টার নিকট আকুল আবেদন এই সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়।

এসিআই সল্ট লবন কোম্পানির ব্যবস্থাপক নিয়ামুল বাড়ি বলেন,কোম্পানির সামনে টুকটাক কিছু সমস্যা থাকবেই এমন কোন ইন্ডাস্ট্রি নাই টুকটাক সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা কিভাবে সমাধান করে আমরা চলতে পারি সেটাই বিষয়। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি তারা প্রয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পরিবেশ অধিদপ্তের উপ-পরিচালক এ এইচ এম রাশেদ বলেন, রূপগঞ্জে এসিআই সল্ট (লবন)কোম্পানির বিরুদ্ধে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করনে তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort