সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ অপরাহ্ন

নিত্যপণ্যের দামে দিশেহারা মানুষ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০২২, ৪.১২ এএম
  • ১৯৫ বার পড়া হয়েছে

করোনার কারণে স্কুলের শিক্ষকদের অবস্থা কেমন তা গত দুই বছরে প্রায় সকলের জানা। ধার-দেনা করে বাজার করতে আসছি। পকেটে টাকা থাকুক আর না থাকুক ঘরের কর্তার বাজারের ব্যবস্থা করতে হয়। বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান সকলের দিকে চেয়ে খাবারের যোগাড় করা লাগে। মাসের ১০ তারিখের আগে মধ্যবিত্ত পরিবারে টাকা আসে না। এর মধ্যে হঠাৎ করে জিনিসের দাম বাড়ায় দিছে। অল্প আয়ে বাজার করতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। ধার করা ছাড়া আজকে বাজার সম্ভব ছিল না।

বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল,ডাল-তেল. মাছ-মাংস, কাঁচা সবজি সবকিছুই কিছুর দাম বেড়েছে অতিরিক্ত হারে। লাগাতার নিত্য প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর। তারই অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতিনিধি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম কথায়।

বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে নগরের দিগুবাবুর বাজারে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারন মানুষের এরূপ অসহায়ত্বের চিত্র দেখা যায়। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা আমিনুল ইসলামের মতো এমন হাজারো মানুষ।

 

বর্তমানে জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষকে। বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের মানুষকে তিন বেলা পেটপুরে খেতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।

গার্মেন্টস কর্মী রিনা বেগম ২০০ টাকা নিয়ে বাজারে এসেছেন। জিনিসের বাড়তি দাম শুনে সবজি বিক্রেতার সঙ্গে দরদাম করছেন। তিনি দ্রব্যমূল্যের অতিরিক্ত মূল্যের প্রসঙ্গে বলেন, ২০০ টাকা দিয়ে কয়েকদিন আগেও এক সপ্তাহের সবজি কিনতে পারছি। আজকে দাম এতো বাড়ছে, এই টাকায় ৩ দিনের বাজার হইবো। এক লিটার তেল দিয়ে এক সপ্তাহ চালাতে পারি না। সব কিছুর দাম বাড়ছে। খাইয়া না খাইয়া সামনে সংসার চালাতে হবে।

অন্যদিকে, নিম্নবিত্তদের আয়ের সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে কাটছাঁট করতে হচ্ছে প্রতিদিনের বাজার তালিকা। এভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, ব্যয় এতই বেড়েছে যে, জীবন চালানো দায় হয়ে পড়েছে।

রিকশাচালক কাশেম মিয়া বলেন, ‘এ বছর বাজারে আগুন লেগেছে। প্রতি বছর রোজা আসার সপ্তাহখানেক আগে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়। এই বছর রোজার এক মাস আগেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেক বাড়ায় ফেলছে। চাল, ডাল, তেল, সবজি সব কিছুর দাম বাড়তি।

 

একটা জিনিসের দাম বাড়লে মানুষ ওইটা কম খাইয়া আরেকটা খাইয়া বাঁচতে পারে। অল্প কামাই দিয়ে জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে হিমশিম খাইতে হয়। বাজারের দাম বাড়ার কারণে রিকশা ভাড়া বাড়ালে যাত্রী চিল্লায়, আমরা যামু কই!’

দিগু বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এবার বাজারের সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। রোজা আসার কারণে চালসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রব্যমূল্য অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয় করছি বিধায় অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, সাপ্লাই চেনের সমস্যা ও সিন্ডিকেটের কারণে বাড়ছে পণ্যের মূল্য।
এছাড়াও বাজার ব্যবস্থার উপর সরকারের ‘নিয়ন্ত্রণ নেই’ উল্লেখ করে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন বাজারের ক্রেতারা। বন্দর উপজেলার বাসিন্ধা শফিক আলম। সরকারি চাকরি শেষে পেনশনের টাকায় তার সংসার চলে।

স্বল্পমূল্যে পণ্য ক্রয়ের আশায় নদী পার হয়ে দিগুবাজার এসেছেন বাজার করতে। কিন্তু এখানে এসেও পণ্যের বাড়তি মূল্য দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জিনিসের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। বন্দরে খুচরা বাজারে দাম বেশি দেখে এখানে আসছি। এখানেও একই অবস্থা। প্রায় সব কিছুর দাম বাড়তি। জিনিসের দাম ক্রমশই বাড়ছে।

 

নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীর একাধিক বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, নিত্য প্রযোজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ থেকে ১৫ টাকা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে সয়াবিন তেলের বোতল লিটার প্রতি ১৮০ টাকা, খোলা তেলের মূল্য লিটার প্রতি ৭৮ টাকা। ইন্ডিয়ান ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। দেশি ডালের কেজি ১২০ টাকা।

বুটের ডাল ৯৫ টাকা কেজি। বুট কেজি প্রতি ৭৫ টাকা। চালের মূল্য কেজিতে ৫-৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে মিনিকেট চালের মূল্য টাকা, ৬৪ নাজিরশাইল ৬৬ টাকা, লতা ৫০ টাকা, স্বর্না ৪৫ টাকা। আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। লাল ডিমের ডজনের মূল্য ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। হাঁসের ডিমের ডজনের মূল্য ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা।

চাল,ডাল, তেল, মাছ-মাংসের পাশাপাশি বেড়েছে সবজির মূল্য। দেশি পেয়াজের মূল্য ৬০ থেকে ৬৫, ইন্ডিয়ান পেয়াজের মূল্য ৫০-৫৫ টাকা। দশ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে রসুনের দাম ৫০ টাকা, আদার দাম ৮০ টাকা। শশা কেজি প্রতি ৪০ টাকা, টমেটো কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লেবু কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। গাজর কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

কাঁচা মরিচের মূল্য কেজি বেড়েছে ২০ টাকা। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের মূল্য ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন কেজি প্রতি ৪০ টাকা, কলা প্রতি আলি ২০ টাকা, করলা কেজি প্রতি ১২০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, বেগুন কেজি প্রতি ৬০ টাকা, পেপে কেজি প্রতি ৩০ টাকা, শিম কেজি প্রতি ৪০ টাকা, ঢেড়স কেজি প্রতি ৮০ টাকা, মূলা কেজি প্রতি ২০ টাকা, ফুল কপি কেজি প্রতি ৫০ টাকা, সালগম কেজি প্রতি ৩০ টাকা। লাউ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বাধাকপি ৪০ টাকা, কুমড়া ৯০ থেকে ১০০ টাকা। শহরের পাইকারী বাজারে এসব পণ্যের মূল্য ৫-১০ টাকা বাড়লেও শহরতলীর খুচরা দোকানে পণ্যের মূল্য বেড়েছে তার দ্বিগুণ।

পণ্য মূল্যের উর্দ্ধগতি ও বাজার মনিটরিং এর প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাজার কর্মকর্তা মো. জহিরুল আলম বলেন, দেশের সর্বস্তরে পণ্যের মূল্য কিছুটা বেড়েছে। তবে বাজারে নির্দিষ্ট মূল্যের অতিরিক্ত যেন বিক্রয় করতে পারে এজন্য বাজার মনিটরিং করা হবে। আমরা রোজার পূর্বে বাজার মনিটরিং করার জন্য একটা সভা করে বাজার মনিটরিং শুরু করব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort