মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর হাই স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মÐলের ঘটনার ক্ষত না শুকাতেই এবার নারায়ণগঞ্জে এক স্কুল শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্যদের হাতে শারীরিক লাঞ্ছিত হয়েছে। রোববার (১০ এপ্রিল) দুপুরে ঐতিহ্যবাহি নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের মাঠে প্রকাশ্যে ওই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্কুল শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যেতে চাইলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির হস্তক্ষেপে বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা শান্ত হন। ঘটনার সময় নিজের শিক্ষককে লাঞ্ছিত হতে দেখে স্কুলের শিক্ষার্থীরা মারমুখী হয়ে উঠলে অন্যান্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিবৃত করেন।
লাঞ্ছিত শিক্ষকের নাম মাহাবুবুর রহমান। তিনি হাই স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি। তাকে শারীরিক লাঞ্ছনাকারী ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য হলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সরকার আলম ও আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াজেদ আলী খোকনের ছোট ভাই ওয়াহেদ সাদত বাবু।
স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি বাণিজ্য করতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য সরকার আলম ও ওয়াহেদ সাদত বাবু এমন কান্ড ঘটিয়েছে বলে স্কুলের শিক্ষক এবং অভিভাবকরা নিশ্চিত করেছেন।
স্কুলের একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোববার দুপুরে স্কুল ছুটির সময় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সরকার আলম ও বাবু শিক্ষক মাহাবুবুর রহমানকে স্কুল মাঠের মধ্যেই শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে অন্যান্য শিক্ষকরা মাহাবুবুর রহমানকে উদ্ধার করে শিক্ষক রুমে নিয়ে যান। সেখানে গিয়েও বাবু ও সরকার আলম তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। সরকার আলম তার পাঞ্চাবী এবং বাবু দাঁড়ি ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দেন।
লাঞ্ছিত মাহাবুবুর রহমান বলেন, ছাত্রদের সামনে এ ঘটনায় তিনি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটিতে বিরোধ চলছিল। একটি পক্ষ ভর্তি বাণিজ্য করতে না পেরে তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করেছেন।
স্কুলের একাধিক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার আকষ্মিকতায় আমরা হতবাক হয়ে যাই। কারণ একজন বয়স্ক শিক্ষককে এভাবে প্রকাশ্যে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছনা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকার আলম যেভাবে শিক্ষককে মারধর করছিল মনে হচ্ছে চোর পিটানো হচ্ছে। এটা একটা জঘন্য কাজ হয়েছে। নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। দুর থেকে কিছু শিক্ষার্থীরা এ দৃশ্য অবলোকন করেছে। কমলমতি শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে কিভাবে নিবে? একবার চিন্তা করে দেখেন তো? আরেক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নানা বিষয়ে তর্কবিতর্ক বা ছোট খাটো ঝামেলা থাকতে পারে। সেটা স্কুলের অফিস রুম বা মিলনায়তনে সমাধান হতে পারে। তাই বলে একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে স্কুল মাঠে মারধর করবে, এটা কি কোন সভ্য মানুষের কাজ? একমাত্র অমানুষরা এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করতে পারে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সরকার আলম ও বাবু গংরা স্কুলের কাজ নয়, গুন্ডামী করতে এসেছে। এই ধরনের গুন্ডাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে স্কুলের পরিবেশ নস্ট হয়ে যাবে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহামুদুল হাসান বলেন, যখন ঘটনা ঘটে তখন আমি একটি ক্লাশ নিচ্ছিলাম। আমি অন্য শিক্ষকদের মুখে শুনেছি যে ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য শিক্ষক মাহাবুবুর রহমানকে লাঞ্ছিত করেছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চন্দন শীল বলেন, স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে কমিটির ৩ সদস্য বাণিজ্যের চেষ্টা করছিলেন। আমিসহ স্কুলের সচেতন শিক্ষকরা এতে বাধা হয়ে দাঁড়ালে ওই পক্ষটি আমাদের উপর ক্ষুব্ধ ছিল। এবার সরকার ভর্তির ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে আবেদন নিয়েছিল। চূড়ান্ত ভর্তি তালিকার পাশাপাশি একটি অপেক্ষমান তালিকাও ছিল। ম্যানেজিং কমিটির ৩ জন সদস্য চেয়েছিলেন অপেক্ষমান তালিকা থেকে যেন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভর্তি নেই। আমাদের কাছে খবর ছিল ওই ৩ জন সদস্য ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। তাই তাদের তালিকার প্রার্থীদের ভর্তি না করাতেই গর্ভর্নিংবডির একজন প্রভাবশালী সদস্য আবদুস সালামের ইশারায় অপর দুই সদস্য শিক্ষক মাহাবুবুর রহমানকে প্রকাশ্যে শারীরিক লাঞ্ছিত করেছেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যেতে চাইলে আমি তাদের শান্ত করে পরিস্থিতি সামাল দেই।
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য বিএনপি নেতা সরকার আলম ও ওয়াহেদ শাহাদাৎ বাবু বলেন, ভর্তির জন্য অপেক্ষমান থাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ অবরোধ করেছিল। অভিভাবকরা জানতে পেরেছিল যে, অপেক্ষমান তালিকার বাইরে গিয়ে শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান ভর্তির ব্যাপারে কাজ করেছিলেন। এজন্য তার উপর অভিভাবকরা চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা দু’জনেই শিক্ষক মাহাবুবুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি অস্বীকার করেন।