নারায়ণগঞ্জে আলোচিত মেধাবী শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেয় র্যাব।
জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার চাষাড়া এলাকা থেকে আবু হোসেনের ছেলে মো. শাফায়েত হোসেন শিপন ও কালিবাজার এলাকা হতে সিরাজুল ইসলামের ছেলে মামুন মিয়া এবং ৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে ডিএমপির ধানমন্ডি এলাকা হতে আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে মো. কাজল হাওলাদারকে র্যাব-১১ গ্রেপ্তার করে।
পরবর্তীতে র্যাব গতকাল শিপন ও মামুনকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং আজ (১০ সেপ্টেম্বর) কাজলকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উল্লিখিত তিন আসামি বর্তমানে র্যাবের হেফাজতে রিমান্ডে রয়েছে।
বিষয়টি রাত ৮টার দিকে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
তিনি জানান, গতকাল সোমবার দুইজন ও আজ মঙ্গলবার একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত এবং এর আগে গ্রেপ্তার হননি।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় ত্বকী। পরদিন তার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায় ত্বকী সারাবিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানে সর্বোচ্চ ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ পেয়েছিলেন। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ত্বকীর লাশ উদ্ধারের পর রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ওই বছরের ১৮ মার্চ শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাত বিন ওসমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে সম্পূরক অভিযোগ জমা দেন।
পরে রফিউর রাব্বির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ২০ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করে।
২০১৩ সালের ৭ আগস্ট আজমেরীর ‘উইনার ফ্যাশন’ অফিসে অভিযান চালিয়ে রক্তমাখা জিন্স, একটি পিস্তলের বাট এবং ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করে র্যাব। ওই সময় র্যাব কর্মকর্তারা দেয়াল, সোফা ও আলমারীতে বেশকিছু গুলির চিহ্নও দেখতে পান।
এদিকে র্যাবের ফাঁস হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ত্বকী হত্যাকাণ্ডে ১১ জন অভিযুক্তের প্রত্যেকের ভূমিকার কথা সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়।
আজমেরী ছাড়া অন্য অভিযুক্তরা হলেন, ইউসুফ হোসেন লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর, তায়েবউদ্দিন জ্যাকি, রাজীব, কালাম শিকদার, মামুন, অপু, কাজল, শিপন ও জামশেদ হোসেন।
র্যাব অভিযুক্ত লিটন, ভ্রমর, জ্যাকি এবং সন্দেহভাজন হিসেবে রিফাত বিন ওসমান ও সালেহ রহমান সীমান্তকে গ্রেপ্তারও করে। তবে সবাই পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই বছরের জুলাই এবং নভেম্বর মাসে যথাক্রমে লিটন এবং ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনা থেকে হত্যা পর্যন্ত সব ঘটনার বিবরণ দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে ভ্রমর আদালতে জবানবন্দিতে তার দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারেরও আবেদন জানিয়েছিলেন। ভ্রমর ও লিটনসহ এই মামলার সব আসামি আদালত থেকে জামিন নিয়ে বর্তমানে পলাতক।