নারায়ণগঞ্জের আরেকটি হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আসামি করা হয়েছে। এই নিয়ে আইভীকে ৪ মামলায় আসামি করা হল। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানান ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন। মামলায় আরও আসামি করা হয় সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও কায়সার হাসনাতকে।
ওসি জানান, মামলার বাদী আলেয়া আক্তার মীম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গুলিতে নিহত মো. তুহিনের স্ত্রী। মামলায় ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩০০-৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, গত ২০ জুলাই বিকাল ৫ টায় ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন চিটাগাং রোড ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে গুলিবিদ্ধ হন মো. তুহিন। মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তুহিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিনই ঢাকার খিলগাঁও কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
‘২০ জুলাই বিকালে শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজী ও কায়সার হাসনাতের নেতৃত্বে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রসহ চিটাগাং রোড এলাকায় ছাত্রজনতার উপর হামলা চালায়। এ সময় তুহিন ওই ঘটনার মধ্যে পড়ে গেলে তাকে লক্ষ্য করে শামীম ওসমান তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করলে তুহিনের মাথায় গুলি লাগে এবং সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে’, বলে মামলায় উল্লেখ করেন বাদী।
এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম হত্যা মামলায় আইভীকে আসামি করা হয়। এছাড়া গত ১১ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ ও ৭ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানায় হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আরও দুই মামলায় আইভীকে আসামি করা হয়। এই ছাড়া তার ছোটভাই মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বলকেও অন্তত চার মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০০৩ সালে বিএনপি জোট সরকারের আমলে প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে দেশের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর টানা ৩ মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গণঅভ্যূত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৯ আগস্ট দেশের বাকি সিটি কর্পোরেশনগুলোর মতো টানা তিনবারের নির্বাচিত সিটি মেয়র আইভীকেও অপসারণ করে অন্তবর্তীকালীন সরকার।
এদিকে সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে মামলাকে ভালভাবে নিচ্ছেন না নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। তাদের দাবি, আইভী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি কখনো দলবাজি করেননি। নিজ দলের সন্ত্রাসী ভুমিদুস্য চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। কখনও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের উপর হামলা অত্যাচার করেননি। কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতা করে যেখানে সভা সমাবেশ এমনকি হামলা-গুলি করার অভিযোগ আছে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। সেখানে আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি।
সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে এর আগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন দেশ বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুজ্জামান ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম।