রূপগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পুলিশের উপস্থিতিতেই দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
এতে গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) রাত থেকে বুধবার (১১ জানুয়ারি) ভোর ৪টা পর্যন্ত দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসময় উভয়পক্ষের লোকজন সাধারণ মানুষের বাড়িঘর-দোকানপাটে হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, তারাব এলাকার যুবলীগ নেতা আকবর বাদশার সঙ্গে অপর যুবলীগ নেতা মনছুর আলীর এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও ১০ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।
এ বিরোধকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন আগে আকবর বাদশা গ্রুপ ও মনছুর গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে গত সপ্তাহে জমির বিষয়টি নিয়ে দুইপক্ষ থানায় মীমাংসার জন্য বসলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে তারাব বাজারে আকবর বাদশার ভাই সুমন মোবাইলে মনছুর আলীকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ করছিলো। এসময় মনছুর তাকে গালিগালাজের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। এসময় সুমন জানায়, সে মনছুরকে কিছুই বলছেনা।
এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে দুজনেই বাড়ি চলে যান। রাত ১০ টার দিকে মনছুর বকুল ও শাহীনসহ চনপাড়া বস্তি থেকে আরও কয়েকজনকে নিয়ে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আকবর বাদশার বাড়িঘরে হামলা চালায়, ভাংচুর করে।
অপরদিকে, আকবর বাদশা ডেমরা থেকে লোকজন নিয়ে এসে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মনছুরের বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের লোকজন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রেশস্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এসময় একপক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে করেনি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পরে রাত থেকে দুই গ্রুপের লোকজন রাতভর এলাকায় দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এক প্রকার তাণ্ডব চালায়। এসময় তারা নুরু মিয়া, সূজন মিয়া, সারোয়ার, আলী হোসেন, পারভীন, রেজীয়া বেগম, তোতা মিয়াসহ সাধারণ মানুষের শতাধিক দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাংচুর, লুটপাট বুধবার (১১ জানুয়ারি) ভোর ৪টা পর্যন্ত চলে।
এসময় উভয়পক্ষের আকবর বাদশা, হেনা, জমিলা, আছিফ, আশিক, সেলিনা, শাওন, সাখাওয়াতসহ অন্তত ২০ জন আহত হন বলে জানা যায়।
এদের মধ্যে সাখাওয়াত নামের একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এছাড়া অপর আহতদের ঢামেক হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আকবর বাদশা বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মনছুর, বকুল ও শাহীনসহ তাদের সন্ত্রাসীরা আমার ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে আমাদের লোকজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। আমিসহ আমার লোকজন আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছি।
অপরদিকে মনছুর বলেন, আকবর বাদশা ও তার লোকজন আমার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে আমার স্ত্রীসহ আমার পরিবারের লোকজনকে আহত করেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া এসব তাণ্ডবের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।