রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

রওশন-কাদের এক মঞ্চে, ঐক্যের ডাক

  • আপডেট সময় সোমবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৩, ৩.১৫ এএম
  • ১৩২ বার পড়া হয়েছে

দলের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের মনোমালিন্য ভুলে বছরের প্রথম দিনে এক মঞ্চে বসেছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান গোলাম মোহম্মদ কাদের। রওশন এরশাদসহ দলটির সিনিয়র নেতারা এই ঐক্য ধরে রেখে আগামীতে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (১ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভায় দলটির দুই শীর্ষনেতা এক মঞ্চে বসেন। এ সময় নেতাকর্মীরা রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের নামে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন সভাস্থল।

নবম কাউন্সিলে জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির কোনো কর্মসুচিতে অংশ নেননি দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এমনকি, নবম কাউন্সিলেও তিনি ছিলেন না। বরং দলটির নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ ও মান-অভিমান চলছিল। স্বৈরাচারী কায়দায় দল পরিচালনা, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দেখতে না যাওয়া, দলের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে জিএম কাদেরের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন রওশন এরশাদ। এ অবস্থায় ঐক্যের আভাস দিয়ে রোববার পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মঞ্চে পাশাপাশি বসেন রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পোস্টারেও বহু দিন পর রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের ছবি দেখা গেছে।

বহুদিন পর দুজন এক মঞ্চে বসলেও এই ঐক্য কতদিন টিকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ‍তুলেছেন নেতাকর্মীরা। জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলাবাজের স্থান জাতীয় পার্টিতে হবে না, মর্মে পার্টির মহাসচিব চুন্নুর বক্তব্যে রওশনপন্থীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা চুন্নুসহ কাদেরপন্থী কিছু নেতাকে এই ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য বড় বাধা মনে করছেন।

সভায় দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও মান-অভিমান ভুলে জাতীয় পার্টিকে আগামীতে ক্ষমতায় নিতে নেতাকর্মীদের যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ রাখার কথা বলেছেন রওশন এরশাদ। তবে, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষার মূল্যায়ন, একক সিদ্ধান্তের বদলে সবার মতামত নিয়ে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ওপর জোর দেন তিনি। সবার মতামত নিয়ে চললে জাতীয় পার্টি আগামীতে ক্ষমতায় যাবে বলেও মনে করেন তিনি।

কো-চেয়ারম্যান এবি এম রুহুল আমীন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ দলের সিনিয়র নেতারা বিরোধী নেতা রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টির অগ্রযাত্রা কামনা করেছেন।

দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রওশন এরশাদ। তবে, দলের রওশনপন্থী নেতাদের সভায় দেখা যায়নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বক্তব্য রাখতে না পারলেও সভার শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদের সঙ্গে মঞ্চে বসা ছিলেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। সভার শুরুতে ছাত্রসমাজের বিবাদমান দুই গ্রুপের হাতাহাতি ও চেয়ার ছুরে মারা নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পরে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সভায় বক্তব্য রাখেন—জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও জহিরুল আলম রুবেল।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের চলার পথে মান-অভিমান থাকবে। কিন্তু, দলের স্বার্থে সব ব্যক্তিগত স্বার্থ ভুলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, জাতীয় পার্টি একটা পরিবার। দলের প্রতিটি নেতাকর্মী সেই পরিবারের সদস্য। দলের যেকোনো সমস্যা জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে।

জাতীয় পার্টি সব সময় গঠনমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাসী, জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বরং শান্তিতে বিশ্বাসী। আমরা আমাদের সুআচরণ, ভালবাসা এবং গঠনমূলক রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের মন জয় করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ।

সংবিধান অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন হবে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আশানুরুপ ফল অর্জন করার লক্ষ্যে আমাদেরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে। স্বজনপ্রীতি পরিহার করে সকল পর্যায়ের কমিটি গঠনে যোগ্যতাকে মাপকাঠি ধরতে হবে।

দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, যে মামলাবাজদের কারণে জিএম কাদের আজকে উপস্থিত থেকেও কথা বলতে পারেননি, তাদের স্থান জাতীয় পার্টিতে কখনও হবে না৷

তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে নয়, বরং প্রয়াত এরশাদের প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। তাহলে নির্বাচন নিয়ে কখনও জনমনে প্রশ্ন উঠবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে রংপুরের মতো গাইবান্ধাতেও জাতীয় পার্টি বিজয়ী হবে।

কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আজকে অনেকে বলেন, জাতীয় পার্টিতে ঐক্য নেই। আজকে এই মঞ্চে দেখুন, জাতীয় পার্টির সব নেতা আছেন। এটা ঐক্য নয়ত কী? রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে।

এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে জাতীয় পার্টি আজ ৩৮ বছরে। অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, আগামীতেও ষড়যন্ত্র হতে পারে৷ তবে, জাতীয় পার্টি রওশন এরশাদ, জিএম কাদেরের নেতৃত্বে সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকবে। জাতীয় পার্টি সব সময় উন্নয়ন, গণতন্ত্র, সুশাসন এবং নির্বাচনের পক্ষে।

দলের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, নির্বাচন এলে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়৷ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্রেই জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না। রওশন এরশাদ ও গোলাম মোহাম্মদ কাদের পাশাপাশি বসে আছেন। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না।

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই সমাবেশ প্রমাণ করে জাতীয় পার্টিতে নবজাগরণ শুরু হয়েছে। রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের একই সুতায় গাঁথা। কোনো ষড়যন্ত্রে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হবে না।

তিনি বলেন জাতীয় পার্টি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং ইসলামী মূল্যবোধে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে রাজনীতি করছে। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের মাধ্যমে আমরা পল্লীবন্ধুর স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

সভায় উপস্থিত ছিলেন—পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, ফকরুল ইমাম এমপি, সৈয়দ মো. আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভরায়, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এটিইউ তাজ রহমান, নাসরিন জাহান রতনা এমপি, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঞা, আলমগীর সিকদার লোটন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান এমপি, মনিরুল ইসলাম মিলন, এম এ তালহা, মো. হারুর আর রশিদ, হেনা খান পন্নি, নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, অ্যাডভোকেট লাকি বেগম, অধ্যাপক ড. গোলাম মোস্তফা, নাজনিন সুলতানা, প্রকৌশলী সিরাজুল হক, মাহমুদুর রহমান লিপটন, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, নিগার সুলতানা রানি, আহসান আদেলুর রহমান আদেল এমপি, শেখ আলমগীর হোসেন, সালমা হোসেন, শফিউল্লা শফি, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, আমিরুদ্দিন আহমেদ ডালু, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, রাহ্গীর আল মাহি সাদ এরশাদ এমপি, সামসুল হক, অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, বেলাল হোসেন প্রমুখ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort