এভাবেও ম্যাচ হারা যায়! ৪৩ বলে প্রয়োজন মাত্র ৪৫ রান, হাতে ৮ উইকেট। ক্রিজে সেট দুই ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল আর নুরুল হাসান সোহান। অথচ এই ম্যাচও কি-না হেরে বসলো তারকা দিয়ে ঠাসা ফরচুন বরিশাল। ম্যাচের সঙ্গে শিরোপাও হারালো সাকিব আল হাসানের দল। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে মাত্র ১৫১ রানের পুঁজি। এরপর আবার ব্যাট হাতে সৈকত আলির তাণ্ডব। তবুও বরিশালকে ১৫০ রানে থামিয়ে ১ রানে জয় তুলে নিয়েছে কুমিল্লা।
এ ম্যাচ জয়ের ফলে বিপিএলের আট আসরে তৃতীয়বার শিরোপার স্বাদ পেল কুমিল্লা। ম্যাচের শেষ অংশটুকু বাদ দিলে পুরো ম্যাচই প্রভাব বিস্তার করে খেলেছে বরিশাল। তবে ওই যে প্রচলিত কথায় যে আছে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। শেষটাই তো ভালো করতে পারলো না ফরচুন বরিশাল। শেষ ১৮ বলে ১৮, শেষ ওভারে ১০ এবং শেষ বলে ৩ রানও যে করতে পারলো না তারা। দিন শেষে শিরোপার হাসি ইমরুল কায়েসের, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের।
অথচ ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও মাত্র ১৫১ রানে থামে কুমিল্লা। ১৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বরিশালের। ইনফর্ম মুনিম শাহরিয়ার আজ ৭ বল খেলে ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। এরপর ব্যাট হাতে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন সৈকত। ব্যাটিং দানবের খেতাব কুড়ানো ক্রিস গেইলকে একপাশে দর্শক বানিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন তিনি।
পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৫১ রান তোলে বরিশাল। খানিক পর টুর্নামেন্টের নিজের প্রথম ফিফটির দেখা পান সৈকত। মাত্র ২৬ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি। যদিও ইনিংসটাকে পরে আর টানতে পারেননি। বাঁহাতি স্পিনার তানভীরের বলে ইমরুলে কায়েসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজ ঘরে। যাওয়ার আগে ১১টি চার ও ১টি ছয়ের মারে ৩৪ বলে খেলেন ৫৮ রানের ইনিংস। তখন বরিশালের স্কোর্ডবোর্ডে ৭৯ রান।
সৈকত ফেরার পর দলের হাল ধরেন গেইল। দলের চাহিদা অনুযায়ী ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করতে থাকেন তিনি। ইনিংসের ১৩তম ওভারে গেইলকে আউট করেন তারই জাতীয় দলের সতীর্থ নারাইন। লেগবিফোরের ফাঁদে পড়ে গেইল সাজঘরের পথ ধরেন ৩১ বলে ৩৩ রানে। যেখানে ১টি চারের সঙ্গে ছক্কা হাঁকান ২টি। অধিনায়ক সাকিব অবশ্য আজ সুবিধা করতে পারেননি, মুস্তাফিজ দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে ফেরান সাকিবকে। ৭ বলে ৭ রান করেন সাকিব।
সাকিবের আউটের পর মোমেন্টাম ফিরে পায় কুমিল্লা। নুরুল হাসান সোহান রান আউটে কাটা পড়েন ১৪ রানে। সুবিধা করতে পারেন ব্রাভো আর নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্রাভো ১ আর শান্ত আউট হন ১৫ বলে ১২ রানে। ৭ উইকেট হারানো বরিশালের শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ১০ রান। শেষ বলে ৩ রান দরকার পড়লে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন মুজিব উর রহমান। ১ রানে রোমাঞ্চকর জয় শিরোপা ঘরে তোলে কুমিল্লা।
এ নিয়ে বিপিএলে ৮ মৌসুমে ৩ বার ফাইনাল খেলে তিনবারই শিরোপা জিতল কুমিল্লা। ব্যাট হাতে ২৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংসের পর বোলিংয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন কুমিল্লার সুনীল নারাইন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লাকে দারুণ শুরু এনে দেন ওপেনার সুনীল নারাইন। লিটন দাসকে একপাশে রেখে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালান তিনি। চার-ছক্কার ফুলঝুরি সাজানো নারাইনকে থামাতে মরিয়া সাকিব আল হাসান পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে ব্যবহার করেন ৫ জন বোলারকে। সে টোপ নারাইন গেলার আগেই সাজঘরে লিটন। সুবিধা করতে পারেননি, ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ফেরেন সাকিবের শিকার হয়ে। ৬ বলে ৪ রান করেন তিনি।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে মেহেদী হাসান রানাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শান্তর হাতে ধরা পড়েন নারাইন। তার আগে অবশ্য গড়ে ফেলেছেন আরো এক রেকর্ড। আগের দিন ১৩ বলে ফিফটির পর আজ তার ২১ বলে করা ফিফটি বিপিএলে ইতিহাসে ফাইনালে সবচেয়ে দ্রুতগতির। থামেন ৫৭ রানে। ২৩ বলের ইনিংটি সমান ৫টি চার-ছয়ের মারে।
নারাইনের আউটের পর আবার মুজিবকে বোলিংয়ে আনেন সাকিব। অধিনায়কের আস্থার মান রাখেন এই আফগান স্পিনার। পরে ৩ ওভারে স্পেলে ফেরান ফাফ ডু প্লেসি (৪) আর আরিফুল হককে (০)। তার আগে ব্রাভোর দুর্দান্ত এক থ্রোতে রান আউটে কাটা পড়েন মাহমুদুল হাসান জয়। ৭ বল খেলে ৮ রান করেন তিনি। বল হাতেও সাফল্য পেয়েছেন ব্রাভো। ইমরুল কায়েসকে আউট করেন ব্যক্তিগত ১২ রানে। উড়তে থাকা কুমিল্লা হঠাৎই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
৯৫ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন মঈন আলি আর আবু হায়দার রনি। তাদের সপ্তম উইকেটে ৫২ বলে ৫৪ রানের পার্টনারশিপে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় কুমিল্লা। যদিও রনির ব্যাটিং একেবারেই টি-টোয়েন্টিসুলভ ছিল না। ২৭ বলে ১৯ রান করেন তিনি। মঈনের ৩২ বলে ৩৮ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রানের সংগ্রহ পেয়েছে কুমিল্লা। বরিশালের মুজিব ও শফিকুল ২টি করে উইকেট নেন মুজিব।