রুদ্রবার্তা২৪.নেট: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পোস্টার ছিঁড়ে মহাজোটের সাংসদ প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন জ্বালানো ও লুটপাটের মামলার আসামি ছিলেন জাকির হোসেন৷ ওই মামলায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালেরও অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে৷ এছাড়া হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অর্থায়ন করারও অভিযোগ রয়েছে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে৷ তিনি সদর উপজেলার আলীরটেক ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান৷ সেই জাকির হোসেনই এবারের নির্বাচনে পেয়েছেন নৌকার মনোনয়ন৷ এ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমালোচনা তৈরি হয়েছে৷
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্বে নগরীর পাইকপাড়ার নয়াপাড়া এলাকায় মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ একেএম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চলে৷ নির্বাচনের বানচালের চেষ্টায় সংঘটিত ওই ঘটনায় ২৫ ডিসেম্বর সাংসদের অনুসারী এনামুল হক রিয়াজ মামলা করেন৷ ওই মামলায় ৭৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়৷ মামলার ৭৪ নম্বর আসামি জাকির হোসেন৷
মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাকিরসহ এজাহারনামীয় ৭৪ জনসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জন আসামি মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের পাইকপাড়ার নয়াপাড়া ক্যাম্পে হামলা করে৷ ক্যাম্পের ভেতর বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংযুক্ত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে৷ ক্যাম্পে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়৷ সেই আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন৷ ক্যাম্পে থাকা অডিও প্লেয়ার, মাইক লুট করে আসামিরা৷
আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার মতো ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন জাকির হোসেন৷ সেই মামলায় আসামিও হন তিনি৷ হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ অথচ তাকেই আবার দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ প্রভাবশালী এক নেতার কারণে সহিংসতা মামলার আসামির ঝুলিতে নৌকার মনোনয়ন উঠেছে৷
জানা গেছে, গত শনিবার নৌকার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমানকে ঘোষণা করা হলেও তা বাতিল করে সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে দেওয়া হয়েছে মনোনয়ন৷ শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে জাকির হোসেন অনুসারী কর্মীদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের কাগজও সংগ্রহ করেছেন৷
দলীয় একটি সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জের এক সাংসদের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন মতিউর রহমান৷ তার লবিংয়েই নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি৷ তবে প্রভাবশালী আরেক সাংসদের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন জাকির হোসেন৷ তাকে দলীয় প্রার্থী করতেই মতিউর রহমান সরে দাঁড়িয়েছেন৷ এদিকে সহিংসতা মামলার আসামিকে নৌকার মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলে৷
এ বিষয়ে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়টি আমি অবগত নই৷ আসলে আলীরটেকের প্রার্থীর তালিকায় আমি স্বাক্ষর করিনি৷ সাধারণ সম্পাদক নিজে কেন্দ্রে গিয়ে তালিকা জমা দিছেন৷ কুতুবপুরের ক্ষেত্রেও তাই৷ কেন্দ্রই বাকিটা করেছে৷ হাইকমান্ড কোনো সিদ্ধান্ত দিলে আমাদের তা মেনে নিতেই হয়৷ তবে মহাজোটের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরসহ বঙ্গবন্ধু-প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছিঁড়ে ফেলা মামলার আসামির নৌকা মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে৷’
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী জাকির হোসেন বলেন, ‘মামলার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না৷ অন্য কোথাও থেকে তথ্য নেন৷ আমাকে আওয়ামী লীগ যোগ্য ভেবেই মনোনয়ন দিছে৷’