গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর কনডেম সেলে বসেই মোবাইল চালাতেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন। ৫ জানুয়ারি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর কনডেম সেল থেকে তার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপরই নুর হোসেন ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে দেয়া হয়।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার আব্দুল জলিল।
তিনি আরো জানান, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে নূর হোসেনসহ তিনজন বন্দি রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন মামলার ফাঁসির আসামি সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। নূর হোসেন কনডেম সেলে বসে গোপনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন বলে আমরা জানতে পারি। পরে তার কনডেম সেলে গত ৫ জানুয়ারি অভিযান চালানো হয়।
এ সময় ওই কনডেম সেল থেকে একটি মিনি বাটন মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
জেল সুপার আরো জানান, কারাগারে মোবাইল ব্যবহারের অপরাধে তার বিরুদ্ধে কারাবিধি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করা হচ্ছে কিভাবে কারাগারের ভেতর মোবাইল আনা হয়েছে।
এদিকে কাশিমপুর কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, শনিবার (৮ জানুয়ারি) কনডেম সেলে বসে কিভাবে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছে নুর হোসেন তা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
৭ খুন মামলায় নূর হোসেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ছিলেন নূর হোসেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের দুটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভাই-ভাতিজাকে জেতাতে কারাগারের কনডেম সেলে বসেই মোবাইল ফোনে বয়োজ্যেষ্ঠদের তালিম দিয়ে যাচ্ছিলেন নূর হোসেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নাসিক নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে লড়ছেন নূর হোসেনের ছোট ভাই নূর উদ্দিন আর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভাতিজা শাহ জালাল বাদল। দু’জনের প্রতীকই ঠেলাগাড়ি।
ভোটের মাঠে তাদের দু’জনের পক্ষে নামতেই এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের খুঁজে খুঁজে বের করে কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন ফাঁসির আসামি নূর হোসেন।
এছাড়াও ভাতিজা বাদল ও নুরুদ্দিন ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলতেন নেন কথা বলেন। অপরপ্রাপ্ত থেকে নুর হোসেন তাদের মোবাইলের মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলতো। নুর হোসেনের জব্দ করা মোবাইল ফোনের কল লিষ্ট চেক করলেই কাকে কাকে তিনি ফোন দিয়ে ভাতিজা ও ভাইয়ের পক্ষে ভোট চেয়েছেন তা জানা যাবে বলে ৩ ও ৪নং ওয়ার্ডে অনেকেই জানিয়েছেন। যদিও নুরু উদ্দিন ও শাহজালাল বাদল ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। কিন্তু নুর হোসেনের মোবাইল ফোনে কথা ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এবং তার মোবাইল ফোন জব্দ করায় একদিকে দু:চিন্তা অন্যদিকে চরমভাবে বেকায়দায় পড়েছেন তারা। সাধারণ ভোটাররাও বলেছেন, নুর হোসেনের মোবাইল ফোন জব্দ হওয়ার খবর পেয়ে আমরাও কিছুটা স্বস্থিতে আছি। নুর হোসেনের কথা বলে তারা আমাদের ভয় দেখিয়ে আসছিল। এছাড়াও নুর হোসেনের ক্যাডাররা এলাকায় এলাকায় মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। নুরু উদ্দিন ও বাদল এবার ভোটে জিততে পারবে না বলে ক্যাডারদের দিয়ে একদিকে ভয় দেখাচ্ছে আরেক দিকে নুর হোসেনে ফোন ধরিয়ে দিতো। আমরা শুধু নুর হোসেন নয় তদন্ত করে তার ভাতিজা বাদল ও ভাই নুরু উদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের তিনদিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহকর্মী হত্যার ঘটনায় স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে
একই থানায় আরেকটি মামলা করেন। ২০১৬ সালে বিচারে নেুর হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসি ও ৯ জনের যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দেন আদালত। পরে উচ্চ আদালতে নুর হোসেনসহ ১৫ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে। বাকীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।