নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পাঁচ আগষ্টে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতা শহরে ফিরতে শুরু করেছেন, সক্রিয় হচ্ছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। নারায়ণগঞ্জে ছাত্র জনতার ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত এ দলটির শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে পালালেও দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সারির অনেকে দেশেই আছেন। পাঁচ আগষ্টের পর নারায়ণগঞ্জ ছাড়লেও এবার ফিরতে শুরু করেছেন তারা।
ইতিমধ্যে পোস্টার লাগিয়ে ও দেয়াল লিখনের মাধ্যমে আলোচনায় উঠে এসেছেন ছাত্রলীগ। এর আগে নিষিদ্ধ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মুখ ঢেকে কেক কেটেও আলোচনায় আসে নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগ। গত ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ, মহিলা কলেজ, ডাক বাংলো, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পোস্টার লাগিয়ে চলে যায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেলেও এখনও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি প্রশাসন।
এ ঘটনার পরের দিনই ২৩ জানুয়ারি সোনারগাঁ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সাগরের নেতৃত্বে শেখ হাসিনা ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতের ছবি সংবলিত পোস্টার প্রচার করা হয়। এসময় পোস্টারে ‘আগেই ভাল ছিলাম’ ‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ স্লোগান লেখা ছিল।
২৭ জানুয়ারি গভীর রাতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মুখোশধারী নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের টিসি রোড এলাকার বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে ও দোকানের শাটারে ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান লিখে পালিয়ে যায়।
২৮ জানুয়ারি ফের নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের গেটে শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের পক্ষে পোস্টার লাগাতে দেখা যায়।
২৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও আড়াইহাজারের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ছবি সংবলিত পোস্টার লাগানো দেখা গেছে। পোস্টারে ‘শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের বৈধ সরকার’, ‘২০২৫ সালের অঙ্গিকার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, আসছি অতি শিঘ্রই, প্রস্তুত থাক কর্মীরা’ স্লোগান লেখা ছিল।
এদিকে পাঁচ আগষ্টের পর নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের দুই এমপি শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশত্যাগ করেছেন। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের আরেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এখন কারাগারে। দেশেই আত্মগোপনে আছেন সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি সেলিম ওসমান। তবে এখনও প্রশাসনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে আছেন তারা।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও আনোয়ার হোসেন নারায়ণগঞ্জেই অবস্থান করছেন। তারা দুজনেই নিজ নিজ বাড়িতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। মুঠোফোনে সার্বক্ষনিক নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগও করছেন তারা৷ তবুও তাদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি প্রশাসন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রথম ও দ্বিতীয় সারির নেতারা পালালেও তৃতীয় ও চতুর্থ সারির নেতারা দেশেই আছেন। তাদের অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরে। ধারণা করা হচ্ছে এসকল নেতাকর্মীরাই নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে পোস্টারকান্ডের পেছনো জড়িত।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরে পোস্টারকান্ডের ঘটনায় আর্থের যোগান দিয়েছেন গণহত্যায় অভিযুক্ত ও শামীম ওসমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিশ বাবু। পাঁচ আগষ্টের পর থেকে মুন্সিগঞ্জে লুকিয়ে থাকলেও বর্তমানে নিয়মিত নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করে নিজের ব্যাবসা চালাচ্ছেন বাবু। নারায়ণগঞ্জ শহরের দক্ষিণাঞ্চলের এক মহিলাদল নেত্রীর সাথে সমঝোতা করে নিজের ব্যাবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাবু।
রাজধানীতেই আছেন সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত। সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের আলোচিত নেতা সোহাগ রনিও আছেন নারায়ণগঞ্জে। পাঁচ আগষ্টের পর একাধিকবার শহরে দেখা গেছে তাকে। সোনারগাঁ এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে কাজ করছেন তারা।
এদিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের সক্রিয় হয়ে ওঠার ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। এঘটনার পর শুরুতে আল্টিমেটাম দিয়ে ডিসি অফিস, এসপি অফিস ঘেরাওয়ের হুশিয়ারি দিলেও পরবর্তীতে ছাত্রনেতাদের আর মাঠে দেখা যায়নি। এর বিপরীতে প্রতিনিয়ত জেলাজুড়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে ছাত্রলীগ।