সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্ধা আবুল কালাম ভূঁইয়া ওরফে ছক্কু। দীর্ঘদিন ধরেই ওই ওয়ার্ড এলাকার জন্য এটি একটি আতংকের নাম হিসেবে পরিচিত। ছক্কু বিভিন্ন অপরাধে বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলও খেটেছে। কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সংশোধন না হয়ে আগের চেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ছক্কুর আবারো বেপরোয়া হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে আতংক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসিক ৮নং ওয়ার্ডের গোদনাইল ভূইয়াপাড়া এলাকার মৃত আলকাছ ভূইয়ার ছেলে ছক্কুর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। যার মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা ও মাদক মামলাও রয়েছে। গোদনাইল ভুইয়াপাড়ার বাসিন্দা লাকিকে ধর্ষন ও হত্যা মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলো ছক্কু।
এছাড়া জমি সংক্রান্ত মামলায় একবার ছক্কুকে গ্রেপ্তার করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। তাছাড়া ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) পুলিশের হাতে ফেন্সিডিলসহ গ্রেপ্তার হয় ছক্কু। এরপরেও থেমে থাকেনি তার অপরাধ কর্মকান্ড। তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তিনটি মাদক মামলা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালীদের দাপটে গোদনাইল তাঁতখান, সৈয়দপাড়া, শান্তিনগর এলাকায় নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে ছক্কু। মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে নগদ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রান নাশেরও হুমকী দিয়েছিলো এ ছক্কু। সেই ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে ভুক্তভুগী (যার নং -৮৫১)।
এত অপরাধের পরেও ছক্কুকে আইনের আওতায় না আনায় জনমনে দেখা দিয়েছে শংকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে তার বিরুদ্ধে কোন প্রদক্ষেপ না নেয় সেজন্য সুচতুর এ মানুষটি আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতাদের নাম বিক্রি করছেন। আবার অনেকে তাকে গোপণে আশ্রয়ও দিচ্ছেন বলে নাম প্রকাশে একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। যার কারণে ছক্কু দিব্ব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং চালিয়ে যাচ্ছেন তার অপরাধযজ্ঞ।
এদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, স¤প্রতি ছক্কুর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং চক্র। যারা কিনা এলাকায় বিভিন্ন সময় মটরসাইকেল নিয়ে মহড়া প্রদর্শণ করে থাকে এবং জনমনে আতংক সৃষ্টির চেষ্টা করে। এই কিশোর গ্যাং দিয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা নতুন করে শুরু করেছে বলে জানান এলাকাবাসী।
এতোসব অপরাধের পরেও কেউ কেন কোন অভিযোগ করে না তার বিরুদ্ধে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাসিক ৮নং ওয়ার্ডের সৈয়দ পাড়া এলাকার এক ব্যাক্তি জানায়, তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের শেল্টারে চলে। ভাই আমাদের তো পরিবার আছে। স্ত্রী সন্তান আছে। যতটা পারি পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করি। অভিযোগ করে কোন লাভ হবে না। বরং তার খারাপ পরিনতি অভিযোগ কারীকেই ভোগ করতে হবে। তাই কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস করে না।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, গোদনাইল তাঁতখানার জলিল পাগলা মাঠে ছক্কুর অফিস মাদক ব্যবসায়ীদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানেই বসে তারা তাদের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও সেবন করে থাকে। আর এই অফিসের দেয়ালে টানানো হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমানের ছবি।
যাতে করে যে কেউ দেখলে মনে করে এটা আওয়ামীলীগের অফিস। মহামারী করোনার সময়ও ছক্কুর মাদক ব্যবসা থেমে থাকেনি। করোনা মহামারি থেকে মানুষের জীবন রক্ষার মতো কাজে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে দেদারছে মাদক বিক্রি করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ গোদনাইল ৮নং ওয়ার্ডের জলিল পাগলা মাঠ, বউ বাজার, শান্তিনগর, তাঁতখানা, চৌধুরী বাড়ি, আদর্শ বাজারসহ আশে-পাশের এলাকায় অনেকটা বিনা বাঁধায় চলছে মাদক ব্যবসা। গোদনাইল শান্তিনগর ও নয়ামাটি এলাকাটি ফতুল্লা মডেল থানার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা অনেকটা নিশ্চিন্তে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার সাধারণ জনগণ বলেন, ছক্কুর মাদক ব্যবসার কারণে ওয়ার্ডের যুব সমাজ আজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এত অপরাধের পরেও মাদকব্যবসায়ী ছক্কুকে আইনের আওতায় কেনো আনা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয় এলাকাবাসীর কাছে।
এলাকাবাসী চায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। সেজন্য জেলা পুলিশ ও র্যাব-১১’র প্রতি আহবান জানিয়েছে এলাকাবাসী। বিশেষ করে স¤প্রতি নারায়ণ জেলা পুলিশ বিভিন্ন থানায় কিশোরগ্যাং নিয়ন্ত্রনে যেই কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেন সিদ্ধিরগঞ্জ তথা ৮নং ওয়ার্ডবাসী।
তারা দাবী জানান, নাসিক ৮নং ওয়ার্ডে যেনো দ্রæতই কিশোরগ্যাং, মাদক, ইভটিজিং রোধে পুলিশের অভিযান পরিচালিত হয়।