লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারিরীক দিক থেকে মানসিক অবস্থা অনেকটা চাঙ্গা। দীর্ঘদিন পর তিনি নাতনিকে একসঙ্গে পেয়ে মানসিক একাকীত্ব ঘুচে গেছে খালেদা জিয়ার।
বৃহস্পতিবার রাত ১টা পর্যন্ত হাসপাতালে দাদির বিছানার পাশে সময় কাটিয়েছেন বড় নাতনি ব্যারিস্টার জায়মা জারনাজ রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। দুয়েকদিনের মধ্যে এগুলোর রিপোর্ট পাওয়া যাবে। রিপোর্ট দেখে মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য সময়ের আলোকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ম্যাডাম লম্বা জার্নি করার পরও অনেকটা সুস্থ আছেন। কারণ তিনি দীর্ঘদিন পর পরিবারের সান্নিধ্য পেয়েছেন। ভর্তির পর থেকে বেশকিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের। কয়েকটির রিপোর্টও এসেছে। এগুলো পর্যালোচনা করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। আরও কয়েকদিন মেডিকেল বোর্ড আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিবেন। যে উদ্দেশ্যে ম্যাডাম লন্ডনে এসেছেন সেই লিভার প্রতিস্থাপন করা যায় কি না।
আরও উন্নত চিকিৎসায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হবে কি না? জবাবে তিনি বলেন, লন্ডন ক্লিনিকে অনেক উন্নতমানের চিকিৎসা হয়। এখানকার চিকিৎসকরা জগত বিখ্যাত। মনে হয় না ম্যাডামকে অন্য কোথাও নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। তবুও বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক সময়ের আলোকে বলেন, আমি ও সংগঠনের সেক্রটারি কয়সর এম আহমেদ সব সময় হাসপাতালে আছি। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের একজন সদস্যসহ আমাদের তিনজনের হাসপাতালে প্রবেশাধিকার আছে। ম্যাডাম ছেলে ও নাতনিদের কাছে পেয়ে মানসিকভাবে বেশ চাঙ্গা আছেন এটা বোঝাই যাচ্ছে। হাসপাতালে প্রতিদিন ছেলে তারেক রহমান ও দুই পুত্রবধূ আসার যাওয়ার মধ্যে আছেন। ডা. জুবাইদা রহমান বাসা থেকে শ্বাশুড়ির জন্য রান্না করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুয়ায়ী তিনি প্রতিদিন খাবার পরিবেশন করছেন। তিন নাতনি (জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান) দাদির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১টা পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলেন বড় নাতনি জায়মা রহমান। তিনি তো ম্যডামের কলিজার টুকরা। কারণ তাকে সাত বছর পর দেখেছেন। ম্যাডামের প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দুই মেয়ে ঢাকায় কয়েকবার গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে ম্যাডামের আগেও দেখা হয়েছে।
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকছেন। মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা রাত ১০-১১টার পর বাসায় চলে গেলেও প্রতিদিন হাসপাতালে থেকে যান ডা. জাহিদ। চিকিৎসক ও সফরসঙ্গীরা হাসপাতালের পাশেই হোটেল থাকছেন।
স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’–এ কার্ডিওলজিস্ট, আইসিইউ স্পেশালিস্ট, ইন্টারন্যাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট এবং ফিজিওথেরাপিস্টসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা আরও কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার লন্ডনে এক ব্রিফিংয়ে ডা. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আগামী দু–একদিনের মধ্যে পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর্ব শেষ হবে। বড়দিন উপলক্ষে কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখনো ছুটিতে আছেন। তারা এসে খালেদা জিয়াকে দেখবেন। সে অনুযায়ী তার চিকিৎসাপদ্ধতি কি হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বাংলাদেশ থেকে আসা চিকিৎসা বোর্ডের সদস্যরাও আছেন। তারাও ওনাদের (দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসকদের) সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করে খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করবেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার সহধর্মিণী জুবায়দা রহমান, প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী শামিলা রহমান ও খালেদা জিয়ার নাতনিরা সার্বক্ষণিক পাশে থেকে তার মানসিক একাকীত্ব ঘুচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এর আগে গত বুধবার (০৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যের পশ্চিম লন্ডনের বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি অধ্যাপক ডা. প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে ভর্তি রয়েছেন। ভর্তির পর প্রথম দিন বুধবার ডাক্তাররা তার বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তাকে অনেকদিন পরিবারের কাছের সদস্যদের থেকে দূরে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে অনেক হাসি-খুশি আছেন। সবার সঙ্গে খুনসুটি করছেন। পরিবারের সবাই রুটিনমাফিক আসা-যাওয়া করছেন।
কাতারের আমিরের প্রতি তারেক রহমানের কৃতজ্ঞতা
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় লন্ডন যাত্রায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই সঙ্গে কাতার-বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী ও বহুমুখী সম্পর্কের ব্যাপারে আগ্রহের কথাও জানান তিনি। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এসব লেখেন তারেক রহমান।
ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান বলেন, আমার মা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সদয়ভাবে পরিবহন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য আমি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানির কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তারেক রহমান আরও বলেন, আমার পরিবার এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে, আমি এই সমর্থনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী, বহুমুখী সম্পর্ক গড়ে তুলতে উন্মুখ।