সুদীর্ঘ ৩৬ বছর পরে বহু কাক্সিক্ষত বিশ্বকাপ জেতার পরই জাতীয় দল থেকে অবসরের কথা একবার ভেবেছিলেন লিওনেল মেসি। তবে পরক্ষনেই নিজেই সেই চিন্তায় ছেদ টানেন শুধু একটা বাসনার কথা ভেবে। সাত বারের ব্যালন ডি-অর জয়ীর বহু দিনের ইচ্ছে তিন তারকা খচিত আর্জেন্টিনা জার্সিতে মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর। পানামার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে সেই শখ গতকাল সকালে পূরণ হয়েছে মেসির। কাতার বিশ্বকাপ জেতার পর এটিই ছিল বর্তমান শিরোপা জয়ী দলের প্রথম ম্যাচ। বুয়েনস এইরেসের এই খেলা দেখার জন্য গ্যালারিতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। আবেগের ম্যাচে পানামার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় ছিনিয়ে নিয়েছে আলবিসেলেস্তারা। উৎসবের রাতে ক্যারিয়ারের ৮০০তম গোলের দেখা পেয়েছেন মেসি।
মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামের এই ম্যাচটি দেখতে টিকিট চেয়েছিল ১৫ লাখের বেশি মানুষ। বাছাইকৃত সৌভাগ্যবানরাই পেয়েছিলেন নিজ চোখে মেসিদের দেখার সুযোগ। জাতীয় সঙ্গীতের সময় সন্তানদের সামনে নিয়ে দাঁড়ানো মেসির মুখে তৃপ্তির হাসি, একইরকম হাসি ডাগআউটে দাঁড়ানো কোচ লিওনেল স্কালোনির মুখেও। তাদের মুখে হাসি থাকলেও গ্যালারিতে থাকা ৮৩ হাজার দর্শককে সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখে খেলোয়াড়দের কাউকে কাউকে আবেগাপ্লুতও হতে দেখা যায়।
আবেগের এই দোলাচলের কারণেই কিনা অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ পানামার বিপক্ষে প্রথম গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭৮ মিনিট পর্যন্ত। জাতীয় দলের জার্সিতে তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামা যুক্তরাষ্ট্রের লিগ এমএলএসের সম্ভাবনাময় মিডফিল্ডার থিয়াগো আলমাদার গোলে স্বস্তি পায় স্বাগতিকরা। মেসির ফ্রি-কিক পোস্টে লেগে ফিরে এলে ফিরতি শটে পানামার প্রতিরোধ ভাঙেন ২১ বছরের এই তরুণ।
মেসির সামনে হাতছানি দিচ্ছিল দুটি মাইলফলক। এই ম্যাচে এক গোল করলে পূর্ণ হবে পেশাদার ক্যারিয়ারে ৮০০ গোল। আর দুই গোল পেলে সেটার সঙ্গে যোগ হবে আর্জেন্টিনার হয়ে ১০০ গোল করার গৌরবও। তবে প্রথমার্ধে তার ফ্রি-কিক পোস্টে লেগে ফিরে আসা এবং বারকয়েক পানামা গোলকিপার হোসে কার্লোস গেরা তার শট ফিরিয়ে দেওয়ার পর মনে হয়েছিল, রেকর্ড দুটি বোধহয় এই ম্যাচে হচ্ছে না। তবে তখনও মেসির জাদু দেখানো বাকি। ৮৯ মিনিটে প্রায় ২৪ গজ দূর থেকে ফ্রি-কিকে তার বাঁ পায়ের বাঁকানো শট ঠাঁই পায় জালে। তাতে পেশাদার ফুটবলে ৮০০ গোল পূর্ণ হয় আর্জেন্টিনা অধিনায়কের।
ম্যাচ শেষে মেসির কণ্ঠে সমর্থকদের জন্য নিখাদ ভালোবাসা, ‘শুধু বিশ্বকাপই নয়, কোপা আমেরিকা জয়ের পর থেকেই আপনাদের যে ভালোবাসা ও সম্মান, সবাইকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা কথা দিয়েছিলাম যে এই ট্রফির জন্য নিজেদের সবকিছু উজাড় করে দেব।’ আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর কারিগর স্কালোনি কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘এই ফুটবলারদের প্রতি চিরন্তন কৃতজ্ঞতা। তাদেরকে ছাড়া আমরা এই বিশ্বকাপ জিততে পারতাম না।’
তিন তারকা খচিত জার্সিতেই মেসির ৮০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়া, তাও আবার ঘরের মাঠে অজশ্র আবেগী ফুটবল প্রেমীদের সামনে। তাই বলাই যায় একই সঙ্গে রদ দেখা ও কলা বেচা দুটিই হলো মেসির। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শতক পূরণে চায় আরও এক গোল। সামনের সোমবার দিবাগত রাতে কুরাসাওয়ের বিপক্ষে সেটাও মাইলফকও ছোঁয়া হয়ে যেতে পারে।