রুদ্রবার্তা২৪.নেট: ডেকে এনে শালিসের নামে ‘মাদক সেবী’ আখ্যা দিয়ে হেনস্ত করার অভিযোগ উঠেছে নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর ও তার অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এরপরে ঘরে ফিরে ভুক্তভোগী সেই বৃদ্ধ করেছেন ‘আত্মহত্যা’। সন্তানেরা রাতেই অভিযোগ করেছেন, ‘নির্যাতনের ফলে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাবা’। তবে, অভিযুক্ত কাউন্সিলর বলছেন, পারিবারিক কলহে আত্মহত্যা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ডে রোববার (১৩ মার্চ) রাতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটিতে সোমবার ‘অপমৃত্যু’র মামলা নিচ্ছে পুলিশ।
অভিযুক্ত ওই কাউন্সিলরের নাম আবুল কাউসার আশা। তিনি গত ১৬ ডিসেম্বর ওয়ার্ডে নতুন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালামের ছেলে।
৬৫ বছর বয়সী আত্মহননকারী মোক্তার হোসেন মুক্তু পেশায় পাইপ ফিটিং মিন্ত্রী। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ২৩ নং ওয়ার্ডের বাগবাড়িতে বসবাস করতেন।
মুক্তুর বড় ছেলে আলম জানান, কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা বাড়িতে সংস্কার কাজ ধরেন। সেই কাজে যোগদেন পাইপ ফিটিং মিন্ত্রী মোস্তার হোসেন মুক্তু। সম্প্রতি কাজে যায়নি। এতে ক্ষুব্ধ হন আশার পরিবার। ১৩ মার্চ রাত সাড়ে ৯টায় আশার অনুসারী মিশুক পাইপ ফিটিং মিন্ত্রী মোস্তার হোসেন মুক্তুকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। কথিত শালিস করে মুক্তুকে ধাক্কাদেন ও অপমান অপদস্ত করেন। পরে মুক্তু বাড়িতে গিয়ে গলায় ফাঁসদেন। পরিবারের লোকজন তাকে দ্রæত উদ্ধার করে ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, মুক্তুর মৃত্যুর খবরে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তারা কাউন্সিলর অফিসের বাহিরে বিক্ষোভ করতে থাকনে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নিহতের মেয়ে রাতেই গণমাধ্যম কর্মীদের কান্না করে জানান, আমার বাবা বলেছে, ‘আমি জালাল হাজি (কাউন্সিলরের দাদা)কে ভয় পাইনি, আর তোকে ভয় পাবো’। এ জন্য কাউন্সিলর লোক পাঠিয়েছে, আমার বাবাকে মারতে। আমাদের দু’ ভাই-বোনের সামনেই বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে। আমার বাবা কখনো সিগারেট খায়নি, ছোট বেলায় মা মারা গেছে, আমাদের লালন-পালন করে বড় করেছে বাবা। আজকে সেই বাবাকেই নেশাখোর আখ্যা দিয়েছে। বহুবার নিয়ে আসতে চেয়েছি, তারা আনতে দেয়নি। বলেছে, পুলিশ ডেকে সই দিয়ে নিয়ে যান।
সকালে বন্দর থানার অফিসার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলেছি, তারা কেউ অভিযোগ করতে আগ্রহী না। তাই আমাদের কাছে তারা একটি অপমৃত্যুর অভিযোগ দিচ্ছে, অপমৃত্যুর মামলা হবে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা বলেন, মোক্তার হোসেন মুক্তুর সাথে তার পরিবারের পারিবারিক কলহ দীর্ঘদিনের। তাই আত্মহত্যা করেছে। এটা এলাকাবাসী ও তার ছেলে-মেয়ে সকলেই জানে। কেউ যদি বাসায় গিয়ে, আত্মহত্যা করে, এটার জন্য আমি দায়ি না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমার বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের ভুল বুঝতে পেরে অপমৃত্যুর মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার বাসায় ও অফিসে সিসি টিভি ক্যামেরা আছে, মৃত ব্যক্তি ১৩ মার্চ আমার অফিসে ডুকেও নাই। ৬১ বছর বয়সী একজন মানুষকে কেন আমি নির্যাতন করবো। আপনি আবার ওই পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করুন।