অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের হাফ-সেঞ্চুরি ও বোলারদের নৈপুন্যে আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সুপার টুয়েলভে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ৪২ রানে হারিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এই জয়ে সেমিফাইনালের খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখলো অসিরা।
এই গ্রুপে টেবিলের শীর্ষে থাকা নিউজিল্যান্ডের সমান ৫ পয়েন্ট এখন অস্ট্রেলিয়ারও। তবে কিউইদের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে রান রেটে পিছিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে অস্ট্রেলিয়া। ৩ ম্যাচ খেলে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে টেবিলের শীর্ষে নিউজিল্যান্ড। ৪ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে আয়ারল্যান্ড। ৩ খেলায় ৩ পয়েন্ট আছে ইংল্যান্ডেরও। এই চার দলেরই সেমিতে খেলার ভালো সুযোগ থাকছে। ২ করে পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শেষ দুই দল- শ্রীলংকা ও আফগানিস্তান। অনেক ‘যদি’-‘কিন্তু’র উপর নির্ভর করছে শ্রীলংকা ও আফগানিস্তানের সেমিফাইনাল।
ব্রিজবেন টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় আয়ারল্যান্ড। ব্যাট হাতে নেমে তৃতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। অফ-ফর্মে ভুগতে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার ৩ রান করে আউট হন।
শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে পাওয়া-প্লেতে সাবধানী ছিলেন আরেক ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ ও তিন নম্বরে নামা মিচেল মার্শ। এতে ৬ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৩৮ রান পায় অস্ট্রেলিয়া।
পাওয়ার-প্লে শেষ হবার পর মারমুখী হয়ে উঠেন মার্শ। সপ্তম ওভারে ২টি ছক্কা মারেন তিনি। নবম ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন মার্শ। ২টি করে চার-ছক্কায় ২২ বলে ২৮ রান করেন মার্শ। দ্বিতীয় উইকেটে ফিঞ্চের সাথে ৩৬ বলে ৫২ রান যোগ করেন ।
মার্শের বিদায়ে উইকেটে এসে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তার বিদায়ের পর ১৭ বল কোন চার-ছক্কা পায়নি অস্ট্রেলিয়া।
মার্ক অ্যাডারের করা ১৫তম ওভারে ৫টি ওয়াইড, ১টি ছক্কা ও ৩টি চারে ২৬ রান পায় অস্ট্রেলিয়া। ঐ ওভারের শেষ বলে ছক্কায় ৩৮তম ডেলিভারিতে টি-টোয়েন্টিতে ১৯তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ফিঞ্চ।
১৭তম ওভারে ফিঞ্চকে থামান পেসার ব্যারি ম্যাককার্থি। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৩ রান করেন ফিঞ্চ।
অধিনায়ক ফেরার পর পরের দুই ওভারে মার্কাস স্টয়নিসকে হারিয়ে মাত্র ৭ রান তুলতে পারে অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডারের করা ইনিংসের শেষ ওভারে টিম ডেভিড ও ম্যাথু ওয়েড ৩টি চারে ১৭ রান তোলেন । শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া।
স্টয়নিস ২৫ বলে ৩৫, ডেভিড ১০ বলে ১৫ ও ওয়েড ৩ বলে ৭ রান করেন। আয়ারল্যান্ডের ম্যাককার্থি ২৯ রানে ৩ উইকেট নেন।
১৮০ রানের টার্গেটে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং তোপে খাদের কিনারায় চলে যায় আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম ৯ বলেই ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন দুই ওপেনার অধিনায়ক এন্ডি বলবির্নি ও পল স্টার্লিং। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে আয়ারল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন পেসার প্যাট কামিন্স। ৬ রান করে আউট হন বলবির্নি।
এরপর তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে ২টি করে মোট ৪ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। ম্যাক্সওয়েলের করা তৃতীয় ওভারে স্টার্লিং ১১ ও হ্যারি টেক্টর ৬ রান করে বিদায় নেন। চতুর্থ ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফার-জর্জ ডকরেলকে রানের খাতা খোলার আাগেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখান মিচেল স্টার্ক। ৪ ওভার শেষে ২৫ রানে ৫ উইকেট নেই আইরিশদের। তাতেই ম্যাচ হারের পথে ছিটকে পড়ে আয়ারল্যান্ড।
ষষ্ঠ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন লরকান টাকার ও গ্রেথ ডেলেনি। ৩৩ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন তারা। ডেলেনি ১৪ রানে শিকার করে অস্ট্রেলিয়াকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্টয়নিস।
ডেলেনির ফেরার পর লোয়ার-অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান টাকার। সপ্তম থেকে নবম উইকেট পর্যন্ত ৪৮ বলে ৬৮ রান যোগ করেন টাকার।
১৬তম ওভারে ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি করেন টাকার। এজন্য ৪০ বল খেলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত অন্যপ্রান্ত দিয়ে লোয়ার-অর্ডার ব্যাটাররা ভাল করতে না পারলে ১১ বল বাকী থাকতে ১৩৭ রান গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। ৭১ রানে অপরাজিত থাকেন টাকার। ৪৮ বলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজানো টাকারের ইনিংসটি বৃথা যায়। অস্ট্রেলিয়ার কামিন্স-ম্যাক্সওয়েল-স্টার্ক-জাম্পা ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন ফিঞ্চ।
আগামী ৪ নভেম্বর সুপার টুয়েলভে নিজেদের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া। একই দিন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে আয়ারল্যান্ড।