নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, বন্দরের তুলনায় সিদ্ধিরগঞ্জের ৯টি ওয়ার্ডে আমাদের জায়গা খুবই কম। যার কারণে মাঠ, পার্ক করতে অসুবিধা হয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জের এই লেকটা বিশাল বড়। এই লেকটা করে দেওয়া হলে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সুবিধা হবে।
জাইকা থেকে এই প্রজেক্ট নিয়ে আমরা এ কাজ করছি। যদিও সরকার পাঁচশ কোটির অধিক অর্থায়নে ডিএনডি প্রজেক্টের কাজ করছে। ডিএনডি প্রজেক্টের কাজের সাথে লেকের কাজের সম্পর্ক নেই। এই লেকের কাজটা আমরা সম্পন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে করছি।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) সিদ্ধিরগঞ্জ ৬নং ওয়ার্ডে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ আঞ্চলিক অফিস ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আপনাদের কাছে হয়তো অনেক সময় আসা কম হয়েছে। কিন্তু আপনাদের কাজেই আমি সারাক্ষণ ব্যস্ত ছিলাম। এই ওয়ার্ডে খুব বেশি চাহিদা আছে বলে মনে হয় না। এখন যেটা বলল, একটি পানির কল প্রয়োজন।
চেষ্টা করব ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের বর্ডারে একটা ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে দেওয়ার জন্য। এই পাম্পগুলো বেশি দিনের জন্য স্থায়ী না। ছয় থেকে সাত বছর পর এই পাম্পগুলো নষ্ট হয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন পানির সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।
এ সময় মেয়র আইভী ট্যাক্স প্রসঙ্গে বলেন, অনেকের ভিতরে একটা প্রশ্ন আছে। পানি তো পর্যাপ্ত নাই, তাহলে পানির বিল ধরেছেন কেন? পানি পর্যাপ্ত না হলেও আপনারা সব ওয়ার্ডে পানি পাচ্ছেন। কারণ প্রত্যেকের বাড়িতে ডিপ টিউবওয়েল আছে। ডিপ টিউবওয়েল যে পানি তুলছেন, এটা কিন্তু সরকারের সম্পদ। এই বাংলাদেশে সকলের বাড়ি-ঘর যা আছে সবই সরকারের সম্পদ। এজন্য ভূমি ট্যাক্স সরকারকে দিতে হয়।
আমাকে দেন হোল্ডিং ট্যাক্স, ভূমি অফিসে ভূমি ট্যাক্স দেন। কারণ আমরা এই সরকারের অধীনে আছি। সুতরাং পানির ট্যাক্সও আপনাদের দিতে হবে। ট্যাক্স নিয়ে অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। না বুঝেই এটা করছে।
পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই, যেহেতু বাড়িতে ডিপ টিউবওয়েল আছে, সেটারও একটা নির্দিষ্ট ফি আছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সব জায়গায় তিন শতাংশ ধরেছি। আমি কি কারণে, আমার জনগণের উপরে চাপ সৃষ্টি করব।
যদি সিটি করপোরেশন বিভিন্ন ভাবে লাভবান হয়, তাহলে অবশ্যই জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স কম নিবো।
জনগণকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করব। এই অঞ্চলের বহু কলকারখানা মিল আছে, যারা সঠিকভাবে ট্যাক্স দিচ্ছে না। ট্যাক্স না দিলে আমার কাজ করাটা কষ্ট হয়ে যায়। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, ট্যাক্সের বিষয়ে আপনারা খেয়াল রাখবেন।
তিনি আরো বলেন, সবাই নির্বাচন আসলে ট্যাক্সের কথা বলেন, আপনি এগুলো মওকুফ করে দিবেন। কিন্তু আমি এগুলো পছন্দ করি না। আমার ভিতর বাহির সব এক। আমি ট্যাক্স চাইবোই, আপনারা ট্যাক্স দিবেন। আমি আপনাদের ভালো সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করব।
মেয়র আইভী বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে এমন কোন ওয়ার্ড নাই যেখানে রাস্তাঘাট পাকা হয়নি। জলাবদ্ধতা যেটা হয় সেটা উত্তর দিকে, এখানে আমার কিছু করণীয় নেই। কারণ ওইখানে পাম্পগুলো করা হচ্ছে। সেগুলো করা হলে কিছুটা সমাধান হবে। সম্পন্ন সমাধান হবে না।
যতই পাম্পস্টেশন করা হোক না কেন, বিশাল একটা অঞ্চল মাতুয়াইল, ফতুল্লার পানি টেনে শীতলক্ষ্যায় ফেলা সম্ভব না। ওই নিচু অঞ্চলগুলোকে এই অঞ্চলের মতো উঁচু করতে হবে। উঁচু স্থানে বাড়িঘর করে শীতলক্ষ্যার লেভেলে ড্রেন করতে হবে। এটাও একসময় হয়ে যাবে।
মানুষ এখন উঁচু করেই বাড়িঘর করছে। আমি মনে করি যত টাকা পাম্পে খরচ করা হলো, এই টাকা দিয়ে নিচু অঞ্চলে বালি ভরাট করে দেওয়া হতো, তাহলে জলাবদ্ধতা থেকে অনেকাংশে রক্ষা পেতাম। ভবিষ্যতে হয়তো পরিকল্পনা থাকবে সরকারের, কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
তিনি আরো বলেন, শুধু ৬নং ওয়ার্ড নয়, প্রতিটা ওয়ার্ডে যেখানে যেখানে আমাদের জায়গা আছে সেখানেই কাজ করার চেষ্টা করছি। কবরস্থানের পিছনের পুকুর সংরক্ষণ এবং ঈদগাহ মাঠ করার জন্য আমরা ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। পরবর্তী নির্বাচনে আমি আসি আর যেই আসি না কেন এই সব প্রকল্পের কাজ করতে বাধ্য থাকবে। এই কাজগুলো প্রজেক্টের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ যাকে পছন্দ করবে, তার হাত দিয়ে কাজ গুলো সম্পন্ন হবে। ৬নং ওয়ার্ডের প্রধান রাস্তাটা আমরা করতে পারি নাই। আমরা টেন্ডার দেওয়ার পরেও ডিএনডি কাজ যারা করে তাদের অনুরোধে এই কাজটা বন্ধ রাখছি। কারণ পাম্প চালু হবে। এজন্য এই কাজটা তারা করতে চেয়েছে।
রাস্তা আর খালটা ওনারা করে দিবে। এছাড়া কিন্তু এই ওয়ার্ডে বড় কোন রাস্তার ডিমান্ড নেই। ছোট রাস্তা ড্রেনের কাজ আছে, ওগুলো আমরা করে দিবো। আমার ২৭ টি ওয়ার্ডে ৩৬ জন কাউন্সিলর। আমি কখনো কাউকে ভেদাভেদ করি নাই আর করবো ও না। কে কোন দল করে, কে কার লোক কখনো চিন্তা করি নাই। জনগণকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, নাসিক প্যানেল মেয়র মিনোয়ারা বেগম. প্যানেল মেয়র-২ ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান, ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী ওমর ফারুক, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইস্রাফিল প্রধান, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মাকসুদা মোজাফ্ফর, মনোয়ারা বেগম, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাদেকুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরুল হুদা বাবু, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জহিরুল হক ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা জামান মিয়া, মিজানুর রহমান খাঁন রিপন ও জোবায়ের প্রমুখ।