বিরাট কোহলি বিরস বদনে হেঁটে যাচ্ছেন ড্রেসিংরুমের দিকে। চিপকের গ্যালারিতে ‘কোহলি-কোহলি’ গর্জনের সঙ্গে যেন ঝরছে ৭৮তম সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপও। আর মাত্র ১৫ রানইতো বাকি ছিল, হতে হতেও হলো না! তাতে কী! সেই আক্ষেপও বেশিক্ষণ থাকল না।
কোহলি পারেননি কিন্তু লোকেশ রাহুলতো পারবেন। না তিনিও সেঞ্চুরি করতে পারেননি। এ জন্য রাহুল আক্ষেপ করতে পারেন, ইশ অস্ট্রেলিয়া যদি আর কয়টা রান করতো! তবে, যেটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ছিল, সেই জয় এনে দিয়েছেন অবিশ্বাস্যভাবে, অপরাজিত থেকে। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ৬ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হলো ভারতের।
অজি পেস তোপে ২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছিল ভারত তখন শুরু হয় কোহলি-রাহুলের গল্প। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে অনবদ্য জুটিতে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে জয়ের ভিত গড়ে দেন দুজনে। গড়েন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে ১৬৫ রানের রেকর্ড জুটি। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ১৯৯ রানে অলআউট হয়। তাড়া করতে নেমে ৫২ বল হাতে রেখে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে ভারত।
১১৫ বলে ৯৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন রাহুল। ৮টি চারে ও ২টি ছয়ে সাজানো ছিল তার ইনিংস। আর ৬টি চারে ১১৬ বলে ৮৫ রান করেন কোহলি। দুজনের ব্যাটেই মূলত লেখা হয় অজি বধের কাব্য। কোহলি ফেরার পর ক্রিজে আসেন হার্দিক পান্ডিয়া। রাহুলের সঙ্গে ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ইনিংসের শুরুতে শূন্য রানে ফেরেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ইশান কিষান ও শ্রেয়াস আইয়্যার। অজিদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন জস হ্যাজলউড।
এর আগে, চিপকের মন্থর উইকেট কাজে লাগিয়ে ৪৯.৩ ওভারে ১৯৯ রানে অস্ট্রেলিয়াকে আটকে রাখে ভারত। মিচেল মার্শকে শূন্য রানে ফিরিয়ে শুরুতে উইকেটের সূচনা করেছিলেন জাসপ্রীত বুমরাহ। তবে অজিদের লাগাম টেনে ধরেন স্পিনত্রয়ী রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনজন ৩০ ওভার বোলিং করে দেন মাত্র ১০৪ রান! নেন ৬ উইকেট।
সবচেয়ে ক্ষুরধার ছিলেন জাদেজা। মাত্র ২৮ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন। স্টিভেন স্মিথকে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে মূলত অস্ট্রেলিয়ার পতনের শুরু করেন। ৪১ রানে কুলদীপের শিকার হয়ে ওয়ার্নার ফেরার পর স্মিথের দিকে তাকিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া শিবির। তাকে ৪৬ রানে ফেরান জাদেজা।
এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। মার্নাশ লাবুশানে ২৭ ও গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল ১৫ রান করেন। মাঝে অ্যালেক্স ক্যারি (০) ক্যামেরন গ্রিন (৮) দুই অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। শেষে স্টার্কের ২৮ ও কামিন্সের ১৫ রান কোনমতে দুইশর কাছে নিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়াকে।
ভারতের পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন বুমরাহ। ১টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ ও হার্দিক পান্ডিয়া। ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন লোকেশ রাহুল।