শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

২৬৯ মিনিটের মুগ্ধতা বনাম স্পিন লড়াইয়ে আনন্দের দিন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩, ৩.৪৪ এএম
  • ৬১ বার পড়া হয়েছে

হেলমেট খুলে স্রেফ দুই হাত ওপরে তুললেন। একহাতে ব্যাট। আরেক হাতে হেলমেট। স্মিত হাসি। যা কখনো আড়াল হয় না তার মুখ থেকে। ক্যারিয়ারের ২৯তম সেঞ্চুরি। যেখানে পৌঁছতে কঠিন তপস্যা করতে হয়। অজুত-নিযুত ঘামবিন্দু ঝরাতে হয়। কেন উইলিয়ামসন ২৬৯ মিনিটের মুগ্ধতায় সব করেছেন।

পিকচার পারফেক্ট। কিন্তু উদযাপন একেবারেই সাদামাটা। কোনো খ্যাপাটে আচরণ নেই। স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্বের মানুষগুলো বুঝি এমনই হয়। অথচ তিন অঙ্কের এই মাইলফলক ছোঁয়ার দিনটি কতটা বড় তা হয়তো নিজেও কল্পনা করতে পারছেন না নিউ জিল্যান্ডের কীর্তিমান।

১৯৪৮ সালে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টের আগের ম্যাচে ২৯তম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। যা ছিল ওই সময়ে টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড। ১৯৮৩ সালে ব্র্যাডম্যানের সেই রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছিলেন সুনীল গাভাস্কার। পরে তাকে ছাড়িয়েও যান। সেঞ্চুরির সংখ্যাটা ‘৫১’ তে নিয়ে শৃঙ্গে আছেন শচীন টেন্ডুলকার। পরম্পরায় আভিজাত্যের ফরম্যাটে এক কিংবদন্তির পর আরেকজন ছাড়িয়ে গেছে নিজেদের। উইলিয়ামসন আজ ২৯তম সেঞ্চুরি তুলে সেই পথেই আছে। ছুঁয়েছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে। একই উচ্চতায় আছেন সময়ের আরেক সেরা বিরাট কোহলিও।

তার এই সেঞ্চুরি তোলার দিনে বাংলাদেশকেও কোনোভাবে পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। প্রথম ইনিংসে ৩১০ রান পুঁজি করে বাংলাদেশ এখন লিডের আশায়। উইলিয়ামসনের ১০৪ রানের ইনিংস থামিয়ে বুধবার শেষ বিকেলে চওড়া হাসি দিয়েছে স্বাগতিকরা। কেননা সফরকারীদের স্কোরবোর্ডে রান ৮ উইকেটে ২৬৬। ৪৪ রানে এগিয়ে থাকায় স্বস্তির পরশ বাংলাদেশ শিবিরে। সব মিলিয়ে নয়নাভিরাম স্টেডিয়ামে উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত ব্যাটিং বনাম বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের লড়াইয়ে আনন্দের দিন কেটেছে।

মাঠে কিছু ভুল না করলে লিড আরো বড় হতে পারত। ৬৩ এবং ৭১ রানে উইলিয়ামসনের ক্যাচ ছাড়েন তাইজুল ও শরিফুল। শূন্যরানে ড্যারিল মিচেল উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। আবদনে সাড়া না পাওয়ার পর রিভিউ নেওয়ার সাহসটা করেনি বাংলাদেশ। পরে সেই মিচেল থেমেছেন ৪১ রান। এই তিন সুযোগ হাতছাড়া করা বাদে বাংলাদেশের বোলিংও ছিল দারুণ। ৪ উইকেট নিয়ে তাইজুল দিনের সেরা। এছাড়া নাঈম, মিরাজ, মুমিনুল ও শরিফুল পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।

দিনের শুরুটা ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত। লেজের দুই ব্যাটসম্যান শরিফুল ও তাইজুল আগের দিন ২০ রান যোগ করে যথেষ্ট করেছিলেন। আজ দিনের প্রথম বলে সাউদি ব্যাটসম্যান শরিফুলকে এলডব্লিউ করলে ৩১০ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ছিল নতুন বলে উইকেট নেওয়া। এক পেসার নিয়ে মাঠে নামায় চ্যালেঞ্জটা স্পিনারদের জন্য আরও বেড়ে যায়। শরিফুলের সঙ্গে বোলিংয়ে আসেন মিরাজ। তবে তারা দুজনের কেউই কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারেননি।

তাইজুল ইসলাম বোলিংয়ে এসে ফেরান লাথামকে। তার বল সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দেন লাথাম। তিনে নামেন উইলিয়ামসন। শুরুর কয়েক বলে কেবল টাইমিং মিলিয়ে নেন। এরপর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে থাকেন নিজের সহজাত খেলা। মিরাজের বল ফুলটস বানিয়ে অনড্রাইভে যে চার মেরেছেন তাতে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিমও তালি দিয়েছেন।

এরপর তাইজুলের বল ব্যাকফুটে গিয়ে যেভাবে কাট করেছেন তাতেও ছিল মুগ্ধতা। উইলিয়ামসন একদিকে দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেলে যাচ্ছিলেন অন্যদিকে সতীর্থরা ভুল শটে আউট। ডেভন কনওয়ে মিরাজের বল ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করে সিলি পয়েন্টে ক্যাচ দেন। সেখানে উড়ন্ত শাদাহাত বল জমিয়ে নেন সহজে।

প্রথম সেশনে ২ উইকেট তুলে বাংলাদেশ লড়াইয়ে ছিল। সেই ধার ধরে রাখে দ্বিতীয় সেশনে। বল হাল্কা পুরনো হলে শরিফুল ইসলামকে বোলিংয়ে আনেন শান্ত। ফিরে প্রথম ওভারেই পেয়ে যান হেনরি নিকোলসের উইকেট। শরিফুলের পকেটে ঢুকতে পারত ড্যারিল মিচেলের উইকেটও। কিন্তু রিভিউ না নিয়ে মিচেলকে জীবন দেয় বাংলাদেশ। তবে তাকে বেশিদূর যেতে দেয়নি। ৩ চার ও ১ ছক্কা হাঁকানো মিচেল তাইজুলের বলে এগিয়ে এসে ছক্কা উড়াতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হন।

এরপর নাঈম হাসানের বলে টম ব্লান্ডেল ক্যাচ দেন সোহানের হাতে। সতীর্থদের এই আসা-যাওয়া উইকেটের আরেকপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখলেও উইলিয়ামসন বিচলিত হননি। বরং দায়িত্ব বাড়িয়ে ইনিংস লম্বা করেছেন। ফিফটি তুলেছেন অনায়েসে। জড়তাহীন ব্যাটিং করেছেন। বাংলাদেশে তিন স্পিনার মিরাজ, তাইজুল ও নাঈমকে ফিফটির আগ পযর্ন্ত কোনো সুযোগ দেননি। স্কোরবোর্ড সচল রেখেছেন এক-দুই রানে। বাজে বল ছাড়া বাউন্ডারিও মারেননি। এভাবেই এগিয়ে যায় তার ইনিংস।

তাকে ষষ্ঠ উইকেটে সঙ্গ দেন গ্লেন ফিলিপস। দুজন ১১৩ বলে গড়েন ৭৮ রানের জুটি। এ সময়ে উইলিয়ামসন নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যান, ফিলিপস ফিফটির কাছাকাছি। তাদের জুটি যখন বড় হয়ে উঠছিল তখন শান্ত বোলিংয়ে আনেন পার্ট টাইমার মুমিনুলকে। তাতেই ফেলে সুফল। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান করা ফেলেপস মুমিনুলের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন আলগা শটে।

প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের হারিয়ে একা হয়ে যান উইলিয়ামসন। তাইতো আরও মনোযোগী হয়ে ব্যাটিং করতে থাকেন নব্বইয়ের ঘরে। ৯০ থেকে ১০০ পৌঁছতে ১৮ বল খেলেন। শান্তও এ সময়ে তাকে চাপে রেখেছিল। মিরাজ ও নাঈম দুই প্রান্ত থেকে টাইট বোলিং করেন। লেগ স্টাম্পে দারুণ বলয় সাজিয়ে ফিল্ডিংয়েও দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু সময় নিয়ে উইলিয়ামসন শেষ হাসিটা ঠিকই হেসেছেন।

২৬৯ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ১১ চারে ২৯তম সেঞ্চুরিতে পৌঁছে কোনো উদযাপন না করে বুঝিয়েছেন দায়িত্বটা আরও বড়। কিন্তু নতুন বল নেওয়ার পর তাকে বেশিক্ষণ পাওয়া যায়নি। নতুন বল নেওয়ার পর তাইজুল প্রথম ওভারেই তার উইকেট উপচে ফেলেন। তার ভেতরে ঢোকানো বল ছোবল দিয়ে স্টাম্প ভাঙে। ২৮৯ মিনিটের দারুণ এক ইনিংস থেমে যায় সেখানে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে তিন সেঞ্চুরি ও চার ফিফটি রয়েছে তার। আজকের ইনিংসটি সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যোগ করলো। ১০৪ রান করে উইলিয়ামসন বিদায় নেন মাথা উঁচু করে। শেষ বিকেলে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ইশ শোধীরও উইকেট। তাতে তাইজুলের পকেটে যায় ৪ উইকেট। দ্বাদশ ফাইফারের অপেক্ষায় থাকা তাইজুল প্রয়োজন আরেকটি উইকেট।

উইলিয়ামসনের দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং আর তাইজুলের ঘূর্ণিতে লড়াইটা জমজমাট হয়েছে। সিলেটে দ্বিতীয় দিন শেষে কে এগিয়ে তা বলতে পারবে না কেউ-ই। ব্যাট-বলের লড়াই জমে উঠায়, আনন্দ ছড়ানো দুই দলের অবস্থান ৫০-৫০।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort