শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন

‘মৃত্যুকুপ’ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন জাপানের জয়জয়কার

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৪.৫৭ এএম
  • ১০৯ বার পড়া হয়েছে

খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে রেফারি বাজালেন শেষের বাঁশি। ডাগআউট থেকে পাগলের মতো ছুটে মাঠে আসছেন ফুটবলার-কোচিং স্টাফরা। আর মাঠের ফুটবলাররা ছুটে যান সতীর্থদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভগির জন্য। চলে উল্লাস। গ্যালারিতে আমাবশ্যার চাঁদ পাওয়ার মতো হতভম্ব সমর্থকদের চোখে আনন্দঅশ্রু!

টিকিটাকার দৌরাত্ম থামিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ছিল এশিয়া জায়ান্ট জাপানের রাত। প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ার পরও ২-১ গোলে স্পেনকে হারিয়ে নক আউট পর্বের টিকিট কেটেছে জাপান। স্পেন হারলেও জার্মানির সঙ্গে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শেষ নিশ্চিত করেছে। তাদের এই জয়ে কোস্টারিকাকে ৪-২ গোলে হারিয়েও গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়তে হয়েছে জার্মানিকে।

কাতার বিশ্বকাপে ‘ই’ গ্রুপ ছিল ডেথ গ্রুপ তথা মৃত্যুকূপ। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির সঙ্গে শক্তিশালী স্পেন, সঙ্গে কোস্টারিকার মতো দল। সেই গ্রুপ থেকে জাপান দ্বিতীয় পর্বে যেতে পারবে এমন বিশ্বাস ফুটবল না বুঝা কোন মানুষই হয়তো ভাবেনি।

কিন্তু জাপান ভাবতে বাধ্য করেছে। প্রথম ম্যাচে জার্মানিকে হারিয়ে শুরু, দ্বিতীয় ম্যাচে কোস্টারিকার কাছে হার আর শেষ ম্যাচে স্পেনকে আবার হারানো। জার্মানি-স্পেন দুটি দলকেই হারিয়েছে একই গোল সংখ্যায়। তারা গ্রুপ ২ জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। চার পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্পেন তৃতীয় জার্মানি। গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় সমান পয়েন্ট হলেও স্পেনের ভাগ্যদুয়ার খুলে যায়।

 

দুই জয়ে একটি রেকর্ডও করেছে দ্য সামুরাই ব্লু’রা। তৃতীয় দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে দুই ম্যাচে জিতেছে প্রথমার্ধে পিছিয়ে যাওয়ার পরও। জয়ী দুটি ম্যাচেই প্রথমার্ধে পিছিয়ে ছিল জাপান, দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল দিয়ে তবে মাঠ ছেড়েছে। এর আগে প্রথমার্ধে পিছিয়ে যাওয়ার পরও জিততে পেরেছে ব্রাজিল ১৯৩৮ সালে ও জার্মানি ১৯৭০ সালে।

অথচ ম্যাচের শুরুতে ইঙ্গিত ছিল স্প্যানিশ গোল উৎসবের। ১১ মিনিটে অ্যাজপিলিকুটার ক্রস থেকে নিখুঁত হেডে এগিয়ে দেন স্পেনকে। এর পর একের পর এক আক্রমণে বিপর্যস্ত ছিল জাপান। জাপানের বার লক্ষ্য করে ৫টি শট নিয়েছে স্পেন। যার মধ্যে ২টি অন টার্গেট। আর জাপান দুটি শট নিলেও তা ছিল লক্ষ্যহীন। প্রথমার্ধের ৮১ শতাংশ সময় বল ছিল স্পেনের পায়ে।

বিরতির পর যেন অপশক্তি ভর করে জাপানের উপর। ৩ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল। একেবারে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। ডান দিকে ইতো হেডে বল দেন ডোয়ানের কাছে। ডি বক্সের ডান কোনায় বল পেয়ে একজকে ফাঁকি দিয়ে বুলেট গতির শটে বল জড়ান স্পেনের জালে। অসাধারণ, চোখ ধাঁধানো গোল!

ম্যাচে ফিরে আসে জাপান। সমতা আনে জাপান। প্রথম গোলের উচ্ছ্বাস না থামতেই আসে দ্বিতীয় গোল। তাও ১৮০ সেকেন্ডের মধ্যে। আবার ডান দিকে বল পেয়ে গোল মুখের সামনে দিয়ে বাঁ দিকে ক্রস করেন ডোয়ান। বল গোলবার পেরিয়ে মাঠের লাইন ক্রস করে ফেলেছে প্রায় এই অবস্থায় আবার গোলমুখে পাঠান ইতো। গোলমুখে থাকা তানাকা লাফিয়ে উঠে হাঁটুর স্পর্শে জড়িয়ে দেন জালে।

 

স্প্যানিশদের আবেদনে সাড়া দিয়ে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভার) সহায়তা নেন মাঠের রেফারি। মিনিট দুয়েক পরে সেখান থেকে আসে গোলের সংকেত। বল প্রায় লাইন ক্রস করে ফেলায় গোল নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্কও শুরু হয়েছে। তাতে কি, এই গোলেই যে জাপানের সুর্যোদয় হয়েছে।

ম্যাচে আরও কয়েকটি আক্রমণেরর সুযোগ পেয়েছিল জাপানিরা। তবে ফিনিশিংয়ে অভাবে ব্যবধান বাড়েনি আর। অন্যদিকে মরিয়া স্পেন একের পর এক আক্রমণ করে গেছে। শেষ মিনিট পর্যন্ত তারা লড়েছে। জাপানি ডিফেন্সের সঙ্গে তাদের সামনে দেয়াল হয়ে ছিলেন গোলরক্ষক গন্ডা।

অথচ বল দখলের লড়াই কিংবা মুহুর্মুহু আক্রমণে এগিয়ে ছিল স্পেন। তারা মোটি ১৭টি শট নিয়েছে। ৫টি ছিল অন টার্গেট। গোল হয়েছে ১টি। অন্যদিকে ৯টি শট নেওয়া জাপানের অনটার্গেট ছিল ৩টি। যার মধ্যে দুটিই গোল।

 

স্পেন সব শেষ গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচ হেরেছে ১৯৮২ সালে। অন্যদিকে জাপান ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। এ ছাড়া এশিয়ান জায়ান্টরা তাদের টানা দুই বিশ্বকাপে নকআউটের টিকিট পেয়েছে।

কাতার বিশ্বকাপে ফেবারিট বলতে কোনো কিছু নেই। ট্রফি দাবীদার দলগুলোর মধ্যে একমাত্র ব্রাজিলই হারেনি। হেরেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, হেরেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। নক আউট থেকেই বাদ পড়ে গেছে চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানরা কিংনা র্যাংকিংয়ের দুইয়ে থাকা বেলজিয়াম। কিন্তু জয়জয়কার সামুরাই ব্লুদের, জয়জয়কার জাপানের।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort