শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন

বৃত্ত ভাঙতে ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহদের বিশ্বাস ফেরানোর চ্যালেঞ্জ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১, ৩.৫২ এএম
  • ৩৯৪ বার পড়া হয়েছে

‘টিম ম্যানেজমেন্ট ভালো বলতে পারবে!’- পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এই কথাটি কতবার ব্যবহার করলেন, তা গুণে শেষ করা মুশকিল। টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ তো অধিনায়ক নিজেও। অথচ খেই হারানো বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের কাছে যেন জবাব নেই কিছুর। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে যদি ‘পাস’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারতেন অধিনায়ক, তবে হয়তো সহজ হতো কাজটি।

‘টিম ম্যানেজমেন্ট ভালো বলতে পারবে!’- কথাটি যতবার বলেছেন মাহমুদউল্লাহ, ততবারই যেন মনে হচ্ছিল অদৃশ্য এক তির এসে বিঁধছিল তার বুকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডবের একজন ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বাইশ গজে যত চড়াই-উৎরাই, বিজয়ে বা বিসর্জনে- পাশে পেয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালকে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ সেই সুখের দিন নেই। মাশরাফিকে দিয়ে শুরু। এরপর নানা সময়ে বাকি চারজন মান-অভিমান, চোট বা বিশ্রামের দোহাই দিয়ে অনেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের ইনজুরির কারণে সাকিব আল হাসান নেই। চোটের কারণে ফিরতে পারেননি তামিম ইকবাল। একই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি দলে নেই মুশফিকুর রহিমও। পরের জনের ক্ষেত্রে অবশ্য ‘বাদ’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেন সেই পথ হারা নাবিক, যিনি গন্তব্যকে পৌঁছানোর আগেই হারিয়ে বসেছেন বাকি চার সহযোদ্ধাকে। সব হারিয়ে পাকিস্তান সিরিজের আগে সাংবাদিক বৈঠকে মাহমুদউল্লাহ যেন বোঝাতে চাইলেন- আক্ষেপ আছে, তবে সেটি যেন প্রকাশ করতে নেই।

কিন্তু অভিমান ধরে রাখা সহজ কাজ নয়। পারলেন না মাহমুদউল্লাহও। এক ফাঁকে বলেই বসলেন, ‘যদি আমি কিছু বলতে চাই তাহলে অনেক কিছু বলতে হবে। যেটা অনেক ভেতরের কথা। যাই হোক আমার কাছে মনে হচ্ছে না এটা এখন বলা উচিত।’
মাহমুদউল্লাহর এই ক্ষোভের জায়গাটা অজানা নয় এদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের। বিশ্বকাপে ভরাডুবিতে তছনছ হয়ে গেছে অনেককিছু। ম্যানেজমেন্ট-বোর্ড-ক্রিকেটারদের কাঁদা ছোড়াছুঁড়িতে পরিবর্তন এসেছে অনেক জায়গায়। তবে সেটি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক, সেটি এখনই বলা মুশকিল। এর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে অন্তত পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ অবধি।

২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর এই ফরম্যাটে যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছে টাইগাররা, কোনো ম্যাচেই জয় নেই টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে। এবার সেই ‘দেওয়াল’ ভাঙায় প্রত্যয় ছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। অথচ বাইশ গজে লড়াইটা জমাতে পারেনি বাংলাদেশ দল। সুপার টুয়েলভ পর্বে হার‍, হার‍, হার, হার এবং হার! এছাড়া কোন গল্প লিখতে পারেনি তারা।

বৃত্ত ভাঙতে ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহরা বিশ্বাস হারিয়েছেন সমর্থকদের। গোটা দলের হতশ্রী পারফরম্যান্সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পদচারণের উপায় কই! ফেসবুক, টুইটারের মতো বহুল ব্যবহৃত মাধ্যমগুলো সমার্থকদের বিদ্বেষ আর তিরস্কারে ভরে গেছে। এবার সে হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার পালা মাহমুদল্লাহ রিয়াদের দলের সামনে। এজন্য ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে পেয়েছে টাইগাররা।

এই সিরিজ দিয়েই প্রায় ২০ মাস পর মাঠে দর্শক ফেরাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বিশ্বাস ফেরানোর মিশনের চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ, ‘দর্শকরা অনেকদিন পর মাঠে ফিরছে এটা অনেক ভালো লাগছে। এটা দলের জন্যও অনেক ভালো। সবসময় দর্শকরা আমাদের অনেক সাপোর্ট করেন। আমাদের ক্রিকেট এবং দলের জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমরাও চেষ্টা করব তাদের বিশ্বাসটা আমাদের পারফরম্যান্স দিয়ে অটুট রাখতে।’

তবে কাজটি সহজ নয় মোটেও। ‘বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলছে চাচ্ছি না।’ বলা মাহমুদউল্লাহ পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়বেন একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে। তবুও হারার আগে হারতে নারাজ অধিনায়ক শোনালেন, ‘আমাদের যদি সক্ষমতার কথা বলেন তাহলে আমি বলবো আমার দলের উপর আমার পুরোপুরি ভরসা আছে। তারা সবাই সামর্থ্যবান, এ কারণেই জায়গা পেয়েছে দলে।’

সৌম্য সরকার আর লিটন দাস না থাকায় সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকেই দেখা যাবে নতুন ওপেনিং জুটি। নাঈম শেখের সঙ্গে এই জায়গায় এগিয়ে এখনো টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক না হওয়া সাইফ হাসান। তবে অধিনায়ক ঘুরেফিরে টানলেন দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা নাজমুল হোসেন শান্তর প্রসঙ্গ।

মাহমুদউল্লাহ বলছিলেন, ‘শান্ত টেস্টে ভালো খেলছিল তারপর টি-টোয়েন্টিতে বাদ পড়ে যায়। এরপর এখন দেখা যাচ্ছে সে আবারও টি-টোয়েন্টিতে ফিরেছে। শান্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফরম্যান্স করছিল। টেস্টে ভালো পারফর্ম করছে, বিপিএলে দুইটা শতক আছে। আর ওর অনেক সম্ভাবনা আছে। এখন এটা ওর ব্যাপার যে ও কীভাবে আরও ভালো টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড় হবে।’

উড়িয়ে দেননি সাইফের কথাও, ‘সাইফের ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হবে যে ও এখনো অনেক তরুণ। আর ও দারুণ একজন ব্যাটার। ওর ভেতরে যেকোনো বোলারকে খেলার সামর্থ্য আছে। আমার মনে হয় এটা অনেক ইন্টারেস্টিং হবে ও কীভাবে টি-টোয়েন্টিতে খেলবে। আর আমাদের পুরো দলের বিশ্বাস ও ভালো করবে।’

তবে যে দুজনই ইনিংস শুরু করুক, বাংলাদেশ দলের ভয়ের নাম শাহিন শাহ আফ্রিদি। ইনিংসের শুরুতে নিজের প্রথম স্পেলেই প্রতিপক্ষের টপ অর্ডার ধসিয়ে দেওয়া সুখ্যাতি আছে শাহিনের। বিষয়টি ভাবাচ্ছে বাংলাদেশ দলকেও। মাহমুদউল্লাহ যেমন বললেন, ‘শাহিন শাহ কদের বেশির ভাগ ম্যাচেই দলে বড় ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে নতুন বলে। ওই জিনিসটা আমাদের মাথায় আছে।’

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার দুপুর ২টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচে বোলিং আক্রমণে তিন পেসার নাকি দুটি, সেটা নির্ভর করবে উইকেটের ওপর। সাকিব না থাকায় স্পিন আক্রমণে শেখ মেহেদী হাসান ও নাসুম আহমেদের থাকা এরকম নিশ্চিতই। তিন পেসার খেললে কমে যাবে লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে খেলানোর সম্ভাবনা। এর সবই নির্ভর করছে উইকেটের চরিত্রের ওপর। পাকিস্তান সিরিজে কেমন হবে মিরপুরের উইকেট?

অধিনায়ক ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের ইঙ্গিত দিয়ে বললেন, ‘উইকেট ভালোই মনে হলো। আমি আশা করি এটা ভালো উইকেট হবে। হ্যাঁ, এটা অবশ্যই বিশ্বকাপের পর আমাদের বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এই সিরিজে ভালো ক্রিকেট খেলার এবং সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার জন্য ভালো একটা সুযোগ।’

পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ১২ ম্যাচের ১০টিতে হারা বাংলাদেশের জন্য বিশ্বাস ফেরানোর চ্যালেঞ্জটা একেবারেই সহজ নয়। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে এটা এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের যে মানসিক অবস্থা, দেশের ক্রিকেটে যে গুমোট আবহাওয়া, সবকিছুর সমাধান কেবল মিলতে পারে মাঠের ক্রিকেটেই। জয়ই এনে দিতে পারে এর উত্তম সমাধান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort