শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে বিশ্বকাপে চোখ বাংলাদেশের

  • আপডেট সময় বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪.১৬ এএম
  • ২৩৮ বার পড়া হয়েছে

প্রতিযোগিতা ক্রীড়াঙ্গনের সবটা জুড়েই, ক্রিকেটও এর বাইরে নয়। বাইশ গজের এই প্রতিযোগিতার শেষ কোথায়? সেটা হয়তো খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে সফলতার যেমন সিঁড়ি আছে, তেমনি ম্যাচ, সিরিজ, টুর্নামেন্টের পর নিশ্চয়ই বিশ্ব আসরের শিরোপাটা নিজেদের করে ইচ্ছে থাকে সবার। আগামী কয়েক বছরে এই সুযোগ আসবে বারবার। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাদ দিলেও চলতি বছরের পর আগামী বছরেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসবে। চলতি বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ মিশনে বুধবার মাঠে নামবে বাংলাদেশ।

সফলতার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে ৪-১ ব্যবধানে। ওই স্মৃতি এখনো টাটকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের। এবার মিশন নিউজিল্যান্ড। এবারও সমান পাঁচটি কুড়ি ওভারের ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। প্রথমটি শুরু হচ্ছে আগামীকাল (বুধবার), বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায়।

এই সিরিজ দিয়ে দুটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করছে বাংলাদেশ দল। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসবে মধ্যপ্রাচ্যে। ওমান আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আসর শুরু আগামী ১৭ অক্টোবর। শুরুতে অবশ্য প্রথম পর্ব পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে। নিয়ম অনুযায়ী র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটের বাইরে থাকায় এই পর্বে অংশ নিতে হবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের।

আসন্ন বিশ্বকাপের আগে আর কোনও আন্তর্জাতিক সিরিজ নেই বাংলাদেশ দলের। এমনকি আসন্ন ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড বা সমমানের কোনও দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির সূচি নেই টাইগারদের। ফলে আসন্ন বিশ্বকাপ তো বটেই, সঙ্গে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতেও নেমে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

২০২২ বিশ্বকাপ সরাসরি খেলতে এবারও র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা ৮-এর নিয়ম বহাল রেখেছে আইসিসি। সে হিসেবে বর্তমান র‍্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ দলের সামনে বড় সুযোগ ঘরের মাঠের ফায়দা নিয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাওয়ার। ৫ ম্যাচের সিরিজে ব্ল্যাক ক্যাপদের ক্লিন সুইপ করতে পারলে টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের পাঁচে উঠে আসবে টাইগাররা। টপকে যাবে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় দলকে।

৪-১ বা ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতলে ছয়ে অবস্থান করবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এই সুযোগটি নিশ্চয়ই হেলায় হারাতে চাইবেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। তবে এজন্য পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ, চ্যালেঞ্জ উতরাতে হবে বাংলাদেশ দলকে। যে লক্ষ্য পূরণের বড় মঞ্চ হিসেবে প্রস্তুত মিরপুরের শের-ই-বাংলা।

তবে অধিনায়ক মাহিমুদউল্লাহ রিয়াদ বলছেন, ‘আমি সব সময় মনে করি, র‌্যাঙ্কিং অনেক সময় দলের অবস্থার পরিষ্কার ছবি দেখায় না। আপনি যদি ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেন, ধারাবাহিকতা থাকলে নিশ্চিত ভাবেই আপনি এগিয়ে যাবেন।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ দলে দেখা দিয়েছে মধুর সমস্যা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ছাড়াই ঘোষিত ১৯ সদস্যের দলে ওপেনার তিনজন। তবে স্বস্তি মেলছে না এখনো। অজিদের বিপক্ষে একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশ সিরিজ জিতলেও ওপেনিং জুটির সমস্যা ছিল প্রকট। সর্বোচ্চ ৪২ রান এসেছিল পঞ্চম ম্যাচে। এই ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন নাঈম শেখ আর মেহেদী হাসান। নাঈম-সৌম্যর বাকি ৪ ম্যাচে ওপেনিং জুটি থেকে আসে যথাক্রমে ১৫, ৯, ৩, ও ২৪ রান।

লিটন ফেরায় ওপেনিং নিয়ে এত আলোচনা, স্বস্তি দিচ্ছে না তার পরিসংখ্যানও। নিজের খেলা সবশেষ ১৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছেন মোটে ২৫৫ রান। দীর্ঘদিন ধরে রানের দেখা পাচ্ছেন না সাকিব আল হাসানও। আসন্ন বিশ্বকাপের আগে ছন্দে ফেরার জন্য এই সিরিজটি তাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

শেখ মেহেদী হাসান ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। তবে আন্তর্জাতিক আঙিনায় এখনো নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ১৪টি টি-টোয়েন্টিতে নামের পাশে মোটে ১১৯ রান জমা করতে পেরেছেন মেহেদী। ১৩ গড়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৩ রান। স্ট্রাইক রেটও টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়, ১০০ এর নিচে। তরুণ শামীম পাটোয়ারী অভিষেকে আলো ছড়ালেও অস্ট্রেলিয়া সিরিজে সামর্থ্যর ছাপ রাখতে পারেননি।

অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বোলিং বিভাগ বাজিমাত করেছে। মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসান, নাসুম আহমেদরা আলো ছড়িয়েছেন বটে, তবে সেখানে উইকেটের সমর্থনও নেহায়েত কম নয়! বিশ্বকাপের মঞ্চে টাইগারদের খেলতে হবে স্পোর্টিং উইকেটে, সেখানে সাইফউদ্দিনকে দিতে হবে বাড়তি পরীক্ষা। দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ পাচ্ছেন না তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেনরা। বড় মঞ্চে গিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন তো তারা?

উন্নতির যে জায়গা আছে সেটি স্পষ্ট মাহমুদউল্লাহর কথায়, ‘শরিফুল চারটা ম্যাচেই ভালো বোলিং করেছে। মোস্তাফিজ অসাধারণ। তাসকিন দারুন বোলিং করেছে। রুবেল আছে। সাইফউদ্দিদন সুযোগ পেয়েই কাজে লাগিয়েছে। আমদের মধ্যে দারুণ প্রতিযোগিতা চলছে। ব্যাটিং-বোলিং, ফিল্ডিং সব বিভাগেই উন্নতির সুযোগ আছে। বোলিংয়ে আত্মবিশ্বাস আর জয়ের অভ্যাস গড়ে তোলাই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

বিশ্বকাপের প্রস্তুতির মঞ্চ প্রস্তুত, এজন্য দরকার নিজেদের মেলে ধরা। যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ পাচ্ছে নিউজিল্যান্ডকে। প্রায় ৮ বছর পর টাইগার ডেরায় পা রেখেছে কিউইরা। তবে এবার তারুণ্যনির্ভর এক দল পাঠিয়েছে তারা। যেখানে সবচেয়ে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। অভিজ্ঞ হয়েও তিনি সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ৩৬টি। দলে ফিরেছেন দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর।

নিউজিল্যান্ড দলের নেতৃত্ব দেবেন টম লাথাম। প্রায় ৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তার, তবে এই ফরম্যাটে তিনি ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১৩টি। সবশেষ ৪৫ মাস টি-টোয়েন্টির দলে সুযোগই পাননি তিনি। একই অবস্থা হেনরি নিকোলস, টম ব্লান্ডেল, ম্যাট হেনরিদের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অনিয়মিত তারা। ১৬ সদস্যের দলে আন্তর্জাতিক অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন রাচিন রবীন্দ্র, কোল ম্যাককনচি ও বেন সিয়ার্স।

বাংলাদেশ সফরে আসার আগে নিউজিল্যান্ড দল বেশ ভালোভাবে জেনে এসেছে এখানে স্পিন দিয়ে লড়তে হবে তাদের। অথচ স্কোয়াডে বিশেষায়িত স্পিনার বলতে কেবল এজাজ প্যাটেল। সঙ্গে টুকটাক হাত ঘোরাতে পারেন কোল ম্যাককনচি, উইল ইয়াং ও রাচিন রবীন্দ্র (বাঁহাতি স্পিনার)। টম ব্লান্ডেল মূলত উইকেটরক্ষক তবে কালে ভদ্রে ডানহাতি অফ ব্রেকও করেন।

বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এযাবৎ টি-টোয়েন্টি খেলেছে ১০টি। তবে এখনো জয়ের স্বাদ পাওয়া হয়নি। টাইগার সমর্থকরা অপেক্ষায় থাকবেন, এবার সে খরা কাটানোর সঙ্গে সিরিজ জয়ের আক্ষেপটাও মিটবে নিশ্চয়ই। সঙ্গে দুটি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বের শুরুটাও মন মতো হবে বাংলাদেশের।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort