শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন

ইসলামই পারে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করতে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১, ৪.৫২ এএম
  • ৫১৬ বার পড়া হয়েছে

বর্তমানে পৃথিবীতে স্বার্থসিদ্ধি, স্বার্থচিন্তা, অবিচার ও বাড়াবাড়ি ব্যাপকতা লাভ করেছে। ফলে শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবতার নামে মানুষকে প্রতারিত, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অবিচার করা হয় এবং পৃথিবীর চিরন্তন নিয়ম, বিধি ও ব্যাখ্যা পরিহার করে নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়। এটা মূলত অন্যায়, অবিচার ও নিজ স্রষ্টার অবাধ্যতার পথ। মানবজাতি ও মানবসভ্যতাকে রক্ষার জন্য এই রীতি ও প্রবণতা পরিবর্তন করে মানবজাতির সামনে সঠিক ও কল্যাণের পথ তুলে ধরা প্রয়োজন। এটাই ইসলামের শিক্ষা। ইসলামের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যই হলো মানবজাতিকে সঠিক পথে নিয়ে আসা, কল্যাণের পথে পরিচালনা করা; সর্বোপরি মানবসভ্যতাকে রক্ষা করা। ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধ হলো, মানবজীবনে প্রকৃত কল্যাণ ও সাফল্য পরকালীন জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পরকালীন জীবনের মুক্তি ও সাফল্য অর্জনের মাধ্যম এই পার্থিব জীবন।

মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সাফল্য বোঝার জন্য আল্লাহ দুটি মাধ্যম দান করেছেন। এক. মানুষের বুদ্ধি ও বিবেক। মানুষ যদি সুস্থ প্রকৃতির অধিকারী হয় তবে সে জীবনের ভালো-মন্দ নিজেই অনুধাবন করতে পারবে। দুই. ওহি বা আল্লাহর প্রত্যাদেশ। আল্লাহ ফেরেশতা বা অন্য কোনো মাধ্যমে নিজের নির্বাচিত বান্দাদের মানবজীবনের ভালো ও মন্দের দিশা দিয়েছেন। যাদের নবী ও রাসুল বলা হয়। তাদের এমন বিষয়ের জ্ঞান দান করা হয়, যার ভালো-মন্দ নির্ধারণ শুধু মানবীয় জ্ঞান-বুদ্ধির দ্বারা সম্ভব নয়। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) মানবজীবনের কল্যাণ ও অকল্যাণের ভিত্তি যে দ্বিন ও শরিয়তের ওপর তা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন, নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে দ্বিন শুধু ইবাদতের নাম নয়; বরং তা জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইসলাম মানবজীবনের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করে।

ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ নিজেকে আল্লাহর সামনে সমর্পণ করা। কোনো ব্যক্তি তখনই মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হবে, যখন সে তার ভেতর ও বাহির, স্বভাব ও কর্মকাণ্ড সব কিছু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিবেদন করবে। স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহ তাআলা মানুষের স্বভাব, চরিত্র, প্রকৃতি, যোগ্যতা ও প্রয়োজন সব কিছুই জানেন। ফলে তিনি মানুষের জন্য যে জীবনবিধান ও জীবনপ্রণালী নির্ধারণ করেছেন তা মানুষের প্রয়োজন, সামর্থ্য ও যোগ্যতার অনুকূল। শুধু তা-ই নয়, তিনি এ আনুগত্যের বিপরীতে তাদের জন্য রেখেছেন নিশ্চিত কল্যাণ ও সাফল্য।

একজন মুমিন শুধু নিজের সাফল্যতেই সন্তুষ্ট থাকে না; বরং সে অন্যদেরও আল্লাহর আনুগত্যের পথে আনার চেষ্টা করে, যাতে তারাও আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণ লাভ করতে পারে। মানুষকে আল্লাহর পথে আনার একটি উপায় হলো, যারা আল্লাহ ও তাঁর দ্বিন সম্পর্কে ধারণা রাখে না, তাদের ভালোবাসা ও মমত্বের সঙ্গে তা অবগত করানো এবং বোঝানো। এর নাম দাওয়াত। প্রতিটি মুসলিম আপন অঙ্গনে একজন ইসলামপ্রচারক বা দাঈর ভূমিকা পালন করে। মুসলিমসমাজের একটি বড় অংশকে দাওয়াতের কাজে আত্মনিয়োগ করতে বলা হয়েছে। দ্বিনের পথে মানুষকে আহ্বান করা বান্দার কাছে আল্লাহর অন্যতম প্রত্যাশাও বটে। কেননা পরম দয়ালু আল্লাহ মানুষের কল্যাণই দেখতে চান। তবে দ্বিন প্রচারে কঠোরতা ও বাড়াবাড়ি পরিহারযোগ্য। জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করার নির্দেশ এসেছে পবিত্র কোরআনে। যখন কোনো সমাজে আল্লাহর পথে ও কল্যাণের প্রতি আহ্বানের কাজ সবাই ছেড়ে দেয়, সে সমাজে বিশৃঙ্খলা, অস্থিরতা ও হতাশা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ইতিহাস সাক্ষী, যে সমাজে দ্বিনি দাওয়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে সে সমাজেই আল্লাহর অসন্তুষ্টির প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে—তা হয়েছে বিপদ-আপদ ও ধ্বংসাত্মক প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে।

মায়া-মমতা, ভালোবাসা, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে মানুষকে দ্বিনি দাওয়াত প্রদানের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে আল্লাহ তাআলা সে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে যৌক্তিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু শর্ত হলো সে পদক্ষেপগুলো মানবিক দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, মানবকল্যাণে পরিচালিত হতে হবে এবং তার সূচনা হবে অপারগতার সময় থেকে; যখন অন্যায় প্রতিরোধে কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। যদি কঠোরতা সঠিক পথে ও উপায়ে হয় এবং তার উদ্দেশ্য আত্মরক্ষা ও মানবতাবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করা হয়, তবে তা মানুষের সৌভাগ্য অর্জনেরই অন্যতম মাধ্যম। তবে মনে রাখতে হবে, ইসলাম কারো জীবনধারা জোরপূর্বক পরিবর্তন করার অনুমতি দেয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘দ্বিনের ব্যাপারে জোর-জবরদস্তি নেই; সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৬)

দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান বিশ্বে যেসব স্থানে শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে তার বেশির ভাগই করা হচ্ছে নিজের বা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রবৃত্তিতাড়িত হয়ে। মানবকল্যাণ, মানবিকতা ও মনুষ্যত্ব সেখানে নেই বললেই চলে। নিজের সামান্য স্বার্থরক্ষা, নিছক সন্দেহ অথবা ভিত্তিহীন ভয়ের কারণে লাখ লাখ মানুষের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, তাদের ঘরছাড়া করা হচ্ছে, বসতভূমি থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে। কেউ আবাসভূমি ত্যাগ করতে না চাইলে তাকে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বে বিশৃঙ্খলা ও অবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ছে, মানুষ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, আস্থা ও ভালোবাসার পরিবর্তে সন্দেহ ও বিদ্বেষ জায়গা করে নিচ্ছে। এক কথায় পুরো মানবসভ্যতাই হুমকির মুখে পড়ছে। মানবজাতির এই ক্রান্তিকালে মুসলিম জাতিকেই এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহ তাদের শান্তি, কল্যাণ, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের যে অমীয় সুধা দান করেছেন তা যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারলেই মানবসভ্যতা ও মানবজাতি রক্ষা পাবে। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort