পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রোহিত শর্মা ও প্যাট কামিন্স। মাঝে ১১ কিলোগ্রাম ওজনের শিরোপা। যার জন্য তাদের দুজনের লড়াই। দুই দেশের লড়াই। হাজার, লক্ষ, কোটি…অযুত-নিযুত সমর্থকদের লড়াই।
আহমেদাবাদের প্রসিদ্ধ আদালাজ স্টেপওয়েলে দুজনের পথ মিলিয়ে দিয়েছে আইসিসি, অফিসিয়াল ফটোসেশনে। শহর থেকে ত্রিশ মিনিটের দূরত্বে ঐতিহাসিক স্থাপনায় গিয়ে ট্রফি হাতে হাসিমুখে ছবি তুলেছেন ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। ম্যাচ বল-ব্যাটে অটোগ্রাফসহ তারা কত কিছু করলেন একসঙ্গে। কিন্তু ময়দানী লড়াইয়ে দুজনের পথ বেঁকে গেছে দু’দিকে।
বিশ্বকাপের ফাইনালের ওই শিরোপা যুদ্ধে তারা একে অপরের বিপক্ষে লড়বে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এক সময়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছিল সবচেয়ে বড়। ধারণক্ষমতা ছিল ১ লাখ। ২০১৫ সালে গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এই আহমেদাবাদের স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু করে। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইচ্ছায় শুরু হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামের কর্মযজ্ঞ। ৩৮ মাসের লম্বা সময়, ৩৬০০ শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রম, অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকা-চায়নার বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধান এবং ৮০০ কোটি রূপির ক্রিকেট রাজ্য নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। যার ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৩২ হাজার।
এমন বিশাল ক্রিকেট রাজ্যে যখন স্বাগতিক ভারত মাঠে নামবে তখন ধরে নেওয়াই উচিত, গ্যালারি রূপ নিবে নীল সমুদ্রে। বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের জার্সিতে ভরে যাবে গ্যালারি। বন্দে মাতারাম, চাক দে ইন্ডিয়া স্লোগানে গমগম করবে গোটা স্টেডিয়াম। ১ লাখ ৩২ হাজারের কতজন অস্ট্রেলিয়ার সমর্থক থাকবেন? উত্তরটা অনুমান করে নেওয়াই ভালো, হাতে গোনা কয়েকশ কিংবা হাজার খানেক। বাকিরা টিম ইন্ডিয়ার হয়েই গলা ফাটাবে।
এমন ভরা আয়োজনে, ১ লাখ ৩২ দর্শকের (পড়ুন প্রতিপক্ষ) সামনে ফাইনালের চাপ নেওয়া বিশাল কিছু। তবে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক কামিন্স এই উৎসবকে থামিয়ে দিতে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তাইতো ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, ‘আমি মনে করি, আপনাকে এটা (দর্শকের চাপ) সামলাতে হবে। নিশ্চিত করেই দর্শক থাকবে একপাক্ষিক। কিন্তু খেলায় তো এমন বিপুলসংখ্যক সমর্থকদের চুপ করিয়ে দেওয়া হবে তৃপ্তিদায়ক। আমাদের আগামীকালের লক্ষ্য এটাই।’
ভারতে নিয়মিত ম্যাচ খেলা হয় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের। গত মার্চেই ভারতের বিপক্ষে এই মাঠে টেস্ট খেলেছিল তারা। যেখানে দর্শকদের উপস্থিতি ছিল ১ লাখেরও বেশি। এছাড়া অজি দলের একাধিক ক্রিকেটারের আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা আগামীকালের ম্যাচে কাজে লাগবে বলেই বিশ্বাস করেন কামিন্স, ‘আমরা ভারতে প্রচুর ম্যাচ খেলেছি। দর্শকের গর্জন তাই নতুন কিছু নয়। হ্যাঁ, এবারের মাত্রা হয়তো আগের যে কোনো বারের চেয়ে বেশি থাকবে। তবে এটা আমাদের জন্য একেবারে অজানা নয়। সবাই এগুলো একটু ভিন্নভাবে সামলায়। ডেভি (ওয়ার্নার) হয়তো মাঠে নাচে এবং দর্শকের মন জয় করার চেষ্টা করে। অনেকেই নিজেদের মতো খোলসে থাকে। সবারই ধরন আছে। ভালো কিছু হবে।’
সংস্কারের পর নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম এখনও ফুলহাউজ হয়নি। সবশেষ আইপিএলের ফাইনালে দর্শক হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫৫৬ জন। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সবচেয়ে বেশি দর্শক উপস্থিতি জায়গা পেয়ে গেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকডর্সে। এবার বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষা। কেননা আয়োজকরা বলছে, স্টেডিয়ামের সব টিকিট বিক্রি হয়েছে। তাতে বোঝা যাচ্ছে রোহিত-বিরাটদের জন্য বিরাট ঢল নামবে এই স্টেডিয়ামে।
বিশ্বকাপ জিততে হলে, শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেতে হলে এবং বিশ্বের সেরা দল হতে হলে এই চ্যালেঞ্জগুলো উতরাতে হবে বলেই মনে করছেন কামিন্স, ‘এই চ্যালেঞ্জের সবটুকু, ফাইনালের সব অংশই আসলে আলিঙ্গন করে নিতে হবে। জানি, ফাইনাল ঘিরে অনেক কোলাহল থাকবে, লোকের অনেক কৌতূহল। তবে আমাদেকে কোনোভাবেই তাতে ভেসে গেলে চলবে না। মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে, (চ্যালেঞ্জ) ভালোবাসতে হবে এবং এটা মনে রাখতে হবে, যা কিছুই হোক, সব ঠিক আছে। কিন্তু দিনটা আমাদের শেষ করতে হবে কোনো আক্ষেপ না রেখে।’