নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে প্রকাশ্যে হকার জুবায়েরকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে স্বজনরা।
এই ঘটনায় জড়িত একজন ছাড়া বাকিদের গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশও করেন তারা। হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হকার নেতা আসাদুল ইসলাম ওরফে হকার আসাদসহ সকল আসামির গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) বেলা ১২টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন নিহত জুবায়েরের স্বজনরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহত জুবায়েরের মা মুক্তা বেগম, বাবা আমজাদ হোসেন, দাদা মিজানুর রহমান, জ্যাঠা মো. আনোয়ার, চাচা মো. জামিল, ফুফু শারমিন আক্তার ময়না প্রমুখ। এর আগে চাষাঢ়ায় বঙ্গবন্ধু সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। সড়কে মিছিলও করে বিক্ষুব্দ স্বজনরা।
নিহত জুবায়েরের মা মুক্তা বেগম বলেন, মাত্র চার আঙ্গুল জায়গা নিয়ে হাসানের সাথে আমার ছেলের তর্ক হয়। তখন বলাকা পাম্পের সামনে এনে আমার ছেলেকে চড়-থাপ্পর মারে হাসান।
সে সময় ইকবাল, সায়মন, সানি, রাসেল ওরা সবাই মিলে পেটে পার (ছুরিকাঘাত) দেয়। একপর্যায়ে আমার ছেলের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে সায়মন। আমি এসব জানতাম না কিছু।
খবর পেয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে গেলে ওর সাথে একজন থাকে তার কাছ থেকে শুনেছি। তখন ডাক্তাররা ঢাকা মেডিকেলে নিতে বলে। ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে আমার ছেলেক সেখান ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। একটাই দাবি, আমার ১৭ বছরের ছেলেকে ওরা দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে মারছে। কেউ ধরে নাই।
ওর দোকানের চাকরি যে করে সাদেক, ইকবাল, শুক্কুর অনেকেই ছিলো কিন্তু কেউই ধরে নাই। মামলার জন্যে ১৪ তারিখ রাত ২টা বাজে প্রশাসনের কাছে গেছি কিন্তু তারা আমার মামলা নিয়েছে ৪টা বাজে। তখন ৯ জনের নাম আর অজ্ঞাত ৫ জনের নামে মামলা করি।
আসাদের হুকুমে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রধান আসামি ইকবালও আসাদের শ্যালক। আসাদ ওদের বলে দিয়েছিল, যদি কেউ তর্কাতর্কি করে তাহলে তারা মেরে ফেলবে। এটা আসাদের অর্ডার ছিল।
সেই কবে র্যাব বরিশাল থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করে আনলো তারপর এ পর্যন্ত তদন্ত অফিসার কোনো কাজই করে নাই। আমি ফোন দেই উনি ফোন রিসিভ করে না। খালি উনি বলে নির্বাচন যাক আমরা ১৩ তারিখ নামবো। এ পর্যন্ত উনি আমাকে কোনো ফোনই দেয় নাই। দিনে ১০ বার ফোন দেই উনি ১ বার ধরে বলে আপা ব্যবস্থা করতাছি।
তিনি আরও বলেন, মেইন হচ্ছে সাদেক, শুক্কুর ওরা এই জায়গার মালিক। ওরা গিয়ে স্যারের সাথে যোগাযোগ করে। ওরা নিজেরাই আমাকে বলে স্যারের কাছে গিয়ে দিনে হাজিরা দেই দুই-তিন বার।
তাহলে স্যারে ওদের কাছ থেকে কি তথ্য নিতেছে? স্যারের কাছে যদি যাই তাহলে উনি বলে কিছু তথ্য আনছেন? আমি কোনখান থেইক্কা তথ্য আনমু? আমি বাদী হয়ে মামলা করছি। আমরা একমাত্র ছেলে গেছে গা, আমি যানি একমাত্র আমার ভিতরে কি হইতাছে?
আমার মনের অবস্থা কি তা একমাত্র আমি আর আল্লাহ জানে। ওনাদের কাছে যদি আমার তথ্যই নিয়ে যাওয়া লাগে তাহলে ওনারা কি করতাছে? আমার দাবি একটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই এমপি শামীম ওসমানের কাছে আর জেলা প্রশাসকের কাছে আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এর আগে সকালে হকার জুবায়ের হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। মিছিলটি প্রেস ক্লাব থেকে শুরু নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে পুনরায় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় তারা বেশ কিছুক্ষন সময় বলাকা পাম্প সংলগ্ন সড়কটি অবরোধ করে রাখে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় চাষাঢ়া সাধু পৌলের গীর্জার সামনে ছুরিকাঘাত করে পিটিয়ে হত্যা করা হয় জুবায়েরকে। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি ইকবালকে বরিশালের উজিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব এর একটি দল। ওই মামলায় এজাহারনামীয় ৯ জন ও অজ্ঞাত আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের মা।