সবাই পারফেক্ট হলে দুনিয়াতে অশান্তি থাকত না বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। তিনি বলেন, আমরা কেউ পারফেক্ট না। সবারা মধ্যে কিছু না কিছু সমস্যা আছেই। নারায়ণগঞ্জে (শহরের টানবাজারে) নিষিদ্ধ পল্লী উচ্ছেদ করেছিলাম। পরে পূর্ণবাসনও করা হয়েছে।
সেই নিষিদ্ধ পল্লী উচ্ছেদের আগে কাবা শরীফ গিয়ে শপথ করেছিলাম যে ওই নিষিদ্ধ পল্লীটি উচ্ছেদ করব। আপাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) জানালাম। বললাম বাধা আসবে। বাঁধা আসলো। ভাবতেও পারবেন না।
ওই যে টিভিতে কিছু কিছু সুন্দর সুন্দর চেহারা খুব ভালো ভালো কথা বলে। সেই সুশীলদের একটা অংশ ওই নিষিদ্ধ পল্লীতে জড়িত ছিল। তারা আর্থিকভাবে লাভবান ছিল ওই নিষিদ্ধ পল্লী থেকে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে জেলা পুলিশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, মাদক ব্যবসা কারা করে। আমরা কিন্তু সবাই তাদের চিনি। মাঝ্য মধ্যে তারাই আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে। আর সুশীল সমাজ সেজে থাকে। একটি মাদক কত ভয়ংকর হতে পারে যে মাদকের টাকার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে ঐশী মাদকাসক্ত হয়ে তারা বাবা মাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের ঘটনা।
ঐশি তো মাদকাসক্ত ছিল। সে সুস্থ ছিল না। কিন্তু ওই মাদক কে ঐশিদের হাতে ধরিয়ে দিল। তারাই হচ্ছে প্রকৃত ইবলিশ। মাদক ব্যবসায়িরা মাদক বিক্রি করে এক একটি পরিবারের মধ্যে জাহান্নামের পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
তিনি আরও বলেন, এই নারায়ণগঞ্জে একটা সময় ফেনসিডিল ক্লাব ছিল। প্রতিদিনি ৩০ হাজার বোতল ফেনসিডিল বিক্রি হতো। বিরুদ্ধে নামলাম। রাতের বেলা চাঁদর দিয়ে মুখ ঢেকে বের হয়ে মাদক ব্যবসায়িদের ধরতে লাগলাম। আমাকে না চিনতে পেরে গুলি করতে চেয়েছিল মাদক ব্যবসায়িরা। কিন্তু যেই মুখ থেকে চাঁদর সরালাম, পালিয়ে গেল।
সেই সময় তৎকালিন আইজিপি আমাকে বলেছিলেন, সকল মাদক ব্যবসায়িরা একত্রে হয়েছে আপনাকে হত্যা করবে। আপনি আর বের হবেন না। আমি শুনিনি। আমি মাদকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ শহরের আনাচে কানাচে কাজ করেছি।
যদি সমূলে এ ই মাদকের উৎপাটন করতে চান তাহলে এলাকাভিক্তিক পঞ্চায়েত কমিটি গঠন করুন। আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাদেকর প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, মাদকের সাথে অর্থ জড়িয়ে আছে, তাই মাদক নিয়ন্ত্রণ অনেক বড় সমস্যা। তার উপর আইনও দূর্বল। অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে পাঠিয়েছে।
কিন্তু মাত্র ৪-৫ দিন পরেই ছাড়া পেয়ে গেছে। এখানে পুলিশেরও কিছু করার থাকে না। মাদক আইন সংশোধন করা জরুরী। মাদক নিয়ন্ত্রণের আইনও যদি কঠোর করা হয়। তাহলে নারী নির্যাতনের মতোই এই অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হয়ে উপিস্থত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, র্যাব-১১ অধিনায়ক (সিইও) তানভীর মাহমুদ পাশা, জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা। অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাবেক সভাপতি ডা. শাহ নেওয়াজ চৌধুরী, কমিউনিটি পুলিশং জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কাওসার আহাম্মেদ পলাশ, অফিস সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সোনারগাঁও উপজেলার চেয়ারম্যান এড. শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শওকত আলী, ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন, ফতুল্লা কমিউনিটি পুলিশিং সভাপতি মোস্তফা কামাল, বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন মো. মাহাবুব রহমান বাবুল প্রমুখ।
এরআগে জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্যদের অংশগ্রহণে বর্নাঢ্য র্যালী অনুষ্ঠিত হয়।