সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জে নাসিক ৩নংওয়ার্ডে বিভিন্ন স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল, চাঁদাবাজি এবং আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের যোগসাজশের কারণে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ৩নং ওয়ার্ডের বাগমারার বিএনপির নেতা আকবর হোসেন ও তার ছেলে শাহাদাৎ হোসেন রনির বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের ফিরিস্তি জানিয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি সেখানকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।
আকবর ও তার ছেলে রনির রোষানলে পড়েছে বৃহৎ রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আল-আমীন গার্মেন্টসহ সানারপারের সিকোটেক্স, লিথি গার্মেন্টস। প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলেন, আমরা ব্যবসায়ী। আমাদের পরিবার কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। বিএনপি নেতা আকবর ও তার ছেলের বাহিনী প্রতিটি গার্মেন্টস থেকে চাঁদা চেয়েছেন। চাদাঁ না দেওয়ার কারণে সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক ওভার ব্রিজের নিচ থেকে আল-আমীন গার্মেন্টসের ড্রাইভার ও ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার হামজাকে জিম্মি করে ৪ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী আকবর ও তার ছেলে রনি। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ব্যবসায়ী এম এম শামসি একটি জিডি করেন যার নং-৩১৭ (তারিখ ৪/০৯/২০২৪) ইং।
এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি একটি খাস জমিতে প্রস্তাবিত ঈদগাহ ও কবরস্থানের যায়গা দখল করে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের নামে একটি মডেল স্কুলের ব্যানার লাগায় আকবর ও তার ছেলের বাহিনী। এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করতে সিদ্ধিরগঞ্জের ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আলোচিত সাতখুন মামলার আসামী শাহজালাল বাদলের সকল অপকর্মের হোতা, অয়ন ওসমান ও শাহ নিজামের অর্থযোগান দাতা ভূমিদস্যু ও যুবলীগ নেতা কোটিপতি শাহজাহান সাজুকে তাদের দলে নেন আকবর। এছাড়াও আরেকটি জমি দখলে গেলে জমির মালিকদের সাথে তাদের মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে ভুক্তভোগীরা আকবর ও তার ছেলে রনির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জের ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আলোচিত সাতখুন মামলার আসামী শাহজালাল বাদল আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এলাকার বাহিরে অবস্থান নিলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি নিজ বাড়িতে আসেন। পরে আকবর বাহিনী তার দূর্বলতার সুযোগে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তিতে আকবর একটি মার্ডার মামলার আসামী করলে আবার পালিয়ে যায় সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। এরই মধ্যে তার বেপোরয়া অপকর্মের কারনে অতিষ্ঠ হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ে এই বিক্ষোভ করেন তারা।
স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের পক্ষে শ্রমিক নেতা আলমগীর হোসেনে তত্বাবধায়নে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে আকবর হোসেনকে আইনের আওতায় নেয়ার দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন থেকে দাবি করা হয়, গত ৫ই আগস্ট থেকে আকবর হোসেন ও তার ছেলে ছাত্রদল নেতা রনির নেতৃত্বে সানারপাড় এলাকায় লুটপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল, চাঁদাবাজি, ভাঙচুর চালানোসহ ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে। তাদের কাছে সাধারণ মানুষ একরকম জিম্মি হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে সিদ্ধিরগঞ্জে থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আকবরের আগ্রাসী লুটপাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও ব্যানারে মানববন্ধন চলাকালে হামলা চালায় আকবর ও তার ছেলের অনুসারিরা। হামলায় নারী-পুরুষসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা গুরুতর।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আকবরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে সবই অপপ্রচার। আমি কোন অপকর্মের সাথে জড়িত নই।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ সভাপতি ও ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মাদ সাদরিল বলেন, অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে এখন শুধু সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের ১৫ বছরের আত্মত্যাগ এবং কমিটমেন্ট কিছু ব্যক্তির অপকর্মের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে না। তাদের দায় দল নেবে না।