সারা দেশের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে নূরানী তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসার তিন জন শিক্ষার্থী ফলাফলের দিক দিয়ে সেরা হয়েছেন। এই উপলক্ষ্যে মাদ্রাসার বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে বন্দর কলাগাছিয়া নিশং এলাকায় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এই আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এবং কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মো. সেলিম রেজা বলেন, আমার বাবা যে স্বপ্ন দেখেছিল তীলে তীলে সেই স্বপ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমার বাবা অনেক সমাজসেবা করেছেন, এ দেশের জন্য কাজ করেছেন। দেশের বাচ্চাদের মধ্যে ইসলামের চিন্তা ঢুকানোর পরিকল্পণা নিয়ে তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। একারণে তিনি এই এলাকায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। এই মসজিদ-মাদ্রাসায় আমি যখন বসি তখন আমার মনে হয়না যে আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলে ও মাদ্রাসার জন্য কিছু করলে তা সদকায়ে জারিয়া হবে। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য মানুষ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। সেখান থেকে টাকা নেওয়া ঠিক না। যদি মাদ্রাসা থেকে টাকা ইনকাম করে সংসার চালাই সেটা সদকায়ে জারিয়া হবে না। সে হিসেবে এই মাদ্রাসার শিক্ষক ছাড়া অন্য কেউ টাকা নেয় না। বরং ম্যানেজিং কমিটির লোকজন উল্টো মাদ্রাসার জন্য টাকা দেয়। আল্লাহর রহমাতে এই মাদ্রাসা কোনদিন আর্থিক দুরাবস্থায় পড়বে না।
সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এবং নূরানী তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসার সভাপতি আলহাজ্ব মো. শহীদ রেজা বলেন, আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এতো ভালো রেজাল্ট করেছে, আমি তাতে মুগ্ধ হয়ে গেছি। আমি চাই, এই মাদ্রাসাকে আরও বড় করতে ও সুন্দর করতে। আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নূরানী তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসার কোষাধ্যক্ষ আলহাজ্ব মো. আজিজুর রহমান মিঠু বলেন, আজকে আমাদের মাদ্রাসার রেজাল্ট সবাই দেখেছেন। এতো ভালো রেজাল্ট কিভাবে হলো। আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষকরা ক্লাসের পরে ও আগে শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছে। ফলে এতো ভালো রেজাল্ট হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এবার ফলাফল অনেক ভালো হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নূরানী তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসার সদস্য ওয়ালীউল্লাহ রাজু বলেন, আমাদের মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিতে যারা আছেন সবাই খুব সহযোগিতা করছেন। আমার কাকা শহীদ রেজা কাকা অত্যান্ত ভালো লোক। তার মত মানুষ আমি আমার জীবনে দেখিনি। ওনি আমাকে সব সময় মানব সেবা করার কথা বলেন। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে সেবা দেওয়ার কথা বলেন। তার সেই উপদেশকে কাজে লাগিয়ে আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি সবাই সেই দোয়া করবেন।
নূরানী তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে যত জন শিক্ষার্থী বোর্ড স্ট্যান্ড করেছে, তার মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি স্ট্যান্ড করেছে। সারা বাংলাদেশের সেরা ৫ জনের মধ্যে আমাদের এই মাদ্রাসার ৩ জন শিক্ষার্থী বোর্ড স্ট্যান্ড করেছে। আমি সকলের দোয়া ও সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করি।
এ সময় মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বৃন্দ ও ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার এবং সাবেক মেম্বার সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড বাংলাদেশ এর অধীনে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী খাদিজা বিনতে ওয়ালীউল্লাহ্। যথাক্রমে সেরাদের তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছেন সুমাইয়া আক্তার ও মো. জাভেদ। সারা দেশের মেধা তালিকায় সেরা ৫ জনের মধ্যে এই মাদ্রাসায় তিন জন শিক্ষার্থী সেই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।
আলোচনা সভা শেষে মাদ্রাসার অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়।