সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন এবং সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়নসহ ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। মঙ্গলবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে এ প্রস্তাবনা দেয় তারা।
দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার পর ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন।
এ সময় রাষ্ট্রপতি তাদের স্বাগত জানান এবং ইসি গঠনে তার এ উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন। সংলাপে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- আনিসুর রহমান মল্লিক, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, কামরুল আহসান, আলী আহমেদ, এনামুল হক এমরান এবং নজরুল ইসলাম হক্কানী।
ওয়ার্কার্স পার্টির লিখিত প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- ইসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাই সংবিধানের ১১৮ বিধি বাস্তবায়নার্থে আইনের বিধানাবলি অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি আইন তৈরি করতে হবে। জাতীয় সংসদের নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই এ আইন উত্থাপন করে জরুরিভিত্তিতে তা পাশ করা যেতে পারে।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়- দেশের সব রাজনৈতিক দলই এ আইন প্রণয়নের পক্ষে। নাগরিকদের পক্ষ থেকেও একই দাবি উত্থাপিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত সংবিধান বর্ণিত বিধি পরিপূরণে আপনি (মহামান্য রাষ্ট্রপতি) সরকারকে এ নির্দেশ দিতে পারেন। অন্যথায় প্রতিবারের মতো এবারো নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক জন্ম দেবে। এ ধরনের আস্থাহীনতার পরিবেশে নির্বাচন কমিশন যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে না।
ওয়ার্কার্স পার্টির মতে, এ আইন অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে এ সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠিত হবে।
এ সাংবিধানিক কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের পরামর্শমতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ করবেন।
যদি আইন প্রণয়ন একান্তই সম্ভব না হয় তবে বিকল্প হিসেবে যে সার্চ কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীদের নিয়ে তা গঠন করা যেতে পারে। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতি পদে চারজনের নাম প্রস্তাব করবে। সার্চ কমিটির দেওয়া নামের তালিকা সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটি বাছাই করে সেখান থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে। রাষ্ট্রপতি ও তালিকা থেকে ইসি নিয়োগ দেবেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির মতে, নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে দুজন নারী সদস্য থাকবেন। নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী আইনগুলোর যথাযোগ্য প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
গত ২০ ডিসেম্বর সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। সংবিধানে কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ আছে। তবে এ সংক্রান্ত আইন দেশে হয়নি। এ পরিস্থিতিতে গত দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি সম্ভাব্য ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করার পর রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেন। এবারো একই পথে হাঁটছেন রাষ্ট্রপতি।