সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের ৪১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রমিক সমাবেশ ও শহরে লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) বিকাল ৩ টায় চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ শ্রমিক সমাবেশ ও শহরে লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর অন্যতম শীর্ষ নেতা ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রমিক নেতা কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় সম্পাদকমÐলীর সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলার আহŸায়ক জননেতা কমরেড নিখিল দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সহসভাপতি এম এ মিল্টন, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি জামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ। সমাবেশে গণসংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিক শ্রম দিয়ে সম্পদ তৈরি করে আর শ্রমিককে শোষণ করে মালিক শ্রেণির মুনাফা বাড়ে কিন্তু শ্রমিকের অভাব ও দুঃখ দূর হয় না। শ্রমিকের পরিশ্রমের দাম কম দিয়ে এবং শ্রমিক যা ব্যবহার করে তার সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়ে মালিকরা মুনাফা করে এবং তা দিন দিন বাড়তেই থাকে। বাংলাদেশের ৬ কোটি ৮২ লাখ শ্রমিক কৃষি-শিল্প, সেবা খাতে কাজ করে। তাদের শ্রমে দেশের জিডিপি, মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয় বাড়ে। কিন্তু তাদের মজুরি পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। মালিকদের বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংকের টাকা, বিদেশে সম্পদ সব বাড়ছে। শ্রমিকরা যে বেতন পায় তা দিয়ে তাদের সংসার চলে না।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আমাদের দেশে সমস্ত শ্রমিকদের জন্য জাতীয় নি¤œতম মজুরি আইন নেই। ফলে কিছু খাত ছাড়া সমস্ত ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের যেমন খুশি তেমন মজুরি দেয়া হয়। দেশের প্রধান রপ্তানিখাত গার্মেন্টসে চার বছরের অধিক কাল যাবৎ মজুরি বাড়ে নাই। এর মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম রেকর্ড পরিমান বেড়েছে। বর্তমান বাজারমূল্য বিবেচনায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা দরকার। অথচ এবিষয়ে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই।
তিনি বলেন, শ্রম অধিকার সংকোচনের সকল প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে; গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কর্মেেত্র নিহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান তিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, তিপূরণ দিতে হবে। শ্রমিকদের রেশন, আবাসন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যথাযথ আইন ও মান নির্ধারণ করে ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইকসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানের দাবি সমস্ত দিক থেকে যৌক্তিক প্রমানিত হয়েছে। এই দাবি উপেক্ষা করা যাবে না। পুনর্বাসন ছাড়া হকার, রিকশা উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকরা আমাদের রিজার্ভ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে তাদের বিদেশ যাওয়ার ব্যয় কমাতে হবে, বিনা সুদে তাদের ঋণ দিতে হবে এবং ফিরে আসা প্রবাসীদের সহযোগিতা করতে হবে।
রাজেকুজ্জামান রতন আরও বলেন, কর্মেেত্র দুর্ঘটনা প্রতিদিন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে তাই তাদের জন্য বিমা এবং তাদের জন্য পেনশন স্কিম চালু করতে হবে। মালিক ও শ্রম দপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহেলায় আগুনে পুড়ে, ভবন ধসে শ্রমিকের মৃত্যু হয় এর জন্য দায়ী মালিক ও কর্তব্য অবহেলার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উপেক্ষা করা যাবে না। নারী শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি, নিপীড়নের শিকার হয় তাদের জন্য হয়রানি মুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
নিখিল দাস বলেন, শ্রমিক ফ্রন্ট ৪১ বছর ধরে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, যখন তখন শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদান, মর্যাদাপূর্ণ জীবন, আবাসনব্যবস্থা, রেশন, পেনশনের আন্দোলন শক্তিশালী করাসহ শ্রমিকের নানা অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে আসছে। একই সাথে লড়াই করে আসছে, যে শোষণমূলক পুঁজিবাদীব্যবস্থা শ্রমিকের জীবনে অভিশাপ হয়ে তাদের বুকে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে তার অবসানের লক্ষ্যে।
নেতৃবৃন্দ ন্যায্য মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদান, পেনশন, রেশন, আবাসন, চিকিৎসাসহ শ্রমিকের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহŸান জানান।