নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হাবিবুর রহমান ওরফে লুইচ্চা হাবিব ও শহিদ মিয়া ওরফে হিজরা শহীদ-সহ কয়েকজন অর্থলোভী শিক্ষক পুরোনো একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নামে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে প্রতারণায় নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবকবৃন্দ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে জৈনপুর এলাকায় ২০১৯ সালে কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর সহযোগিতায় শিক্ষানুরাগী মরহুমা নাহিদ সুলতানা জুবলীর নামে ” নাহিদ সুলতানা জুবলী মেমোরিয়াল হাই স্কুল” নামে একটি বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির এক বছর না হতেই মহামারী করোনার কারনে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় সারা দেশের ন্যায় প্রায় ৩ বছর বন্ধ থাকে। কিন্তু বন্ধ থাকা সত্বেও মালিকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্কুলের বাড়ি ভাড়া ও সকল শিক্ষকদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করে এসেছে। এতে প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পূনরায় ২০২২ সালে নতুন আঙ্গিকে চালু করে ১ বছর সফলতার সহিত পরিচালনা করা হয়। এতে ঈর্ষান্বিত উপজেলার নাগেরগাঁও গ্রামে অবস্থিত “চাইল্ড হ্যাভেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল” এর প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান ওরফে লুইচ্চা হাবিব প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে বেড়িয়ে যায়।
পরবর্তীতে তার সাথে জৈনপুর গ্রামের শহীদ মিয়া ওরফে হিজরা শহীদ-সহ কয়েকজন অর্থলোভী ব্যবসায়ী শিক্ষকদের নিয়ে “নাহিদ সুলতানা জুবলী মেমোরিয়াল হাই স্কুল”টি কে বন্ধ করতে ও তাদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে অত্র স্কুলের পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং মহাসড়ক সংলগ্ন সিএনজি পাম্পের সাথে ঘেষে একটি বিশাল গরুর ফার্ম এর পাশে পুরোনো একটি কিন্ডারগার্টেনের নাম দিয়ে স্কুলের নামের একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান চালু করেছে। যেখানে বলা হয়েছে জনবসতিপূর্ণ এলাকা না হলে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন কিলোমিটারের মধ্যে অন্য আরেকটি মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
এছাড়াও একটি মাধ্যমিক স্কুল থাকতেও এমন একটি নিরাপত্তাহীন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কিভাবে তারা পড়াশোনা করার জন্য স্কুল নির্মান করেন এমনটাই সমালোচনা করছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, পুরোনো ওই কিন্ডারগার্টেনটি দীর্ঘদিন (প্লে থেকে ৫ম শ্রেনী ) পর্যন্ত পাঠদান করে আসলেও এ বছর ঐ কিন্ডারগার্টেনের মালিক তার মালিকানা হাবিবুর রহমান ওরফে লুইচ্চা হাবিব এবং শহীদ মিয়া ওরফে হিজরা শহীদ-সহ কয়েকজনের নিকট বিক্রি করে দেয়।
আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা অসৎ উপায় অবলম্বন করে কোনো অনুমতি ছাড়াই “নাহিদ সুলতানা জুবলী মেমোরিয়াল হাই স্কুল”টিকে ক্ষতি সাধন করতে তার পাশে ঐ কিন্ডারগার্টেনে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির পাঠদান কর্মসূচি বর্ধিত করে ব্যবসায়ীক ফায়দা ও শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সাথে প্রতারণা করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতনমহল।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, শিক্ষক হাবিবুর রহমান ওরফে লুইচ্চা হাবিব তার নিজ বাসা কুমিল্লায় বিভিন্ন অপকর্ম করে সোনারগাঁয়ে তার আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করে আছে। পরে সে ছদ্মবেশী রূপ নিয়ে “নাগেরগাঁও গ্রামে অবস্থিত “চাইল্ড হ্যাভেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল”এ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে সে হয়ে ওঠে বেপরোয়া। এলাকায় শিক্ষকের পরিচয়ে ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরনসহ নানা ধরনের অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এতে ঐ স্কুল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বিচার শালিশও করেছে।
এখানেই শেষ নয়, সে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকায় স্কুল থেকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে কুমিল্লায় একটি ডায়গনিষ্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন এবং সোনারগাঁয়ে বাড়ি নির্মান করেন। বিষয়টি স্কুল মালিকদের দৃষ্টিগোচর হলে তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং সত্যতা পেয়ে তাকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন।
চাইল্ড হ্যাভেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একাধিক মালিক জানান, দীর্ঘদিন সে আমাদের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছে। করোনা মহামারীতে সে আমাদের বিদ্যালয়ের হিসাবখাত থেকে নামে বেনামে প্রায় ১০লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। বিষয়টি জানতে পারলে এবং অডিটের মাধ্যমে সত্যতা পেলে আমরা তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেই। পরে উনি আর্থিক প্ররোচনা দিয়ে আমাদের স্কুল থেকে কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে “নাহিদ সুলতানা জুবলী মেমোরিয়াল হাই স্কুল” এর পাশে পাম্প ঘেষে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ওই এলাকার পুরোনো একটি কিন্ডারগার্টেনের নাম ক্রয় করে হাই স্কুল শাখা চালু করে যার কোনো পাঠদান অনুমতি নেই।
তাই আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসারের নিকট আবেদন করবো এমন একজন স্বার্থলোভী এবং ঝুকিপূর্ণ এলাকা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও যেনো তাদেরকে অনুমতি ও স্কুলটি এই জায়গায় পরিচালনা করতে না দেয়া হয়।
নাহিদ সুলতানা জুবলী মেমোরিয়াল হাই স্কুল” এর প্রধান শিক্ষক ও অত্র স্কুলের মালিক বলেন, আমরা বহু কষ্ট করে স্কুলটি পরিচালনা করে আসছি। আমাদের অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন আমাদের মানবিক কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে কয়েকজন আমাদের বিদ্যালয়টির সুনামক্ষুন্য ও বিদ্যালয়টি বন্ধ করার জন্য আমাদের এলাকায় পুরোনো একটি কিন্ডারগার্টেনের নাম ব্যবহার করে মাধ্যমিক শাখা করেছে (৬ষ্ট-৯ম) শ্রেণিতে ভর্তির নামে প্রতারণা করছে। অনুগ্রহ করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো আপনারা দয়া করে এরকম নামে বেনামে ব্যাঙের ছাতার মতো যেখানে সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বন্ধ করে দিন। নয়তো ছাত্র-ছাত্রী ও বিদ্যালয়ের অভিভাবকবৃন্দসহ অনিশ্চিত শিক্ষা ঝুঁকিতে ভুগবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য আবু নাঈম ইকবাল বলেন, নিকটবর্তী এলাকায় একাধিক স্কুল গড়ে উঠা মোটেও যৌক্তিক না। তাছাড়া কোন স্কুল যদি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে উঠে সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকিতো বটেই।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে তারা কেন এতো কাছাকাছি একাধিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করে এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নেবো। অস্বাস্থ্যকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার স্কুলগুলোতে