বিএনপি ধরেই নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার বড় ধরনের সংস্কারের আগে নির্বাচন দেবে না। দ্রুত নির্বাচন হবে এমন আলামতও তারা দেখতে পাচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় নতুন বছরে নির্বাচন আদায়ই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠছে। দাবি আদায়ে দলটি সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, শিগগির দেশে একটি নির্বাচন আদায় করতে পারলে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি হবে। দিন যত পেছাবে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বাসা বাঁধবে। অন্তর্বর্তী সরকার বেকায়দায় পড়লে বিএনপিও বেকায়দায় পড়বে। দলটি সেদিকে সজাগ থেকে সরকারকে নির্বাচনের জন্য জোর তাগিদ দিয়ে যাবে।
দলীয় সূত্র বলছে, এখনই সরাসরি নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি দেবে না বিএনপি। তবে ভিন্ন ব্যানারে থাকবে নির্বাচন আদায়ের কর্মসূচি। ইতিমধ্যে করণীয় ঠিক করেছে দলটি। গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্র বন্ধে দশ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশের চিন্তা করছে বিএনপি। এরপর থাকবে র্যালি ও গণজমায়েতের মতো জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি। এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস ঘিরেও বড় শোডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সময়ের আলোকে বলেন, আমি মনে করি সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে দেবে। সেটির ব্যত্যয় হলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সরকার সঠিক পথে আছে কি না বলা কঠিন। আশা করছি তারা সার্বিক জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলবে। সংস্কারের কারণে নির্বাচন আটকে রাখা যাবে না। বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, গত ১৫ বছর ধরে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। জনগণ তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। দেশের জনগণের প্রত্যাশা, তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। তাই জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত সময়ের ভেতরে একটা অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। এটা দেরি হলে সবার জন্য অমঙ্গল হবে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারায় আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আমরা এখনও মাঠেই আছি। মাঠে থেকেই সব দাবি আদায় করব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, আমরা বলছি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। যেসব সংস্কার জনপ্রতিনিধি করবে, সেগুলোতে এই সরকারের হাত না দিলেও চলবে। সংস্কারের কারণে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হতে পারে। এ জন্যই নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া উচিত।
বিএনপি তৃণমূলেও নির্বাচন আদায়ের জন্য নেতাকর্মীদের সজাগ ও প্রস্তুত থাকার বার্তা দিচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান সময়ের আলোকে বলেন, আমরা নতুন বছরের শুরুতে মাঠে নামব। আমাদের সেভাবে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এখনও আমরা নির্বাচনের দাবিতে কোনো কিছু করছি না। নতুন বছরে নির্বাচন আদায় করতে যা যা প্রয়োজন সবই করতে হবে। এর আগে আমাদের দায়িত্বশীল নেতারা বারবার নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমরা গত পনেরো বছর ভোট দিতে পারিনি। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সময়ের আলোকে বলেন, নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করা লাগবে বলে মনে করছি না। এই সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনেই দায়িত্ব পালন করছে। সমর্থন না করলে তারা কাজ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে ৪২টি দল যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন। একটি লক্ষ্য ৫ আগস্ট অর্জন হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারে কিছু সময় লাগবে। আশা করছি সরকার নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দেবে। জন-আকাক্সক্ষা নিয়ে কাজ করবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সময়ের আলোকে বলেন, আমরা নির্বাচন নিয়ে কোনো বিরোধে যেতে চাই না। নির্বাচনের জন্য বিএনপির সঙ্গে আমাদের এখনও আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা হয়নি। আশা করছি এর আগেই সরকার নির্বাচন দিয়ে দেবে। অর্থাৎ দ্রুত সংস্কার শেষ করে আগামী বছর নির্বাচনের আয়োজন করবে এই সরকার। এর আগে তারা নির্বাচনের নকশা বা রোডম্যাপ জাতির কাছে তুলে ধরবে। এর ব্যত্যয় হলে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলনের পথ অনুসরণ করব। আর সরকার যাতে বিপথগামী না হয় সেদিকে আমরা নজর রাখছি।
১২ দলীয় জোট শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হানিমুন পিরিয়ড শেষ। তাদের দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। আমরা চেয়েছিলাম ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন হোক। কিন্তু সরকার নির্বাচন বিলম্বিত করছে বলে মনে হচ্ছে। আগামী বছরে সরকারকে নির্বাচনি মহাসড়কে উঠতে হবে। নইলে এমন ভালো পরিবেশ থাকবে না।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সময়ের আলোকে বলেন, আমরাও নির্বাচন চাই। তবে সংস্কারও জরুরি। দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। বেশি দেরী করলে সরকার নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। ভোটের জন্য আমরা ১৫ বছর লড়াই করেছি। এখনও ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করতে হবে, এটা মনে করছি না। দেখা যাক সামনে কী হয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।