নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে দুর্গাপূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দুয়ারে কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবকে সামনে রেখে শিল্পীর নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে দুর্গা, গণেশ ও কার্তিকসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা। শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় দম ফেলার ফুরসত নেই প্রতিমা শিল্পীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলায় এবছর ৪৩ টি মন্ডপে উদযাপিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। করোনার কারণে সরকার নির্দেশিত সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে রাতদিন চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। তাই ঘুম নেই মূর্তির কারিগরদের চোখে।
ভক্তরা জানান, দেবীদুর্গা আসবে ঘোড়ায় চড়ে। ফিরবেন ঘোড়ায়। ঢাক, ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবীদুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভক্তরা। প্রতিটি পূজা মন্ডপে প্রতিমা বানানোর কাজ শেষ। এখন রং তুলির আঁচড়ে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নিখুঁত ভাবে মনের মাধুরি মিশিয়ে তারা মনে প্রাণে তৈরী করছেন প্রতিমা। তারা প্রতিমা তৈরিতে ৬০ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা মজুরি নিচ্ছে। কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে দূর্গতিনাশীনি দেবীদূর্গা এবং তার সঙ্গীয় লক্ষী,সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ও অনিষ্টকারী অশুর সহ বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা।
দূর্গার বাহকসহ প্রতিমার শাড়ি ও অলংকার পরানোর কাজও ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। পূজা মন্ডপ আলোকসজ্জা ও রঙিন কাগজে রাঙানো হচ্ছে প্রতিটি মন্ডপ। প্রতিমা দেখতে এখনই দর্শনার্থীরা মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একই সঙ্গে পূজার পুরোহিত নির্বাচনের কাজও শেষ করছেন মন্ডপ পরিচালনা কমিটি।
প্রতিমা তৈরীর কারিগর তপন কুমার জানালেন, খড় আর কাঁদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরীর প্রাথমিক কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন রঙ আর তুলির আঁচড় দিয়ে দুর্গাকে সাজানো হবে। এদিকে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ছে প্রতি বছরই। তার উপর পড়েছে করোনার প্রভাব। কিন্তু উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন এ মৃৎশিল্পী।
করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় প্রতিমা দেখতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য সাবান দিয়ে হাতধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আয়োজক কমিটি। আগামী ১১অক্টোবর মহাষষ্ঠী এবং ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী বা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হবে এবারের শারদীয় দূর্গাৎসব। এদিকে পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তায় চৌকিদার, আনসার, পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি, র্যাব ও উপজেলা প্রশাসন টহলে থাকবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গণেশ চন্দ্র পাল ও উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিলা রানী পাল জানান, পুজায় সর্বস্তরের মানুষের সমাগম ঘটবে। এটা যেমনি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। তেমনি এতে অন্যান্য ধর্মের বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহন করে। তাই সবার কথা মাথায় রেখে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া পূজাকে ঘিরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক এবং তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজীর সহযোগীতা পাওয়ায় তারা ভালভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবেন। তারা আরও জানান, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা পালন করতে পারতেন না, কিন্ত বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা উৎসব পালন করতে পারছেন।
এ বছর উৎসবকে শান্তিপূর্ণ ভাবে করতে প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি মন্ডপের নিজস্ব সেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ মন্দির গুলোর তালিকা করে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আবির হোসেন বলেন, রূপগঞ্জ উপজেলায় দুর্গাপূজায় পূজা মণ্ডপ গুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। মণ্ডপগুলোতে রাখা হবে বাড়তি নজরদারি, থাকবে গোয়েন্দা তৎপরতাও।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, এবারের দূর্গাপূজায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দূর্গাৎসব পালন করা হবে।