‘রাজনীতি মানে প্রভুত্ব দেখানো না। রাজনীতি মানে জমিদারী দেখানো না। রাজনীতি মানে, আমি কি হনুরে ভাবাও না। রাজনীতি মানে, মানুষের মনের ভিতরে স্থান করে নেয়া। রাজনীতি মানে হচ্ছে এবাদত। রাজনীতি মানে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে সেবা করা, মানুষের মন জয় করে সৃষ্টিকর্তাকে খুঁশি করা। সেই রাজনীতি করতে পেরেছেন আমার পিতা আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রয়াত নেতা একেএম সামসুজ্জোহা ও বড় ভাই নাসিম ওসমান’।
বন্দরের মুছাপুরে সামসুজ্জোহা এমবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে কথা গুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। পরিবারের সদস্যদের আয়োজনে একেএম সামসুজ্জোহার ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
শামীম ওসমান বলেন, সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্ম নেওয়া পরিবারের ছেলে আমরা। খান সাহেব ওসমান আলীর নাতি আমি। কিন্তু ৭৫ সালের পরে এক বেলা ভাত খেয়েছি, আরেক বেলা ভাত খাইনি। ৯০০ টাকার জন্য পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করতে পারিনি। তখন অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগও রাখেনি। আমার বড় ভাই সেলিম ওসমান টাকা জোগার করতে গিয়ে ছিলেন, কিন্তু পারেন নাই। বাবু জীবন কানাই চক্রবর্তী স্যার নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে আমার ফরম ফিলাপ করে দিয়েছেন। ইচ্ছে করলে আমার বাবাও হয়তো নারায়ণগঞ্জের অর্ধেকটা কিনে নিতে পারতো। সেই টুকু ক্ষমতা তার ছিল। কিন্তু কিনেতো যায় নাই, উল্টো সব কিছু দিয়ে গেছে। এমনকি আমি দেখলাম, ৭৫ সালের পরে আমার দাদা খান সাহেব ওসমান আলীর দিয়ে যাওয়া বাড়ি হীরা মহল বন্ধকের কারণে নিলাম হয়ে যাচ্ছিল। সেদিন আমাদের জন্য কোন ধনী লোক এগিয়ে আসেনি, এসেছিল আদমজী আর লক্ষীনারায়ণের শ্রমিকরা। তারা এক টাকা করে চাঁদা দিয়ে এক দিনের মধ্যে আমাদের বাড়িটা ছাড়িয়ে এনে দিয়েছিল। আমার বাবা বলেছিলেন, বাড়িটা কিন্তু আমার না। তোমরা শ্রমিকের বাড়িতে বড় হয়েছো। তাই চেষ্টা করি, যখন যেখানে থাকি- সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য। যে ক’দিন বেঁচে আছি, বলবো ইনশাআল্লাহ।
শামীম ওসমান আরও বলেন, আমার বাবা যখন রাজনীতি করতেন, তখন রাজনীতিটা ছিল। এখন রাজনীতিটা আছে, কিন্তু রাজনীতিবীদটা নেই। মুখে বলে রাজনীতিবিদ সবাই, কিন্তু সত্যি কতটা রাজনীতিবিদ, সেটা বুঝাটা মুসকিল। তখন রাজনীতি মানে ছিল, সত্যতা। মানুষ দেখাতো, ওই বাসাটাতে রাজনীতি করে। ওই বাসার ছেলেটা ছাত্র রাজনীতি করে। তারমানে ওই বাড়িটা সত্য লোকের বাড়ি, ওই বাড়িটা সত্যতার প্রতীক। এমন ছিল ব্যাপার টা। আমরাও তাই দেখিছি। আমি একটু কথা বার্তা স্পষ্ট বলি, মুখে আমার মধু কম, এ জন্য অনেকে অনেক কিছু মনে করতে পারেন। কিন্তু সত্যকথা বলা উচিৎ রাজনীতির জন্য।
তিনি বলেন, ৩৫ বছর ধরে আমার বাবার মৃত্যু বাষির্কী পালন করেছি। এতদিন এত কষ্ট লাগতো না, এখন কষ্ট একটু বেশি লাগে। কিছু দিন আগে একটা ঘটনা হয়েছিল। আমার বাবা, আমার মা, আমার ভাইসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের উপরে শ্মশানের মাটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি জানি, আমি শামীম ওসমান কি করতে পারি, দু’ চার টা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কিন্তু আমি কিছু বলিনি, শুধু বলেছিলাম একজনকে স্বাক্ষী রেখে গোপনে আল্লাহর কাছে মাফ চাও। যাতে রোজ কেয়ামতে, হাশরের ময়দানে গিয়ে আমি আমার বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলতে পারি, রাজনীতিতে আমি আপোষ করি নাই।
শামীম ওসমান বলেন, আমার বাবা মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আমাদের ৩ ভাইকে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, আমার ছেলেরা যদি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে মারাও যায়, তাহলে আমার কোন দাবি থাকবে না। সেদিন থেকে আমার পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের অভিভাবক মানে। কয়েক দিন আগে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ‘তোমার বাবা কি শুধু তোমার বাবা, আমার চাচা না। তোমার বাবা কি শুধু তোমাদের জন্য রক্ত দিয়েছে, নাকি আমাদের জন্যও রক্ত দিয়েছে। মনে রাখবা, আমি তোমাকে বলছি, আল্লাহ উনাকে বেহেস্তে নসিব করবেন।’ ১৬ কোটি মানুষের অভিভাবক উনি (শেখ হাসিনা), আল্লাহ ওয়ালা মানুষ উনি। কি পরিমান আল্লাহ ওয়ালা, আমি জানি। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। উনি বলেছেন, ‘তুমি মনে কষ্ট রাখবা না’। উনার কথায় আমার কষ্টটা লাগব হয়েছে, কিন্তু শেষ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমি-আপনি কে কখন মারা যাবো কেউ যানি না। তাই আসুন আমরা সবাই সবার জন্য দোয়া করি। জীবনে যতবার আল্লাহকে ডেকেছি, একটা ডাক যদি আল্লাহ তায়ালা কবুল করে থাকে, তাহলে আল্লাহ যেন আপনাদের সবার উপরে রহমত দেন, এবং আপনাদের সবাইকে কবুল করে নেন।
উপস্থিত সকলের কাছে দোয়া চেয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেন, আমরা এতিম, আমার আব্বাও নাই, আম্মাও নাই। আজকে আমার আব্বার ৩৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই।
এ সময় বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কুদরত-এ- খোদ, বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানা উল্লাহ সানু, বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা, বন্দর উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা ইসলাম শান্তা, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিমউদ্দিন প্রধান, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, ২৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর দুলাল প্রধান, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ গাজী সালাম ও মহানগর ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত কবির ফাহিমসহ বন্দর উপজেলার আরও অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্রেখ্য, ১৯৮৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী মারা যান এ কে এম শামসুজ্জোহা। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারী) সেই কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব, স্বাধীণতা পদকপ্রাপ্ত মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ভাষা সৈনিক, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম একেএম সামছুজ্জোহার মৃত্যু বার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে মরহুমের পরিবার ও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠন দিনভর কর্মসূচী পালন করবে। নানা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে পবিত্র কোরআনখানি, মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জিয়ারত, দোয়া মিলাদ ও আলোচনা সভা। মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে মেজো ছেলে সেলিম ওসমান এমপি ও ছোট ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা একেএম শামীম ওসমান এমপি সকলকে রোববার বাদ আসর উওর চাষাড়া জামে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করার আকুল আবেদন জানিয়েছেন।