রুদ্রবার্তা২৪.নেট: গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণে ৪২ জন দগ্ধ হন। বিস্ফোরণের ঘটনার পর হতাহতদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরদিন সকালে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও তার শিশু সন্তানসহ ১১ জনের মৃত্যুর খবর আসে। পশ্চিম তল্লা এলাকায় তখন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। এরপর তিনদিন যাবৎ কেবল মৃত্যুর খবরই আসছিল হাসপাতাল থেকে। একে একে ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটে ওই ঘটনায়। এই শোক এখনও কাটেনি স্বজনদের। নিহত স্বজনদের কথা মনে পড়লেই মসজিদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। দীর্ঘণ দাঁড়িয়ে থেকে কেবল চোখের পানি ফেলেন।
বিস্ফোরণের ঘটনার রাত সাড়ে তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ব্যবসায়ী কুদ্দুস বেপারী (৭২)। শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) পিতার স্মৃতি মনে পড়ায় মসজিদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন কুদ্দুস বেপারীর বড় ছেলে সুমন বেপারী। এ প্রতিবেদকের কথা হয় তার সাথে। সুমন জানান, সেই ভয়াবহ স্মৃতির কথা ভুলতে পারেন না তারা। তার মা-বোনেরা এখনও সেই স্মৃতি মনে করে কাঁদেন।
ঘটনার রাতে সুমন, তার শিশু ছেলে ও বাবা কুদ্দুস বেপারী একত্রেই এশারের নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন ওই মসজিদে। সুমন ও তার ছেলে ওই ঘটনায় বেঁচে গেলেও মারা যান কুদ্দুস বেপারী। সুমন বলেন, ‘ফরজ ও সুন্নত নামাজ আদায় শেষে বিতর নামাজ পড়ার সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুতের আরেকটা লাইন চালু করার সাথে সাথেই স্পার্ক করায় বিস্ফোরণ হয়। মসজিদের থেকে বেরিয়ে ৩০-৪০ কদম দূরে যাওয়ার পরই এই বিস্ফোরণ ঘটে। আইসা দেখি মানুষ মসজিদের সামনে পানির মধ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ছেলেরে খুঁজবো নাকি বাবারে খুঁজবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একটা মানুষের গায়েও কাপড় ছিল না। ছেলেকে অত পেলেও বাবাকে দগ্ধ অবস্থায় পাই। রাতেই হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।’
২৩ বছর যাবৎ এই মসজিদে ইমামতি করেছেন মাওলানা আব্দুল মালেক। ওই রাতেও এশার নামাজে ইমামতি করেছেন তিনি। মসজিদে গ্যাস বিস্ফোরণে প্রাণ হারান তিনিও। ইমামের বড় ছেলে হাফেজ নাঈমুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পরই একদিন পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম, ভালো চিকিৎসা পেলে আব্বু বেঁচে যাবেন। কিন্তু তিনি ফিরেছেন লাশ হয়ে।’
বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও বিচারকাজ শুরু না হওয়ায় হতাশা ও ােভ রয়েছে নিহতদের স্বজনদের মধ্যে। এই ঘটনায় তিতাস, ডিপিডিসি’র মতো সরকারি সংস্থা জড়িত আছে বলেই বিচারকাজ শুরু হওয়া নিয়ে ধীরগতি চলছে বলে অভিযোগ তাদের। নিহত ইমামের ছেলে নাঈমুল বলেন, ‘গ্যাসের লিকেজের সমস্যাটা ছয়মাস যাবতই ছিল। তিতাসকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তারা কিছু টাকা দাবি করেন লিকেজ মেরামতের জন্য। করোনা পরিস্থিতি, তিতাসের টাকা দাবি করাসহ নানা কারণে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছিল না। এর মধ্যেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তিতাসের গাফিলতির জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। তিতাসের সম্পৃক্ততা থাকার কারণে এবং তিতাস সরকারি সংস্থা হওয়ায় এই মামলার ঘটনাটা স্থগিত আছে। বিচারকাজও শুরু হয়নি।’
কুদ্দুস বেপারীর ছেলে সুমন বেপারী বলেন, ‘বিচারের কথা কারও মুখ থেকেই শুনতেছি না। সবাই বলে, আল্লাহর ঘরে আইসা মানুষ মারা গেছে, এর আবার বিচার কি! বিচারের কোনো উদ্যোগই দেখি না।’ এই ঘটনার জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট সকলের বিচার দাবি করেন নিহতদের স্বজনরা।