ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সঙ্গে হওয়া বর্ণবাদী আচরণের পর সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে স্পেনের ঘরোয়া ফুটবলে। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের সমর্থনে মুখ খুলতে শুরু করেছেন সাবেক ও বর্তমান ফুটবল তারকারা।
এবার নিজ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকেও পাশে পেলেন তিনি।
আজ সোমবার রিয়ালের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভিনির সঙ্গে ‘হেইট ক্রাইম’ (ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ) সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। ক্লাবের পক্ষ থেকে স্পেনের প্রসিকিউটর অফিসে এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। এখন সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে, ঘটনাটিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে কি না।
বিবৃতিতে রিয়াল লিখেছে, ‘আমাদের খেলোয়াড় ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সঙ্গে গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, রিয়াল মাদ্রিদ তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের সামাজিক সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ওপর সরাসরি আঘাত।
এদিকে লা লিগাও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যদি ভিনির সঙ্গে ‘হেইট ক্রাইম’ সংঘটিত হয়ে থাকে; তাহলে তাদের পক্ষ থেকেও আলাদাভাবে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভিনি নিজে জানিয়েছেন, পুলিশ নাকি বর্ণবাদী আচরণকারী এক দর্শককে চিহ্নিত করেছে। অন্য আর কেউ তার সঙ্গে জড়িত ছিল কি না, তা নিশ্চিত করতে রিয়ালের পক্ষ থেকেও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আর রিয়াল জানিয়েছে, ভ্যালেন্সিয়ার পক্ষ থেকেও নাকি তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে যাদের দোষী পাওয়া যাবে, তাদের আজীবন স্টেডিয়ামে নিষিদ্ধ করার মতো সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হবে।
ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে যা ঘটেছিল
গতকাল (রোববার) ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ঘটনাবহুল ম্যাচে ১-০ গোলে হারে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের ৭০ মিনিটে ফ্রি-কিক নিতে গিয়ে গ্যালারি থেকে বর্ণবাদী মন্তব্য শোনেন ভিনি। খেপে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওই দর্শকের দিকে তেড়ে যান এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। এরপর আর খেলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে হয়নি তার। কিন্তু কোচ কার্লো আনচেলত্তির পরামর্শে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলান তিনি।
ম্যাচের শেষদিকে ভ্যালেন্সিয়ার হুগো দুরোকে ধাক্কা দেওয়ায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় ভিনিকে। কিন্তু বর্ণবাদ নিয়ে আলোচনা থামেনি। ম্যাচের পর স্পেনকে ‘বর্ণবাদের দেশ’ উল্লেখ করে ভিনি বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। যে চ্যাম্পিয়নশিপ একসময় ছিল রোনালদিনহো, রোনালদো, ক্রিস্টিয়ানো (রোনালদো) ও (লিওনেল) মেসিদের দখলে, সেটিই এখন বর্ণবাদীদের দখলে। খুবই সুন্দর একটি জাতি, যারা আমাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং যাদের আমি ভালোবাসি, তারাই এখন বর্ণবাদী জাতি হিসেবে বিশ্বে নিজেদের তুলে ধরছে। ’
‘স্প্যানিয়ার্ডদের মধ্যে যারা আমার সঙ্গে একমত নন, তাদের কাছে দুঃখিত। তবে ব্রাজিলিয়ানদের কাছে এখন স্পেন পরিচিত বর্ণবাদী দেশ হিসেবে। দুঃখজনকভাবে, প্রতি সপ্তাহেই যা ঘটছে, তাতে এখানে দ্বিমত করার কোনো উপায় নেই। আমিও একমত এতে। তবে আমি শক্ত আছি এবং বর্ণবাদীদর সঙ্গে লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়ব। এতে যদি এখান থেকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়, তবুও…। ’
লা লিগাকে একহাত নিয়ে ভিনি আরও বলেন, ‘এটা প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার নয়। লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ কর্তৃপক্ষ ও স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন এটা মনে করে এবং সমর্থকদের দলগুলো সাহস জোগায়। ’
ভিনি একা নন, বর্ণবাদ ইস্যুতে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে ও নেইমার জুনিয়রের মতো ফুটবল তারকারাও। এই দুই সুপারস্টার ছাড়াও ভিনির সমর্থনে মুখ খুলেছেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও এবং সাবেক ইংলিশ ফুটবলার রিও ফার্ডিন্যান্ড।
পিএসজির ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপ্পে ইনস্টগ্রামে ভিনির সমর্থনে লিখেছেন, ‘তুমি একা নও। আমরা তোমার পাশে আছি এবং তোমাকে সমর্থন করছি। ‘
এমবাপ্পের মতো আরেক পিএসজি তারকা নেইমারও ভিনির উদ্দেশে দিয়েছেন পাশে থাকার বার্তা। ইনস্টাগ্রামে ভিনির ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ লিখেছেন, ‘আমি তোমার পাশে আছি। ‘
সেলেসাও কিংবদন্তি রোনালদো ক্লাব ক্যারিয়ারে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ দুই ক্লাবের জার্সিতেই খেলেছেন। তিনিও ভিনির সমর্থনের আওয়াজ তুলেছেন। লা লিগার উদ্দেশে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ব্রাজিলের এই বিশ্বকাপজয়ী স্ট্রাইকার, ‘আবারও ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে বর্ণবাদের ঘটনা ঘটলো। এটা কবে থামবে? দায়মুক্তি এবং জটিলতা যতদিন থাকবে, ততদিন বর্ণবাদ থাকবে। রেফারি, ফেডারেশন এবং কর্তৃপক্ষের নীরবতা অগ্রহণযোগ্য। অনেক হয়েছে। ভিনি, তোমার এই লড়াইয়ে আমিও আছি। ‘
ইংল্যান্ডের সাবেক ডিফেন্ডার ফার্ডিন্যান্ড তো সরাসরি লা লিগার ওপর অভিযোগের তীর ছুড়েছেন। তার দাবি, লা লিগা বর্ণবাদের মতো এত সিরিয়াস ইস্যু লুকিয়ে রাখছে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আর কতবার এই তরুণকে এমন খারাপ কিছুর শিকার হতে দেখবো?’