টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘর বাড়ি, ফসলি জমি। কুড়িগ্রামে ধরলার ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে মুজিব কেল্লা। অন্যদিকে যমুনার পানি বৃদ্ধিতে সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে স্কুল, বসতবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি। ভিটেমাটি আর বসতবাড়ি হারিয়ে অসহায় নদীপাড়ের মানুষ।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ছে কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে। এতে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙা ইউনিয়নের গোরকম-প গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের মানুষরা। অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন অন্য জায়গায়। আবার কেউ বা সব হারিয়ে ঠাঁই নিচ্ছে সরকারি বাঁধে। সরেজমিনে দেখা যায়, নাওডাঙা ইউনিয়নের গোরকম-প এলাকায় রয়েছে দুটি মাদরাসা, স্কুল ও দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে একটি মুজিব কেল্লা। অথচ খামখেয়ালিপনার কারণে উপজেলা যাওয়ার একমাত্র বাঁধটি ভাঙতে বসেছে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মানুষের বসতবাড়িসহ বিলীন হয়ে যাবে সরকারি বেসরকারি সব স্থাপনা।
চর মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আবু বক্কর বলেন, ধরলা নদী যে হারে ভাঙছে দু-একদিনের মধ্যেই গোরকম-প জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। চর গোরকম-প এলাকার বাসিন্দা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, গত একমাসে এ গ্রামের প্রায় ১৫০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চলাচলের একমাত্র বাঁধটিও বিলীনের পথে।এ মুহূর্তে সরকার কোনো ব্যবস্থা না নিলে বাঁধটিও রক্ষা করা যাবে না। এ বাঁধটি ভেঙে গেলে এ অঞ্চলের ৮-১০টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ভাঙনের শিকার মো. আহাদ আলী বলেন, খুব ইচ্ছে ছিল বাপদাদার ভিটেমাটিতে আজীবন থাকবো। কিন্তু ধরলার ভাঙন সেই আশা শেষ করে দিলো। গতকাল ভিটেমাটি নদীতে চলে গেছে। উপায় না পেয়ে বাপদাদার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছি। জানি না কপালে কি আছে।
নাওডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাসেন আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের চর গোরকম-প বাঁধটি অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। গ্রামটির প্রায় দুইশো পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে আছে হাজার পরিবার। ভাঙনের মুখে পড়েছে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন মুজিবকেল্লা, স্কুল, মাদরাসা, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। দু-একদিনের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে না পারলে ওই গ্রামগুলোর মানুষেরা বিশাল দুর্ভোগে পড়বে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চর গোরকম-প এলাকা ধরলা নদীর বাম তীরে ভাঙনকবলিত হচ্ছে। আমরা নজরদারিতে রেখেছি। এছাড়া জেলায় ২৬টি পয়েন্টে প্রায় ২৫ কিলোমিটার অতি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। সাড়ে চার কিলোমিটার নদীভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলমান। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত মালামাল রয়েছে।