মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে রোজাকে সামনে রেখে যা যা দরকার, সবই আগাম কেনার ব্যবস্থা করার কথাও বলেছেন তিনি।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভার শুরুতে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুয়ায়ী কাজ আরও গতিশীল করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখনকার মানুষের সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে দব্যমূল্য। হ্যাঁ, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আমরা এটা অনেক কমিয়ে এনেছি। যেখানে কিছু কিছু মহল আছে, যারা চক্রান্ত করে মূল্যস্ফীতি ঘটায়। তবে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে, এটাও সত্যি। আগে এত ক্রয়ক্ষমতা ছিল না।
‘আমরা টিসিবির মাধ্যমে পারিবারিক কার্ড করে দিচ্ছি, যাতে কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে। অর্থাৎ, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়। সামনে রোজা, রোজার জন্য যা দরকার, সবই আমরা আগাম ক্রয় করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা সব সময় যারা হতদরিদ্র তাদের জন্য বিনা পয়সায় খাদ্য সাহায্য দিয়ে আসছি, সেই ব্যবস্থাও থাকবে। তাছাড়া, টিসিবি কার্ড দেওয়া থাকবে।’
মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি যাতে আরও হ্রাস করা যায়, এজন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা আমরা নেবো। যদিও আমাদের উৎপাদন অনেক বেশি, খাদ্য উৎপাদনে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তার পরেও যেসব জিনিস আমাদের কিনতে হয়, যেমন: ভোজ্য তেল, গম, জ্বালানি তেল, গ্যাস আমাদের আনতে হয়। আমরা সারা দেশের প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ দিয়েছি, এখন গ্যাসের চাহিদা আছে। আমাদের সার কারখানাগুলো, সেখানে গ্যাসের চাহিদা আছে, সেসব ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
‘বিশ্বব্যাপী যেখানে অর্থনৈতিক মন্দা, আমরা তার থেকে দূরে না। আমি সব সময় এটাই আহ্বান করেছি, যেন এক ইঞ্চি জায়গা অনাবাদি না থাকে। আমাদের যেন খাদ্যের অভাব না হয়। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে, রপ্তানির ক্ষেত্রেও বহুমুখী করতে হবে। আমাদের পাট, আমাদের চামড়া, আমাদের যেসব পণ্য আছে, এর জন্য বাজার খোঁজা, জনসাধারণকে ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা এবং বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করতে চাই।’
ইশতেহার অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ভিতরে ফ্রিল্যান্সার যাতে আরও উদ্যোগী হয়, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্টার্টআপ প্রোগ্রাম শুরু করেছি, যে কেউ… এক ব্যক্তি যেন কোম্পানি খুলতে পারে, সেই আইনও করে দিয়েছি। যাতে আমাদের যুবসমাজ নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। যাতে নিজেরা চাকরি না করে, চাকরি দেবে। আমরা আমাদের সমাজকে উদ্বুদ্ধ করছি।’
‘আমরা নির্বাচনি ইশতেহার হাতে নিয়েই বাজেট করি। আমরা মানুষকে যা ওয়াদা দেই, তা বাস্তবায়ন করি। বাংলাদেশের কল্যাণ আওয়ামী লীগের হাতে। এই আওয়ামী লীগই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে যে ওয়াদা দিয়েছি, সেটা বাস্তবায়ন করেই কিন্তু বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে এসেছি। কাজেই আজকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার প্রয়োজনীয়তা ছিল। কারণ, আমরা জানি, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে যখন হত্যা করা হয়েছিল, তারা কিন্তু এই দেশের কোনো উন্নয়ন করতে আসেনি। তারা ব্যক্তি উন্নয়ন করেছিল।’
নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী-সমর্থকদের দোষ খুঁজে বের না করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেছেন, এই নির্বাচনটা যাতে না হয়, এটা নিয়ে অনেক চক্রান্ত ছিল, অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচনটা করেছি। আমরা নির্বাচনে সব সময় মনোনয়ন দিয়েছি। আর আমাদের বড় দল, অনেকেই নির্বাচন করতে চায়। সেজন্য নির্বাচনটা আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম।
‘সেখানে আমি একটা আহ্বান করব, সেখানে কেউ জয়ী হয়েছে, কেউ জয়ী হতে পারেনি। সেই ক্ষেত্রে আমি একটা অনুরোধ করব, একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা বা কার কী দোষ ছিল, খুঁজে বের করা এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমাদের দল এবং আরও কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে। আমরা জনগণের যে সমর্থন পেয়েছি, সেটা কাজের স্বীকৃতি।’
তিনি বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করেছি, সেই জন্য মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। সেখানে হয়ত কেউ জিততে পেরেছে, কেউ পারেনি। হারা-জিতা যাই হোক, সেটা মেনে নিয়ে দেশের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। কাউকে বেশি দোষারোপ করা এবং একে অপরের দোষ ধরা নিয়ে ব্যস্ত থাকি, তাহলে এটা কিন্তু আমাদের বিরোধী দলকে আরও উৎফুল্ল করবে।
আগে থেকে পরাজয় জেনেই বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে আমাদের বিরুদ্ধে যে দল, তারা তো গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন করে অভ্যস্ত না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যে সকল জরিপ হয়েছিল, সেখানে বিএনপি তাদের জোট নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে সরকার গঠন করবে না, সেই সংখ্যক সিট তারা পাবে না, এটা উঠে এসেছিল। একমাত্র আওয়ামী লীগই সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত সিট পাবে, সেই কথা শোনার পরে তারা নির্বাচনে আসবে না, এটা তো স্বাভাবিক।
‘তাছাড়া ওদের সৃষ্টি হচ্ছে অবৈধভাবে। অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করা, জনগণের ভোট চুরি করা—এসব কালচার তো বিএনপির আমলেই সৃষ্টি। দুর্নীতি করা আর মানুষ খুন করা, এটাই তো বিএনপির চরিত্র, এটাই তারা পারে। তাদের নেতাও দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। এই অবস্থায় আমরা সরকার গঠন করেছি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা পেয়েছি। এই বিশ্বাসের মর্যাদায় আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নের কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি।’
বিএনপির আগুনসন্ত্রাস থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সজাগ থাকতে হবে, এই অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, যারা রেলগাড়িতে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে মারে, যারা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারে, যারা ট্রাকে আগুন দিয়ে মানুষ মারে, ওই অগ্নিসন্ত্রাসীদের থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর মিথ্যাচার এই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। তাদেরকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
‘তারা লিফলেট বিতরণ করেছে, মানুষ যেন ভোট কেন্দ্রে না যায়। তারা যত বেশি লিফলেট বিতরণ করবে, তত বেশি ভোট কেন্দ্রে মানুষ যাবে। এটা হলো বাস্তব কথা। কারণ, তাদের কথায় মানুষ সাড়া দেয়নি। মানুষের যে আমাদের প্রতি আস্থা-বিশ্বাসটা, সেটা ধরে রাখতে হবে। যারা এভাবে নির্বাচন বানচাল করতে চায়, তারা গণতান্ত্রিক পরিবেশই চায় না। যারা গণতন্ত্র চায় না, নির্বাচন চায় না, তারা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। তাদেরকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের কথা ছেড়ে দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’
যৌথসভায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।