বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগ এবং সোর্সিংয়ের জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) আয়োজিত ‘মেড ইন বাংলাদেশ উইক’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। দেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে আমি দেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকেও অনুরোধ করছি। আপনারা তাদের প্রযুক্তি, জ্ঞান আপনাদের শিল্প খাতে গ্রহণ করুন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণই আমাদের সাহসের উৎস। জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার এখন মাথাপিছু আয়। ক্রয়ক্ষমতাও এ দেশের মানুষের বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরী হচ্ছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘শুধু রপ্তানি করলেই চলবে না, নিজের দেশের ভেতরেও বাজার সৃষ্টি করতে হবে। করোনাকালে সরকার যতটা সম্ভব তৃণমূলে অর্থ বরাদ্দ ও সরবরাহ করেছে। এর ফলে মানুষের ভেতর হাহাকার আসেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পদধ্বনি শুনছি আমরা। যারা শ্রম দেয়, তারা আমার বাংলাদেশেরই মানুষ। তাদেরকে আমরা আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলতে চাই। কারণ, এখন বিজ্ঞানের কারণে প্রযুক্তির নতুন নতুন আবির্ভাবে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। তাই, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত করে দক্ষ মানবসম্পদ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং উদ্যোক্তাও সৃষ্টি করছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ৪র্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানে যে প্রভাব ফেলবে, সেজন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করা হয়েছে। আমাদের তৈরী পোশাক শিল্পে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যবস্থা নিতে হবে, সেজন্য আমরা প্রস্তুত। আমরা তৈরী করছি।’
‘মানুষের মাথায় আমাদের এই চিন্তাও ঢোকাতে হবে যে, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে হলে আমাদের দেশে-বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন পড়বে। তারা যাতে প্রযুক্তি জ্ঞানেও দক্ষ হয়, সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিনি তৈরী পোশাক রপ্তানিকারকদের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কাপড়ের মান বৃদ্ধি এবং শ্রমবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার রাজনীতিই হচ্ছে এ দেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের জন্য। তাদের কল্যাণই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আমাদের যে বিপুল শ্রমশক্তি রয়েছে তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং মেধা কাজে লাগানোরও ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী পুনরায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের সাড়ে ১৬ কোটির ওপরে মানুষ। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। কিন্তু, আমরা কারো কাছে ভিক্ষা করে চলতে চাই না। নিজের খাদ্য উৎপাদন নিজে করব। সেজন্য ফসলি জমি রক্ষা করা, যততত্র শিল্প গড়ে না তোলা এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ে তোলার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) হল অফ ফেমে ‘কেয়ার ফর ফ্যাশন’ থিম নিয়ে মেড ইন বাংলাদেশ উইক শুরু হয়েছে। ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত এটি চলবে।
‘মেড ইন বাংলাদেশ’ এর প্রচার করাই এই ইভেন্টের মূল উদ্দেশ্য। বিজিএমইএ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পোশাকের মার্কেট শেয়ার বাড়াতে চায়। সপ্তাহব্যাপী এই মেগা ইভেন্ট গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের অংশীদারদের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাকিলায় একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুটি কফি টেবিল বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন। পোশাক রপ্তানিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চারজন তৈরী পোশাক প্রস্তুতকারককে বিশেষ সম্মাননা দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের (আইএএইফ) সভাপতি সেম অলটান এবং বিজিএমইএ সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি বক্তৃতা করেন। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। দেশের পোশাক খাতের অগ্রগতি এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে পৃথক দুটি ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে আমি দেশের ব্যবসায়ীদেরকেও আহ্বান জানাবো যে, আপনারাও বিদেশি পার্টনার খুঁজে নেন।’
আমাদের দেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ রয়েছে, উল্লেখ করে সেই সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে, ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ের সাথে আমরা যুক্ত হচ্ছি। তাছাড়া, আমরা ওটারওয়েজ, এয়ারওয়েজ, রেলসহ সবকিছুতেই উন্নয়ন করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শুধু আমরা নই, সারা বিশ্বের মানুষ কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে করোনার ভয়াবহতায় সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতি, তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও আজ অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খাচ্ছে এবং নানা অসুবিধা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আমরা চাই, যুদ্ধ বন্ধ হোক।’