অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া রপ্তানিমুখি প্রতিষ্ঠান জাহীন নীটওয়্যার পরিদর্শন করে পরবর্তী কার্যক্রম বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, এমপি। এ বিষয়ে তিনি কারখানার মালিক, প্রত্যক্ষদর্শী, নিরাপত্তাকর্মী ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে আগুনের উৎস সনাক্তকরন ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণসহ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন এই মুহূর্তে কারখানাটি পুনারায় চালু করা ও সময়মত শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করাই মূখ্য বিষয়।
তবে যেহেতু জানুয়ারির শেষপ্রান্তে কারখানায় আগুন লেগেছে এবং রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত মালামাল পুড়ে গেছে, সেহেতু মালিকের পক্ষে শ্রমিকদের জানুয়ারি-ফেব্রæয়ারি মাসের বেতন দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এমতাবস্থায় উক্ত কারখানাতে যেন কোনো শ্রম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য তিনি শ্রম মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রিয় তহবিল থেকে জরুরি ভিত্তিতে অর্থ সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে কারখানাটি তার শ্রমিকদের জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসের বেতন সময়মত পরিশোধ করতে পারে।
বিকেএমইএ’র সভাপতি আরো বলেন, পরবর্তীতে অগ্নি দুর্ঘটনার কারণে ইস্যুরেন্স থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে প্রয়োজনে কেন্দ্রিয় তহবিলের প্রদত্ত টাকা সম্বনয় করা হবে। পাশাপাশি আকস্মিক এই দুর্ঘটনায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পনিকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন বিকেএমইএ সভাপতি। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটি যেনো শ্রম মন্ত্রণায়ের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় করতে পারে এবং ব্যাংক ও বীমা সংক্রান্ত কাজগুলো যেনো দ্রæত সময়ের মধ্যে সম্পাদন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তিনি বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে সার্বিক বিষয়ে তদ্ভাবধানের অনুরোধ জানান।
এ প্রসঙ্গে জাহিন নীটওয়্যারের মালিক এম জামাল উদ্দিন বলেন, বিপদ না আসলে, বন্ধু চেনা যায় না। আমার হতবিহ্বল অবস্থায় যখন আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না, তখন বিকেএমইএ সভাপতি আমার কারখানা পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স বিষয়ক কাজগুলো কিভাবে সম্পন্ন করতে হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট পরামর্শ দেন। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। যখনই বিকেএমইএ’র কোনো সদস্য কারখানা কোনো বিপদে পড়ে, তখনই তিনি সহযোগতিার হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁর এই নেতৃত্বগুণ সবসময় আমাদের চলার অগ্রযাত্রায় সহায়ক।
উক্ত কারখানা পরিদর্শনের সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহা পরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া, শিল্প পুলিশের এ এসপি জ্যোতির্ময় সাহাসহ আরো অনেকে। তিনি তাদের সকলের প্রতি অসাধারণ সহযোগিতার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট ৫ ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিভিয়েছেন, যে কারণে কারখানাটির ক্ষয় ক্ষতি ৫০ শতাংশ কম হয়েছে। এজন্য তিনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একই সাথে তিনি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রতিনিধি এবং স্থানীয় জনগণ অগ্নি নির্বাপনে সহযোগিতা করায় তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুরে বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত জাহীন নীটওয়্যারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কারখানার চারটি ভবন পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৬ টি ইউনিট সাড়ে ৫ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কারখানাটি পুরোপুরি কমপ্লায়েন্ট এবং সেখানে অগ্নি নির্বাপন যথাযথ ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু শুক্রবার ছুটির দিরে কারখানা বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলভাবে বেশি হয়।