নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ছেলে ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের (২৪) মৃত্যুর ঘটনায়, গ্রেপ্তার হওয়া তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখারের কাছে আইনজীবী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ তার জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক এ বিষয় আদেশের জন্য রোববার দিন ধার্য করেন। তারও আগে ৩১ নভেম্বর বুশরার আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বুশরার জামিনের আবেদন করলে আদালত শুনানির জন্য ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুতে তার বান্ধবী আমাতুল বুশরার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মামলার অভিযোগপত্রে বিষয়টি উল্লেখ করা হবে। কারাগারে বন্দি বুশরার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, এটি আদালতের বিষয়। আমরা আমাদের রিপোর্টে জানিয়ে দেবো তার সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি।
তারও আগে দীর্ঘ ৩৮ দিনের তদন্ত শেষে তদন্তকারী সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, নিখোঁজ হওয়ার আগে ফারদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একা একাই ঘুরে বেড়িয়েছেন। পারিপার্শ্বিক বিষয় দেখে মনে হয়েছে তিনি আত্মহত্যা করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সবকিছু মিলিয়েই আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি।
‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে ফারদিন নূর পরশের বাবার করা মামলায় গত ১০ নভেম্বর সকালে রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিনই তাকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করে রামপুরা থানা পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে, ১৬ নভেম্বর পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে বুশরাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মজিবুর রহমান। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ফারদিন। ওইদিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুদিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। ৮ নভেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ফারদিনের মরদেহ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেউলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় বুশরাসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে মামলা করা হয়। রামপুরা থানায় নিহত ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে এ মামলা করেন।