ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকার ছেলে ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪) রাজধানী ঢাকার কোনো এক এলাকায় খুন হতে পারেন বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। শনিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন ধারণার কথা জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, ফারদিনের মোবাইলের ডাটা এনালাইসিস ও বিভিন্ন জায়গায় সে যার সঙ্গে কথা বলেছে সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে ঢাকা শহরের কোনো এক জায়াগায় খুন হতে পারে সে। মোবাইলের লোকেশনে আমরা নারায়ণগঞ্জও পেয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে তদন্তের স্বার্থে কংক্রিট কিছু বলতে পারছি না।
প্রশঙ্গত, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ গত ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওইদিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুদিন পর গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।
এদিকে, লাশ উদ্ধারের পরই তার দুই বন্ধু বুশরা ও শীর্ষ সংশপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর গত বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রামপুরার বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিনই ফারদিন হত্যা মামলায় তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। বুশরা রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বুধবার (৯ নভেম্বর) দিনগত রাতে ফারদিনের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা করেন ফারদিনের বাবা সাংবাদিক নূর উদ্দিন রানা।
ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের পরদিন গত ৮ নভেম্বর ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ ফরহাদ বলেছিলেন, ময়নাতদন্তে আমরা দেখতে পেয়েছি, ফারদিনের মাথায় এবং বুকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে সেই আঘাত কোনো ধারালো অস্ত্রের নয়। আঘাতের চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি হত্যাকাণ্ড। পুলিশের চাহিদা ও অধিকতর তথ্যের জন্য তথ্য-উপাত্ত ও আলামত মহাখালী ভিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে ফারদিনকে কীভাবে খুন করা হয়েছে।
ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বিজনেস পত্রিকা ‘দ্যা রিভারাইন’ এর সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার নয়ামাটিতে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফারদিন ছিলেন সবার বড়। তার মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।
ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার পাঁচ দিন পার হলেও এখনো হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। রহস্য উন্মোচনে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, এলিট ফোর্স র্যাব, সিআইডিসহ একাধিক ইউনিট কাজ করছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকার শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ফারদিনের সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও কাজ করছে পুলিশ।
তবে এরই মধ্যে পুলিশ জানিয়েছে, ফারদিনের হত্যাকারী টেকনোলজিক্যালি খুবই স্মার্ট।