রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের কিছু ভূমিদস্যদের সাথে আতাত করে রেলওয়ের ভূমি আত্মসাতের প্রক্রিয়া চালিয়ে আসছে। ১নং রেলগেটের সাথে ৪৭ হাজার দুইশ বর্গফুট ভূমিটি দশবছর আগে রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্ক সংগঠনের নামে বরাদ্দ নিয়ে মার্কেট তৈরী করে আত্মসাতের উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে নাগরিক আন্দোলন শুরু হলে, সে আন্দোলন দমাতে টিআরসেল, গুলি সহ বিভিন্ন ঘটনা এখানে ঘটেছে। আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়ে এক সময় রেল কর্তৃপক্ষ মার্কেট নির্মাণের প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু আজকে আবার রেল কর্তৃপক্ষ সেই কল্যাণ ট্রাস্টের নামে মার্কেট তৈরী করে সে জায়গা আত্মসাতের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা দ্রুত এ উদ্যোগ বন্ধের ও সে অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির মানবন্ধনে শনিবার বেলা ১১টায় এই কথা বলেন সংগঠনের জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি।
তিনি বলেন, রেলওয়ে, রাজউক সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় সরকারের প্রয়োজনের কথা বলে দেশের মানুষের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু সে প্রয়োজনে তা ব্যবহার না হলে তা তারা স্থানীয় ভূমিদস্যূ ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে আঁতাত করে টেন্ডারের মাধ্যমে অথবা গোপনে বিক্রি করে দিচ্ছে। এইটি কোন ভাবে চলতে পারে না। জনগণের সম্পত্তি নাগরিক প্রয়োজনে ব্যবহার না করে এভাবে লুটপাট হতে দেয়া যায় না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, লুটপাটকারীরা লুটপাটের দিকেই তাকিয়ে আছে। আমাদের নারায়ণগঞ্জে লড়াই, সংগ্রামের ঐতিহ্য আছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনারা যদি নারায়ণগঞ্জের সম্পত্তি লুটপাট করতে আসেন, তা হলে এই নারায়ণগঞ্জের সব মানুষ মিলে তা পতিরোধ করবে।
তিনি বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করি, সবচেয়ে বেশি টেক্স দেই তবে নারায়ণগঞ্জে আমাদের একটা ভালো বিশ্ব বিদ্যলয় নেই, মেডিকেল কলেজ নাই। আজকে আমাদের হার্ট অ্যাটাক করলে বা বড় কোন অসুখ হলে আপনার আমার অসুস্থ দেহ ঐ ঢাকায় নিয়ে যেতে হয়। এর কারণ কী, কেনো নারায়ণগঞ্জের জমিতে মেডিকেল কলেজ হবে না।
তিনি আরও বলেন, আপনারা যারা নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্ব দেন, খেয়াল করেন না। আমাদের নারায়ণগঞ্জে কোনো পাবলিকে বিশ্ববিদ্যালয় নেই। বিভিন্ন কলেজ থেকে আমাদের সন্তানেরা পাশ করার পর ভর্তির জন্য লড়াই করতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাত্র কয়েকজন সুযোগ পায়। আমার সন্তানেরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
হাফিজুল ইসলাম বলেন, সারা বাংলাদেশের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জেলা। দ্বিতীয়ত নারায়ণগঞ্জের মানুষ সবচেয়ে বেশি টেক্স আয় করে এবং তা সরকারকে দেয়। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে দরিদ্র মনুষের বসবাস। আমরা সেই নারায়ণগঞ্জের মানুষ। আমাদের দেশের সরকারী অনেকগুলো জমি আছে। আইডাব্লিউটি, বিআইডাব্লিউটিসি, রোডস এন্ড হাইওয়ে, পিডাব্লিউডি, রেলওয়ে সহ সারা দেশে অনেক জায়গা আছে। ব্রিটিস আমল থেকে যা জনগণের সার্থে ব্যবরিত হয়ে আসছে। আরা এখানে কল্যাণ ট্রাস্ট, কল্যাণ ট্রাস্ট নয় নিজেদের পকেট ভারী করার ট্রাস্ট। যা নারায়ণগঞ্জের মানুষ করতে দেবে না।
সিপিবির এই নেতা বলেন, মরা যারা বিভিন্ন পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জের অর্থনীতিতে অবদান রাখি, আপনি যিনি একজন রিক্সা চালক, খুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমিক সবার অবদান আছে। আপনি ব্যবসা করেন বলেই টেক্স দেন , ট্রেড লাইসেন্স, ইনকাম টেক্স সবই দেন। এ কারনেই নারায়ণগঞ্জ সবচেয়ে ধনি জেলা এবং নারায়ণগঞ্জ সবচেয়ে বেশি টেক্স দেয়। আর আমাদের সেই নারায়ণগঞ্জের জমি কয়েক জন ভূমিদস্যু দখল করতে চায়, লুটপাটকারীরা লুটপাট করতে চায়। আমরা স্পষ্ট ভাষায় ভলতে চাই আপনারা যদি নারয়ণগঞ্জের সম্পদ লুটপাট করতে আসেন, আপনাদেরকে নারায়ণগঞ্জের মানুষ প্রতিরোধ করবে। নারায়ণগঞ্জের সম্পদ নারায়ণগঞ্জের মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে। ওই লুটপাটকারীদের আপনার আমার সম্পদ দিতে দেয়া হবে না।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ সভাপতি সানোয়ার তালুকদার, বাসদ জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, গণসংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সংগঠক অঞ্জন দাস, ন্যাপ মহানগরের সহ সভাপতি গবিন্দ সাহা, উক্ত এলাকার মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দে প্রমূখ।