তীব্র স্রোতের কারণে আবারও পদ্মা নদীতে ধসে পড়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকার পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষা বাঁধের প্রায় ১১০ মিটার। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় এ ভাঙন দেখা দেয়। এতে অন্তত ৩০টি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
এদিকে ভাঙন আতঙ্কে বসতঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ও জিওটিউব ডাম্পিং অব্যাহত রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে প্রবল স্রোত ও বৃষ্টির কারণে ডাম্পিংয়ের কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তারা।
স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, একদিনের ভাঙনে জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকার রিংকু মাদবর, তাজুল মাদবর, রানা মাদবর, ইমরান মাদবরের বসতঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়া নদীর পাড়ে ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই সরিয়ে নিয়েছেন বসতবাড়ি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে জাজিরা মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। বাঁধটি তৈরি করতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। কয়েক দফায় ভাঙনে এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষা বাঁধের ২ কিলোমিটার অংশের প্রায় ৭৫০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে ভাঙন ঠেকাতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। তবে স্রোত বাড়ায় নদীভাঙন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ভুক্তভোগী মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভোররাতে বিকট শব্দ শুনে নদীর পাড়ে এসে দেখি নদীভাঙন শুরু হয়েছে। দেখতে না দেখতে চোখের সামনেই আমার দুটি বসতঘর নদীগর্ভে চলে যায়। যদি কোনোভাবে ভাঙন ঠেকানো না যায়, তাহলে বাকি সবকিছুই চলে যায়। আমরা এই এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।’
আরেক ভুক্তভোগী শাহীন মাদবর বলেন, ‘নদী ভাঙনে আমার একটি বসতঘর ও কাচারি ঘর নদীতে চলে গেছে। এখন কোথায় থাকবো বুঝতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা চাই।’
স্থানীয় আব্দুল কাদের মোল্লার বলেন, ‘খবর শুনে আমি পদ্মার পাড়ে যাই। গিয়ে দেখি মুহুর্তের মধ্যেই ২টি বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তারেক হাসান বলেন, ‘ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ও জিওটিউব ডাম্পিং শুরু করেছি। স্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকাতে আগামী বর্ষার আগেই বাঁধের কাজ শুরু হবে।’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, ‘আমরা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানে যে পরিবারগুলো ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতা করবো। এর আগেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতা করা হয়েছিল। যারা জমি, বসতঘরসহ সব হারিয়েছেন তাদের জন্য ঘর ও জমি দেওয়া যায় কি না, তার চিন্তা করা হচ্ছে।’