এক বছর আগে আজকের এই দিনে পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হয়। এই এক বছরে পাল্টে গেছে শরীয়তপুরের চিত্র। নতুন নতুন পরিকল্পনা আর কল-কারখানা নির্মাণের প্রতিযোগিতায় মুখর এই জেলা। প্রতিযোগিতার দৌড়ে আশপাশের জেলার চেয়ে একধাপ এগিয়ে শরীয়তপুরের মানুষ। পদ্মা সেতু ঘিরে নির্মাণ হচ্ছে তৈরি পোশাক কারখানা, মিল-ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে শরীয়তপুরে সরকারিভাবে নির্মিত হচ্ছে শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী। এই তাঁত পল্লীকে ঘিরে আশপাশে গড়ে উঠবে আরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে জেলায় কয়েকশ ছোট-বড় গার্মেন্টস, হোটেল-মোটেল, কল-কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জাজিরা উপজেলার নাওডোবার ভূঁইয়া অটোব্লক ফ্যাক্টরি, কাজীর হাটের শিকদার অটোব্লক ফ্যাক্টরি, শিকদার হিমাগার, শিকদার হ্যাচারি, রায়ের কান্দির মোল্লা হলো ব্লক, গোসাইরহাটের কোদালপুর চরাঞ্চলের মিনা ফ্যাশন হাউজ, ইসমাইল হাওলাদার পাড়ার মিরহা অ্যান্ড নাবা ফ্যাশন, নড়িয়ার হাজকা লিমিটেডসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অগণিত নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
নির্মাণাধীন এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চরাঞ্চলের মিরহা অ্যান্ড নাবা ফ্যাশন উৎপাদন শুরু করেছে গত মার্চ থেকে। চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
বিনিয়োগকারীরা শরীয়তপুরে বিনিয়োগ করায় সড়কের পাশের জমি থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম ও চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছে কলকারখানা। স্থানীয় বেকার যুবকদের হচ্ছে কর্মসংস্থান। পদ্মা সেতুর কারণে শুধু যাতায়াত নয়, বরং ব্যবসায় বাণিজ্যেও খুলে দিয়েছে নতুন স্বপ্নের দুয়ার।
কাজীর হাটের বাসিন্দা ইউসুফ মিয়া বলেন, শরীয়তপুর ও বাইরের জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা জমি কিনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় জমির দাম চার থেকে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেভাবে প্রতিষ্ঠান সংখ্যা বাড়ছে তাতে দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।
ভূঁইয়া অটো ব্লকের মালিক এস্কান্দার আলী ভূঁইয়া বলেন, আমি অনেক বছর ধরে বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখন থেকে আমার ব্যবসার একটা বড় অংশ শরীয়তপুরে গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করব। এতে জেলার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। স্থানীয় ক্ষুদে ব্যবসায়ীরাও অল্প পুঁজিতে ভালো ব্যবসা করতে পারবেন।
মিরহা অ্যান্ড নাবা ফ্যাশনের কর্মী আকলিমা বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কাজ পেয়েছি। এখন আর পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয় না। বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করেই কাজ করতে পারছি। বেতন যা পাই, তা দিয়ে সংসার খরচ চলে যায়।
শিল্প উদ্যোক্তা ও জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী শিকদার বলেন, আমি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। ঢাকা থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে শরীয়তপুরে নিয়ে আসব। আমার প্রতিষ্ঠানে আমার গ্রামের ছেলে-মেয়ে কাজ করবে। এরচেয়ে আনন্দ আর কিছু নেই।
মিরহা অ্যান্ড নাবা ফ্যাশনের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, পদ্মা সেতুর কার্যক্রম শুরুর পর থেকে আমি পরিকল্পনা করেছি শরীয়তপুরে কিছু একটা করব। সেতু উদ্বোধনের আগে থেকেই আমার প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। এরপর পুরো কাজ সম্পন্ন করে উৎপাদন শুরু করেছি। আমার এখানে প্রায় ১০০ কর্মী বাড়িতে থেকেই কাজ করতে পারছেন। সামনের দিনে আরও বিনিয়োগ করার ইচ্ছে রয়েছে।