পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আরিফুর রহমান (৩০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৯ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের পর জেলা প্রশাসন মাইকিং করে সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপক ছিলেন।
স্বজনদের দাবি, সংঘর্ষের সময় আরিফুর নামাজ পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন।
পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধুরী আরিফুরের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
স্বজনরা জানান, শুক্রবার দুপুরে শহরের মসজিদপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের সময় আরিফুরের মাথায় গুলি লাগে। তাকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থান্তান্তর করা হয়। রংপুরে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
এদিন প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পঞ্চগড় শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুরো এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভকারীরা শহরে অবস্থিত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও ট্রাফিক অফিসে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জুমার নামাজের পর স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদের শত শত মুসল্লি শেরেবাংলা নগর পার্ক এলাকায় অবস্থান নিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা এসে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কে অবস্থান নেন এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন।
একপর্যায়ে তাদের অবস্থান বিক্ষোভে রূপ নেয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে। বিক্ষুদ্ধ লোকজনও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় সংঘর্ষে একজন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ৫০ ব্যক্তি আহত হন।
এর আগে বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে সাড়ে ৪ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে সর্বস্তরের জনতা।
প্রতিবছরের মতো এবারও পঞ্চগড়ের ফুলতলা এলাকায় আহমদনগরে ৩ দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসার আয়োজন করে আহমদিয়া সম্প্রদায়। স্থানীয় মুসল্লিরা জলসা প্রহিতের চেষ্টা করলে এ সংর্ষের ঘটনা ঘটে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ করার জন্য তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। তারা জলসা বন্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়া আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কেউ মারা যাওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।