‘নারায়ণগঞ্জ একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। এই শহরে অনেক আগে থেকেই ঐতিহ্য ছিল। বাংলার রাজধানী ছিল সোনারগাঁয়ে। পাটের জন্য নারায়ণগঞ্জ ছিল বিখ্যাত। সবকিছুতে, খেলাধুলায় নারায়ণগঞ্জ এগিয়ে ছিল। বিগত ৩০ থেকে ৪০ বছর যাবত আমাদের পরিচয়, আমরা সন্ত্রাস করি। আমরা এই পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না। আমরা চাই রূপগঞ্জের জামদানীকে সামনে নিয়ে আসতে, মসলিন কাপড়ের জন্য বিখ্যাত, গার্মেন্টসের জন্য বিখ্যাত, পার্টের নগরীর জন্য বিখ্যাত, বিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য বিখ্যাত, ৬৬ সালের ৬ দফার জন্য বিখ্যাত, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে। আমরা আমাদের নিজেস্বতা দিয়ে বিখ্যাত। আমার কোন রাজার রাজস্ব করতে চাই না।’
শনিবার (৭ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের আলী আহমদ চুনকা পাঠাগারে ‘বিষের বাঁশী’র ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
আইভী বলেন, আমরা আসলে প্রজা। আমরা রাজার রাজত্ব মেনে নিচ্ছি। নিরিহ প্রজা হয়ে সেই রাজত্বে আছি। মাঝে মাঝে মাথাচারা দিয়ে উঠে দুই-একটা কথা বলার চেষ্টা করি। ছোট ছোট দু:খ কষ্ট বিশাল আকাড় হয়ে গেলে প্রতিবাদ স্বরূপ অনেক কিছু বলে ফেলি। তাছাড়া আপনাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষ চলে। ভবিষ্যতে এমনও হতে পারে নারায়ণগঞ্জের রাজধানী কুমিল্লা। নারায়ণগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে ওসমান নগরী।
তিনি আরও বলেন, ‘এই যে এত অত্যাচার, অবিচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আবার রুখে দাঁড়িয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী। বিভিন্ন ভাবে, কারণ দীর্দিন যাবত একজন রাজা অত্যাচারী হয়ে উঠে, তখন প্রজারা অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠে। সেই শক্তিশালী প্রজা এতোমধ্যেই দেখেছেন নারায়ণগঞ্জে। আজকেও দু‘একজন কথা বলেছে।
মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, ‘২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হয়তো সকলেরই মনে আছে। সেদিন অনেকেই আহত হয়েছে, মারা যেতে নিয়েছিলাম। গুলি করা হয়েছিল। আমার কিছু কতিপয় কর্মী মানব ডাল তৈরি করে বাঁচিয়ে ছিল। পুলিশ রিপোর্ট লেখেছে, অস্ত্রধারী শাহ্ নিজামের অস্ত্র দেখেছে। কিন্তু আপতত উনাকে পাওয়া গেলনা বিধায় উনার স্বাক্ষ নেওয়া গেল না বিধায় উনাকে অস্ত্র মামলা দেখে খালাস দেওয়া হলো। এই রির্পোট দিয়েছে গত ৩ দিন আগে। আমরা আদালতে নারাজি দিচ্ছি। আপনারা দেখেছেন পুলিশ সেই মামলা নেয় নাই। ২ বছর ঘরে হাইকোর্ট থেকে আদেশ এনে মামলা করেছি।’
মেয়র বলেন, অনেকে অনেক বড় কথা বলে। এই সামলাও ওই সামলাও। নির্বাচনের বছর চলে আসছে, আর এক বছর আছে। তাই অনেকের এখন টনক নড়েছে। এই বাহিনী চাই না, খান বাহিনী চাই না। হুন্ডার বাহিনী চাই না। ভাই ৪ বছর কি করলেন। ৩০ বছর ধরে দেখছি সবাইকে জিম্মি করে রেখেছেন। নির্বাচনের বছর এসেছে হঠাৎ করে এখন কথা গুলো বললে মানুষ খুব ভোট দিয়ে দিবে ভাবছেন।’
মেয়র আইভী বলেন, ‘আমরা কারো কাছ থেকে কোন কিছু চাই না। আমরা চাই প্রশাসন তাঁর নিজ দায়িত্বটা পালন করুন। গণপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকারের একজন কর্মকর্তা কর্মচারী হিসেবে নাগরীকদের প্রতি যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্বটা পালন করুক। আমরা মনে হয় না, এ কথাটা সত্য না। যে টেবিলে বসে সমাধান করতে হবে। এতবার বলা হচ্ছে একটি শহরের ফুটপাত পরিস্কার রাখা যাবে না, এটা কেমন কথা। এই শহর থেকে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা লোকজন নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের এমন কোন কর্মচারী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা নেই, নারায়ণগঞ্জ থেকে শহর থেকে টাকা পয়সা নেয় না। এটা ওপেন সেক্রিট। তাহলে কাজ করবেন না কেন। তাহলে কাজ করবেন না কেন।
মেয়র আইভী বলেন, কেন নারায়ণগঞ্জের মানুষ এসপি হারুনকে সিংহাম উপাধি দিয়েছে। কারণ সাধারণ মানুষের হয়ে এসপি হারুন কাজ করেছে। তাই উনি সারাদেশে আইজিও যদি হয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে এসপি হারুন হয়েই থাকবে। উনি পুলিশের গতানুগতিক ধারা ভেঙ্গে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জে। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মী হিসেবে, একজন চাকুরিজীবী হিসেবে, সকল রেকর্ড ভেঙ্গে বহু মানুষের উপকার করেছেন। উনি দলের লোক দেখে নাই। দীর্ঘদিন যাবত বাড়ি ঘর দখলে রেখেছে, উনি বাড়ি ঘর দখল মুক্ত করে দিয়েছেন। যে কাজ গুলো আমরা করে থাকি সাধারণত। যে কাজ গুলো এমপি সাহেবদের করার কথা, মেয়রের কথা। এসপি হারুনের সময়তো ফুটপাতে হকার বসে নাই। তখন পুলিশের সকলে কেন নারায়ণগঞ্জে কাজ করেছে, প্রত্যেকটা থানার ওসিরা কেন কাজ করেছে। এখন কেন করতে পারে না। তখনও এই এমপি সাহেবরাইতো ছিল। এখন ভয় পাচ্ছেন কেন। এটা আসলে কোন ভয় না, আমি মনে করি সমঝোতা। আদান প্রদান চলে। আদান প্রদান চলে বলেই আজকে শহর থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজী হচ্ছে। এই টাকা যায় কোথায়। সাংবাদিক ভাইয়েরা নীরব হয়ে যান, একবার-দুইবার লেখে আর লেখে না। আপনারা অপেক্ষায় থাকেন, কখন আইভী একটা কথা বলবে। কখন এড. মাসুম একটা কথা বলবে। ওটার হেডিং দিয়ে ২-৩দিন লেখবেন। মাঝে মাঝে লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ গুলো বাঁদদেন নিজের শহরকে ভালো রাখতে হয় লিখেন।
বিষের বাঁশীর সম্পাদক সুভাস সাহার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার (বর্তমানে ডিআইজি) হারুন অর রশিদ, খবেরর পাতার সম্পাদক ও জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম প্রমুখ।