আসসালা মু-আলাইকুম. সম্মানিত ৬নং ওয়ার্ডবাসী।
আমি আলহাজ্ব মতিউর রহমান মতি। প্যানেল মেয়র-২ ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। আহবায়ক সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগ। সদস্য নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগ। আমার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে মশিউর রহমান বাবু একটি বেসরকারী ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় এবং মেঝ মেয়ে সুমাইয়া রহমান একা বিবিএ অধ্যয়নরত। ছোট মেয়ে সামিয়া রহমান মিথিলা ‘এ’ লেভেলে পড়ছে। আর স্ত্রী রোকেয়া রহমান গৃহিনী। আপনারা জানে আমি এবারও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছি। আমার মার্কা ঠেলাগাড়ি। যেই মার্কায় আপনাদের ভালোবাসার ভোট দিয়ে গত নির্বাচনে আমাকে বিজয়ী করেছিলেন।
প্রিয় ওয়ার্ডবাসী,
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের আদর্শকে লালন করে আমি আমার রাজনৈতিক জীবন গড়ে তুলেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশনকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার হৃদয়ে বাংলাদেশ, চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, আদর্শে বঙ্গবন্ধু, রাজনৈতিক অনুসরনে জননেত্রী শেখ হাসিনা।
নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের রূপকার এবং নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের কান্ডারী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ কে এম শামীম ওসমানের মতো এমন একজন নেতার কর্মী হতে পেরে আমার অহংকার হয়, আমি গর্ব করি।
২০০৪ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক হওয়ার আগে আমি শ্রমিকলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সম্মানিত ভোটারদের ভালোবাসায় ৬নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হই। এবং বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্যানেল মেয়র-২ নির্বাচিত হয়েছি।
ওয়ার্ডবাসীর জন্য সিটি করপোরেশন ও নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ওয়ার্ডের মানুষের জন্য সুপেয় পানির সুবিধার্থে এমপি শামীম ওসমানের দেয়া ৮টি এবং নিজ অর্থায়নে ১৩টি গভীর নলকূপ (সামারসিবল পাম্প) বসিয়েছি। শিশুদের খেলাধুলার জন্য এসওরোড বটতলা এলাকায় রেলের জমি লিজ নিয়ে খেলাধুলার মাঠ করে দিয়েছি। ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, যৌতুকপ্রথা, ইভটিজিং, কিশোরগ্যাং প্রতিরোধে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় মাদক প্রতিরোধে মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আদমজী বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দাদের জন্য রাস্তা, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দিয়েছি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য স্কুল ও মাদরাসা, মসজিদের সহায়তা দিচ্ছি।
ওয়ার্ডের গরীব ও দু:স্থদের ঘর-বাড়ি নির্মানে ঢেউটিন ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। অসহায়দের বিয়েতে আর্থিক সহায়তা এবং অস্বচ্ছল পরিবার ও অসুস্থ্য রোগীদের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছি। ঈদ উল ফিতরে গরীব ও দু:স্থদের মাঝে কাপড়, নগদ অর্থ ও ঈদ সামগ্রী এবং ঈদুল আযহায় গরীব দু:স্থ ছাড়াও এলাকাবাসীর মধ্যে কুরবানীর মাংস বিতরণ করি।
এছাড়া ওয়ার্ড ও ওয়ার্ডের বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ প্রদান করেছি।
৫০০ শত বয়স্ক মানুষকে কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। কোরআন শিখতে আসা প্রত্যেককে নিয়মিত টিফিন ও জনপ্রতি মাসিক ১ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়েছে। নূরে মদিনা মোহেব্বীয়া বাদশা মেম্বার দ্বিনীয়া মাদরাসা ও কুরআন শিক্ষার জন্য হিফজ বিভাগ করেছি। মাদরাসায় গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ছারছীনা দরবারকে মাদরাসা নির্মানের জন্য জায়গা দিয়েছি। এবং বাবার নামে সুমিলপাড়া বাদশা মেম্বার জামে মসজিদের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মুনলাইট চৌড়াস্তার মোড়ে নিজ অর্থায়নে পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মাণ এবং আদমজী বায়তুন নূর হাফেজিয়া কওমি মাদরাসার জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে বালু ভরাট করে দিয়েছি। এসওরোড কবরস্থানের উন্নয়ন কাজে আর্থিক সহায়তা করেছি।
সুমিলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরশিমুল পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নিজ অর্থায়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য এবং সুমিলপাড়া যুবলীগ অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধুর মুড়্যাল নির্মান করেছি। ৩০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এবং ৬নং ওয়ার্ডে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জন্য অফিস নির্মান করে দিয়েছি। ৮নং ওয়ার্ডে মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস নির্মানে অর্ধলক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা এবং ৯নং ওয়ার্ডের জালকুড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস নির্মানে ঢেউটিন সরবরাহ করেছি।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে সাড়ে ৩ হাজার ফলজ, বনজ, ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেছি। এছাড়াও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ফ্রি চিকিৎসা, বিনামূল্যে রক্তদান, ১৯টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক বই বিতরণ করেছি।
২০১৬ সালে জামালপুরের ইসলামপুরে বন্যার্ত দেড় হাজার মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। ২০০৪ সালে বন্যায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমকে নিয়ে সফুরা খাতুন বিদ্যালয় মাঠে ১০০ বস্তা চাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করেছি।
করোনা পরিস্থিতিতেও সাধ্যমত কর্মহীন, অসহায়, দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। বাদ যায়নি লজ্জায় যারা হাত বাড়াতে পারে না তারাও। রাতের আধারে তাদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য উপহার পৌঁছে দিয়েছি। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে সরকারী ছাড়াও নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৭০০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী এবং ১০ টন সবজি বিতরণ করেছি। এছাড়া ওয়ার্ডের সকল বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও স্টাফ এবং মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিনদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। অসংখ্য হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন, মাস্ক বিতরণ করেছি। এছাড়া করোনায় নিহতদের লাশ দাফনের জন্য টিম গঠন করে দিয়েছি।
বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হতে পুলিশ আমাকে তুলে নিয়ে মিথ্যে মামলা রুজু করে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে প্রচন্ড রকমের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে অনেক নির্যাতন সহ্য করে দলীয় প্রতিটি প্রোগামে উপস্থিত থেকেছি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময়ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম।
৯০ এর দশকে এশিয়ার বৃহত্তম জুট মিল ঘিরে (২০০২ সালের ৩০ জুন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার চিরতরে বন্ধ করে দেয় মিলটি) শ্রমিক আন্দোলন ও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে আমাকে ১৭টি মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে মামলাগুলো থেকে আমি খালাস পেয়েছি। বর্তমানে আমার বিরুদ্ধে একটি মারামারির মামলা আছে। যা আমার প্রতিপক্ষ মিথ্যাভাবে আমাকে ওই মামলায় জড়িয়েছে। আশাকরি এই মামলাটিও বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে শেষ হবে। কিন্তু দু:খজনকভাবে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে কিছু দিন পর পর স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে লিখে আমার বিরুদ্ধে ২২টি মামলা আছে। আমি বিনয়ের সহিত বলতে চাই কি প্রমান আছে তাদের কাছে যে আমার বিরুদ্ধে ২২টি মামলা?
এছাড়া ২০০৭ সালে মিথ্যা বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল তাদের ওয়েব সাইটে সন্ত্রাসী তালিকায় আমার নাম প্রকাশ করে। কিন্তু তারাই আবার আমার নাম সরিয়ে নেয় তাদের ওয়েব সাইট থেকে। এক যুগ আগের ইন্টারপোলের সেই বিষয়টি নিয়েও সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। যা অত্যন্ত দু:খজনক।
জীবনে একটা সিগারেট মুখে দেই নাই। একাধিকবার হজ্ব করেছি। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ি। এলাকায় মসজিদ মাদ্রাসা করেছি। এতিম খানা চালাচ্ছি। নিজ খরচে অনেককে হজ্ব করিয়ে এনেছি। অসহায়, দরিদ্র মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।
অন্য আট-দশজন মানুষের মতো সকল নিয়মকানুন মেনে ও আয়কর পরিশোধ করে ব্যবসা করছি। কিন্তু আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্তিত হয়ে এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র ও কুৎসা রটানো অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি বিশ্বাস করি মহান আল্লাহর রহমত এবং মানুষের ভালোবাসায় তাদের সেই ষড়যন্ত্র কোন কাজে আসবে না।
প্রিয় ওয়ার্ডবাসী,
আপনারা কোন গুজবে কান দিবেন না। নির্বাচন আসলে ভোটের আগে নানা রকমের গুজব ছড়ানো হবে। নানাভাবে আপনাদের প্রভাবিত করতে পারে। আপনারা সচেতন ও বিকেবান মানুষ। তাই আপনাদের কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং মিথ্যা প্ররোচণা দিয়ে প্রভাবিত করতে পারবে না বলে আমি মনে করি।
গত ৫ বছর কাউন্সিলর হিসেবে ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার কথা ও আচরণে যদি কেউ কস্ট পেয়ে থাকেন আমি সেই জন্য ক্ষমা প্রার্থী। ভুল মানুষেরই হয়। আমারও ভুল হয়েছে। আগামী দিনে একটি সুন্দর ও আধুনিক ওয়ার্ড হিসেবে ৬নং ওয়ার্ডটিকে আপনাদের সাথে নিয়ে গড়ে তুলতে চাই। আপনাদের ভালোবাসা ও দোয়া আমার উপর ছিল, আছে এবং আগামীতেও থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
৬নং ওয়ার্ডবাসীর প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস সব সময় আছে। আমি তো আপনাদেরই ছেলে। কারো ভাই। কারো বন্ধু। কারো ভাতিজা। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবারও আমাকে ঠেলাগাড়ি’ মার্কায় আপনাদের মূলবান ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিবেন। যতদিন বেঁচে আছি মানুষের জন্য কাজ করবো এবং মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। ইনশাআল্লাহ।